ঢাকা ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা

ডিসেম্বরের মধ্যে ৩ টার্মিনালের দায়িত্বে বিদেশি অপারেটর

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:৫২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • / 107

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জের

পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে

চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

তিনি জানান, লালদিয়ার চর টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হবে ৩০ বছরের জন্য, আর অন্য দুই টার্মিনালের মেয়াদ হবে ২৫ বছর।

রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)

আয়োজিত ‘ইনভেস্টমেন্ট পোটেনশিয়ালস ইন দ্য ওশান গোয়িং শিপিং ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

সচিব ইউসুফ বলেন, “আমরা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ছাড় দেব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ের দরকষাকষি চলছে। আশা করছি,

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটা চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে।”

এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অক্টোবর মাসের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছিল।

চুক্তি বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, “এটা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, যেখানে অনেক ধরনের নেগোসিয়েশন থাকে।

আলোচনা চলছে, আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই হয়ে যাবে।”

প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ভারত, মিয়ানমারসহ অনেক দেশেই বিদেশি অপারেটর বন্দর পরিচালনা করে।

চট্টগ্রাম বন্দরেও এটা বড় কোনো সমস্যা হবে না। শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে সমস্যা না হলে, এখানে হবে কেন?”

তিনি আরও বলেন, “একটি জাহাজ একদিন বন্দরে অপেক্ষা করলে ওয়েটিং ফি দিতে হয় ১৫ হাজার ডলার।

এখন পণ্য খালাসে ৩–৪ দিন লাগে। সময় অর্ধেকে নামাতে পারলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমে যাবে, অযথা ওয়েটিং বিল দিতে হবে না।”

বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি এলে সেবা ফি বেড়ে যেতে পারে—ব্যবসায়ীদের এমন আশঙ্কার বিষয়ে

নৌসচিব বলেন, “১৯৮০ সাল থেকে একই শুল্কে বন্দর পরিচালনা হচ্ছে। এত বছরে সেবা ফি বাড়ানো হয়নি।

সরকারকেও চলতে হয়, তাই ফি যৌক্তিকভাবে বাড়াতে হবে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রতি ৫ বছর পর পর মাশুল বাড়ানো হতো।”

তিনি মনে করেন, “সেবা ফি সামান্য বাড়লেও খরচ কমে যাবে, কারণ বন্দরে অপেক্ষার সময় কমে আসবে।

পাশাপাশি সড়ক, রেল ও নদীপথ মিলিয়ে একটি মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সময় এসেছে।”

চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানার সংকট প্রসঙ্গে সচিব বলেন, “বর্তমানে ছয়টি স্ক্যানারের মধ্যে বেশিরভাগ সময় ৩–৪টি অচল থাকে।

সব গেটে স্ক্যানার থাকলেও সচল না থাকায় জট বাড়ে। বিশ্বের কোথাও কনটেইনার খুলে পণ্য দেওয়া হয় না—আমরাই ব্যতিক্রম।

আমরা চাই, স্ক্যান করে সমস্যা পেলে সেটি অন্য ইয়ার্ডে নিয়ে খোলা হবে, দ্রুততার সঙ্গে।”

তিনি আরও জানান, “স্ক্যানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।

বিদেশি প্রতিষ্ঠান এলে এসব সমস্যা থাকবে না। তারা আধুনিকভাবে স্ক্যান করবে, এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত বাড়বে, রপ্তানিকারকদের

লিড টাইমও কমে যাবে। পণ্য দ্রুত খালাস হলে বন্দরে জাহাজ ভেড়ার সংখ্যা বাড়বে, শুল্কও বৃদ্ধি পাবে।

বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনেও তারা বিনিয়োগ করবে।”

সমুদ্রগামী জাহাজে জ্বালানি ব্যবহারে ২০৩০ সালের পর নতুন আন্তর্জাতিক নির্দেশনা আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে ব্যবহৃত

তেলের বদলে অ্যামোনিয়া বা বায়োফুয়েল ব্যবহার করতে হবে, নইলে আয় থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।”

এ সময় বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, “একসময় বাংলাদেশের

সমুদ্রগামী জাহাজ ছিল মাত্র ৩৬টি, এখন সরকারের সহযোগিতায় তা বেড়ে ১০২টিতে পৌঁছেছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত

