ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি ও কোরামবাজির খপ্পরে
গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ডের উপলব্দি
- আপডেট সময় : ০৬:০৯:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
- / 381

ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি ও কোরামবাজির ফাঁদে: মাহফুজ আলম
সবচেয়ে নিবেদিত ছাত্রকর্মীরা আজ ক্রেডিট, দলবাজি এবং কোরামবাজির জালে আটকে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্য সংগঠক (মাস্টারমাইন্ড) হিসেবে পরিচিত এই ছাত্রনেতা নয় মাস পর বিষয়টি নিয়ে এমন উপলব্ধি প্রকাশ করলেন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শীর্ষক একটি পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকলেও, ডিমোরালাইজড হয়ে পড়েছে পুরো ছাত্র-জনতা। তারা অভ্যুত্থানের পক্ষে একটি সংগঠিত কাঠামো কিংবা নতুন সিভিল সোসাইটি গড়ে তুলতে পারেনি। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং জোট রাজনীতিতে ছাত্র-জনতার কোনো অংশীদারিত্ব নেই।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ক্ষমতার কেন্দ্রে এখন একাধিক বলয়। কাজের দায়িত্ব সরকারের, অথচ বাস্তবায়ন করে ক্ষমতার অন্যান্য কেন্দ্র। জোড়াতালি দিয়ে গণতন্ত্রের রূপান্তর সম্ভব নয়, যেমনটি সম্ভব নয় নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা।’
রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের পর রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগী ভূমিকা পালন করছে না। তবে প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও পুলিশে তাদের প্রভাব এখনো রয়েছে। এস্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরে যাওয়ার এবং ছাত্র নেতৃত্বকে বাদ দেওয়ার নীতিতে অটল।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় তিন ডজন ব্যক্তির মধ্যে মাত্র দুজন ছাত্র। রাষ্ট্রপতি অপসারণের পর থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। আমরা দুজন যতটা সম্ভব ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু কার্যকর প্রভাব রাখতে হলে সরকারে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব আরও জোরালো হওয়া দরকার।’
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তারা এখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই বিবেচিত হচ্ছে। এই কারণেই নাগরিক কমিটি দীর্ঘমেয়াদে অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ শক্তি হতে পারত। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম সারাদেশে সংগঠিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা এখন বিভক্ত এবং দোদুল্যমান।’
আওয়ামী লীগের আধিপত্যের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র আপসকামী হয়ে পড়েছে। মিডিয়া ও ব্যবসা খাতে আওয়ামী লীগের আধিপত্য এখনো অক্ষুণ্ন। তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ও হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি। পুরোনো দ্বিদলীয় রাজনৈতিক চুক্তি এখনো বহাল আছে। বিচার বিভাগ এখনো সেই চক্রেই আবদ্ধ।’
জুলাই বিষয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘বাম ও ডান মতাদর্শের সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব জুলাইকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং শাহবাগ-শাপলাকে স্থায়ী করে তুলেছে। ডানপন্থিরা আবেগতাড়িত হয়ে ভুল রাজনীতি করেছেন, আর বামপন্থিরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি সন্দিহান থেকে অভ্যুত্থানের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
শহীদ ও আহতদের প্রসঙ্গে মাহফুজ বলেন, ‘সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই এই বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন গ্রামাঞ্চলে বিস্তার ঘটাতে পারেনি। এর পেছনে এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থান্বেষী আচরণ এবং ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব দায়ী।’
শেষে তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রদের ব্যর্থতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে তাদের বাদ দিয়ে দ্বিদলীয় কাঠামোয় ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এস্টাবলিশমেন্ট। ছাত্রদের পূর্ণ অসহযোগিতার ফলে তাদের ইতোমধ্যে পেছনে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’
সমাধান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের যৌক্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। এর পূর্বশর্ত হলো—ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা, এবং পুরনো বন্দোবস্তের বাহকদের অকার্যকর করে তোলা।’


















