ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না

ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাচ্ছে কেনো বিএনপি?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:৫৮:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • / 304
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এর আগেও দলটির নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিলেন, তবে এবার দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কণ্ঠে বিষয়টি আরও জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন নিয়ে “টালবাহানা” চলছে এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

বুধবার (২৮ মে ২০২৫) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির এই দাবির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। কোনো কোনো দল বলছে, নয়মাস পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখাতে পারেনি। বরং দেশে বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। সুতরাং বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে যৌক্তিক বলছে তারা।

তবে কিছু রাজনৈতিক দল, বিশেষত ইসলামপন্থি দলগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত হওয়া দরকার। তাই বিএনপির এই দাবিকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবেও দেখছে কেউ কেউ। তবে বেশিরভাগ দলই বলছে, ডিসেম্বর না হলেও ২০২৬ সালের শুরুতেই নির্বাচন হওয়া উচিত।

‘সরকারকে চাপে রাখার কৌশল’

বিএনপির চাপের মধ্যেই গত বছরের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেন।

কিছুদিন আগে অধ্যাপক ইউনূসের কথিত পদত্যাগ ভাবনার গুঞ্জন ওঠার পর বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাঁর সঙ্গে দেখা করে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, জুন মাসই এই সরকারের “কাট অফ টাইম”। তবে বিএনপি কখনোই এই সময়সীমায় সন্তুষ্ট নয়। বুধবারের সমাবেশে তারেক রহমান আবারও দলের জোরালো অবস্থান স্পষ্ট করেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তি বা দল নির্বাচনের দাবি তুলতে পারে। তবে সংস্কারের রোডম্যাপ ও বিচারকে দৃশ্যমান করা জরুরি।”

তিনি বলেন, “সংস্কার ফেলে রেখে শুধু নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাওয়াটা বাংলাদেশের রাজনীতি নয়, বরং তা মানুষের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের সঙ্কট তৈরি করতে পারে।” আখতার হোসেন মনে করেন, “জুলাই সনদে” রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচন নিয়েও সংকট কমবে।

অন্যান্য ইসলামপন্থি দলগুলোর অবস্থানও একই রকম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওনারাই যদি নির্বাচন ঘোষণা করে দেন, তাহলে বাকি কাজটাও ওনারা করুক।”

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু দায়িত্বে ব্যর্থ হলেও উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির উচিৎ সরকারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু “রাস্তায় সমাবেশ করে আল্টিমেটাম দেওয়া সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল”—যা ইসলামী আন্দোলন ভালোভাবে দেখছে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিএনপি যদি নিজের অবস্থানে অনড় থাকে, তবে তাদের “সহযোগীরাও তাদের ভাষায় কথা বলবে”, যা দেশের জন্য ভালো হবে না। তবে তিনি জানান, সরকার সময়মতো নির্বাচন না করলে ইসলামী আন্দোলনও কঠোর অবস্থান নেবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অর্থাৎ “অন্তত ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ” নির্বাচন হওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, বিএনপি যে সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইছে এবং প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। “প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট একটি মাসের ঘোষণা দিতে পারেন”, যোগ করেন তিনি। মামুনুল হকের মতে, যদি বিএনপি বিচার ও সংস্কারকেও তাদের দাবির মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে রাখে, তাহলে অন্যান্য দল তাদের সমর্থন করবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একেক দল তার মতো, স্ব স্ব অবস্থান থেকে যা ভালো মনে করে তা-ই বলবে।” তিনি জানান, সরকার ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, ফেব্রুয়ারিতে বা রমজানের পরে এপ্রিলে সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত।

“এটা কেবল বিএনপির দাবি নয়, জনগণের দাবি”

ইসলামপন্থি দলগুলো বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থানকে ইতিবাচক বলেই দেখছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “গত নয়মাসে সরকারের কর্মকাণ্ড ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে দ্রুত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনা করেছি যে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করা দরকার।” নুরুল হক নুরের মতে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ কিংবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে আরও দেরি হলে প্রাকৃতিক কারণেই নির্বাচন পেছানোর শঙ্কা আছে।

সংস্কার প্রশ্নে একমত হলেও কার্যত কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান না হওয়ায় একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। “যার ফলে বিএনপি মনে করছে, সবকিছুকে অস্পষ্টতায় রেখে সংকটকে আরও ঘনীভূত করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “এ কারণে বিএনপি ঠিক বলছে এবং সরকারের উচিত তা আমলে নেওয়া।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব। সরকারের ঘোষিত জুনের সময়সীমাকে তিনি অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ বলে মন্তব্য করেন। “নির্বাচন কেবল বিএনপির দাবি নয়, জনগণের দাবি। ১৬ বছর ধরে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছে।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে নির্বাচনমুখী তৎপরতা বেড়ে যাবে। এতে দেশের অস্থিরতা, আধা নৈরাজ্যিক অবস্থা খানিকটা হলেও দূর হবে।”