জাহাজ ক্রয় ও পরিচালনায় শুল্ক অব্যাহতি ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা বাতিল করেছে। সুবিধা অব্যাহত রাখা জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি পণ্য পরিবহনে সরকারি জাহাজ ব্যবহারের শর্ত তুলে দিলে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ

বাড়বে, মেরিন একাডেমির শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। তারা বছরে ১.৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।”

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম এনসিটি টার্মিনাল পরিচালনা করছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

গত জুলাইয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেয়াদ না বাড়িয়ে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের উদ্যোগ নেয়—যেখানে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি

ওয়ার্ল্ডের নাম উঠে আসে।
এখন ছয় মাসের জন্য টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড, যতদিন না

বিদেশি অপারেটর দায়িত্ব নেয়।

বিদেশি অপারেটর আসলে বন্দরের সক্ষমতা কতটা বাড়বে—এ বিষয়ে সচিব ইউসুফ বলেন, “২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে

সরকার একটি সমীক্ষা করায়। ছয় মাস আগে রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা গেছে—বিদেশি অপারেটর এলে বন্দরের সক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “নৌপরিবহন খাতে বহু সিন্ডিকেট আছে। আগে শুনতাম শুধু পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট, এখন এখানেও আছে।

শ্রমিক নেতারা শতকোটি টাকার মালিক, তাদেরও নিজস্ব জাহাজ আছে।”

সেমিনারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার বলেন, “পুরোনো জাহাজ ভাঙার শিল্পে

বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে। এখন জাহাজ নির্মাণেও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। বর্তমানে ২০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ রয়েছে।

ব্যাংকের সহযোগিতা ও রপ্তানি নীতিতে সুবিধা দিলে খাতটি দ্রুত বাড়বে। তৈরি পোশাক খাতের মতো জাহাজ নির্মাণের কাঁচামাল

আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চালু করা উচিত।”

এ প্রসঙ্গে সচিব ইউসুফ বলেন, “জাহাজের বড় খরচের একটি অংশ ইঞ্জিন ও জেনারেটর আমদানি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে

আমরা চেষ্টা করব যাতে স্টিলসহ কাঁচামাল আমদানি শুল্কমুক্ত করা যায়।”

সেমিনারটি ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের

সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও সদস্য শাহনেওয়াজ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ডিসেম্বরের মধ্যে ৩ টার্মিনালের দায়িত্বে বিদেশি অপারেটর

আপডেট সময় : ০৮:৫২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জের

পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে

চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

তিনি জানান, লালদিয়ার চর টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হবে ৩০ বছরের জন্য, আর অন্য দুই টার্মিনালের মেয়াদ হবে ২৫ বছর।

রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)

আয়োজিত ‘ইনভেস্টমেন্ট পোটেনশিয়ালস ইন দ্য ওশান গোয়িং শিপিং ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

সচিব ইউসুফ বলেন, “আমরা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ছাড় দেব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ের দরকষাকষি চলছে। আশা করছি,

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটা চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে।”

এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অক্টোবর মাসের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছিল।

চুক্তি বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, “এটা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, যেখানে অনেক ধরনের নেগোসিয়েশন থাকে।

আলোচনা চলছে, আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই হয়ে যাবে।”

প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ভারত, মিয়ানমারসহ অনেক দেশেই বিদেশি অপারেটর বন্দর পরিচালনা করে।

চট্টগ্রাম বন্দরেও এটা বড় কোনো সমস্যা হবে না। শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে সমস্যা না হলে, এখানে হবে কেন?”

তিনি আরও বলেন, “একটি জাহাজ একদিন বন্দরে অপেক্ষা করলে ওয়েটিং ফি দিতে হয় ১৫ হাজার ডলার।

এখন পণ্য খালাসে ৩–৪ দিন লাগে। সময় অর্ধেকে নামাতে পারলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমে যাবে, অযথা ওয়েটিং বিল দিতে হবে না।”

বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি এলে সেবা ফি বেড়ে যেতে পারে—ব্যবসায়ীদের এমন আশঙ্কার বিষয়ে

নৌসচিব বলেন, “১৯৮০ সাল থেকে একই শুল্কে বন্দর পরিচালনা হচ্ছে। এত বছরে সেবা ফি বাড়ানো হয়নি।

সরকারকেও চলতে হয়, তাই ফি যৌক্তিকভাবে বাড়াতে হবে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রতি ৫ বছর পর পর মাশুল বাড়ানো হতো।”

তিনি মনে করেন, “সেবা ফি সামান্য বাড়লেও খরচ কমে যাবে, কারণ বন্দরে অপেক্ষার সময় কমে আসবে।

পাশাপাশি সড়ক, রেল ও নদীপথ মিলিয়ে একটি মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সময় এসেছে।”

চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানার সংকট প্রসঙ্গে সচিব বলেন, “বর্তমানে ছয়টি স্ক্যানারের মধ্যে বেশিরভাগ সময় ৩–৪টি অচল থাকে।

সব গেটে স্ক্যানার থাকলেও সচল না থাকায় জট বাড়ে। বিশ্বের কোথাও কনটেইনার খুলে পণ্য দেওয়া হয় না—আমরাই ব্যতিক্রম।

আমরা চাই, স্ক্যান করে সমস্যা পেলে সেটি অন্য ইয়ার্ডে নিয়ে খোলা হবে, দ্রুততার সঙ্গে।”

তিনি আরও জানান, “স্ক্যানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।

বিদেশি প্রতিষ্ঠান এলে এসব সমস্যা থাকবে না। তারা আধুনিকভাবে স্ক্যান করবে, এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত বাড়বে, রপ্তানিকারকদের

লিড টাইমও কমে যাবে। পণ্য দ্রুত খালাস হলে বন্দরে জাহাজ ভেড়ার সংখ্যা বাড়বে, শুল্কও বৃদ্ধি পাবে।

বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনেও তারা বিনিয়োগ করবে।”

সমুদ্রগামী জাহাজে জ্বালানি ব্যবহারে ২০৩০ সালের পর নতুন আন্তর্জাতিক নির্দেশনা আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে ব্যবহৃত

তেলের বদলে অ্যামোনিয়া বা বায়োফুয়েল ব্যবহার করতে হবে, নইলে আয় থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।”

এ সময় বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, “একসময় বাংলাদেশের

সমুদ্রগামী জাহাজ ছিল মাত্র ৩৬টি, এখন সরকারের সহযোগিতায় তা বেড়ে ১০২টিতে পৌঁছেছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত

জাহাজ ক্রয় ও পরিচালনায় শুল্ক অব্যাহতি ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা বাতিল করেছে। সুবিধা অব্যাহত রাখা জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি পণ্য পরিবহনে সরকারি জাহাজ ব্যবহারের শর্ত তুলে দিলে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ

বাড়বে, মেরিন একাডেমির শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। তারা বছরে ১.৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।”

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম এনসিটি টার্মিনাল পরিচালনা করছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

গত জুলাইয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেয়াদ না বাড়িয়ে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের উদ্যোগ নেয়—যেখানে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি

ওয়ার্ল্ডের নাম উঠে আসে।
এখন ছয় মাসের জন্য টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড, যতদিন না

বিদেশি অপারেটর দায়িত্ব নেয়।

বিদেশি অপারেটর আসলে বন্দরের সক্ষমতা কতটা বাড়বে—এ বিষয়ে সচিব ইউসুফ বলেন, “২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে

সরকার একটি সমীক্ষা করায়। ছয় মাস আগে রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা গেছে—বিদেশি অপারেটর এলে বন্দরের সক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “নৌপরিবহন খাতে বহু সিন্ডিকেট আছে। আগে শুনতাম শুধু পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট, এখন এখানেও আছে।

শ্রমিক নেতারা শতকোটি টাকার মালিক, তাদেরও নিজস্ব জাহাজ আছে।”

সেমিনারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার বলেন, “পুরোনো জাহাজ ভাঙার শিল্পে

বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে। এখন জাহাজ নির্মাণেও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। বর্তমানে ২০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ রয়েছে।

ব্যাংকের সহযোগিতা ও রপ্তানি নীতিতে সুবিধা দিলে খাতটি দ্রুত বাড়বে। তৈরি পোশাক খাতের মতো জাহাজ নির্মাণের কাঁচামাল

আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চালু করা উচিত।”

এ প্রসঙ্গে সচিব ইউসুফ বলেন, “জাহাজের বড় খরচের একটি অংশ ইঞ্জিন ও জেনারেটর আমদানি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে

আমরা চেষ্টা করব যাতে স্টিলসহ কাঁচামাল আমদানি শুল্কমুক্ত করা যায়।”

সেমিনারটি ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের

সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও সদস্য শাহনেওয়াজ।