নাগরিক ঐক্যও দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে ডিসেম্বর না জুন—এই বিতর্কে দলটি জড়াতে চাইছে না। দলটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ডিসেম্বরে ভোট করা সম্ভব, সরকার চাইলে করতে পারে। তবে এ নিয়ে বাড়াবাড়ির ঝুঁকি আছে।” তিনি জানান, নয়মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম আশানুরূপ না হওয়ায় সময় বাড়িয়েও খুব বেশি কিছু হবে না বলে তারা মনে করে।

সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাচ্ছে কেনো বিএনপি?

আপডেট সময় : ১০:৫৮:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এর আগেও দলটির নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিলেন, তবে এবার দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কণ্ঠে বিষয়টি আরও জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন নিয়ে “টালবাহানা” চলছে এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

বুধবার (২৮ মে ২০২৫) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির এই দাবির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। কোনো কোনো দল বলছে, নয়মাস পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখাতে পারেনি। বরং দেশে বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। সুতরাং বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে যৌক্তিক বলছে তারা।

তবে কিছু রাজনৈতিক দল, বিশেষত ইসলামপন্থি দলগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত হওয়া দরকার। তাই বিএনপির এই দাবিকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবেও দেখছে কেউ কেউ। তবে বেশিরভাগ দলই বলছে, ডিসেম্বর না হলেও ২০২৬ সালের শুরুতেই নির্বাচন হওয়া উচিত।

‘সরকারকে চাপে রাখার কৌশল’

বিএনপির চাপের মধ্যেই গত বছরের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেন।

কিছুদিন আগে অধ্যাপক ইউনূসের কথিত পদত্যাগ ভাবনার গুঞ্জন ওঠার পর বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাঁর সঙ্গে দেখা করে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, জুন মাসই এই সরকারের “কাট অফ টাইম”। তবে বিএনপি কখনোই এই সময়সীমায় সন্তুষ্ট নয়। বুধবারের সমাবেশে তারেক রহমান আবারও দলের জোরালো অবস্থান স্পষ্ট করেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তি বা দল নির্বাচনের দাবি তুলতে পারে। তবে সংস্কারের রোডম্যাপ ও বিচারকে দৃশ্যমান করা জরুরি।”

তিনি বলেন, “সংস্কার ফেলে রেখে শুধু নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাওয়াটা বাংলাদেশের রাজনীতি নয়, বরং তা মানুষের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের সঙ্কট তৈরি করতে পারে।” আখতার হোসেন মনে করেন, “জুলাই সনদে” রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচন নিয়েও সংকট কমবে।

অন্যান্য ইসলামপন্থি দলগুলোর অবস্থানও একই রকম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওনারাই যদি নির্বাচন ঘোষণা করে দেন, তাহলে বাকি কাজটাও ওনারা করুক।”

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু দায়িত্বে ব্যর্থ হলেও উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির উচিৎ সরকারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু “রাস্তায় সমাবেশ করে আল্টিমেটাম দেওয়া সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল”—যা ইসলামী আন্দোলন ভালোভাবে দেখছে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিএনপি যদি নিজের অবস্থানে অনড় থাকে, তবে তাদের “সহযোগীরাও তাদের ভাষায় কথা বলবে”, যা দেশের জন্য ভালো হবে না। তবে তিনি জানান, সরকার সময়মতো নির্বাচন না করলে ইসলামী আন্দোলনও কঠোর অবস্থান নেবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অর্থাৎ “অন্তত ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ” নির্বাচন হওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, বিএনপি যে সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইছে এবং প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। “প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট একটি মাসের ঘোষণা দিতে পারেন”, যোগ করেন তিনি। মামুনুল হকের মতে, যদি বিএনপি বিচার ও সংস্কারকেও তাদের দাবির মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে রাখে, তাহলে অন্যান্য দল তাদের সমর্থন করবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একেক দল তার মতো, স্ব স্ব অবস্থান থেকে যা ভালো মনে করে তা-ই বলবে।” তিনি জানান, সরকার ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, ফেব্রুয়ারিতে বা রমজানের পরে এপ্রিলে সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত।

“এটা কেবল বিএনপির দাবি নয়, জনগণের দাবি”

ইসলামপন্থি দলগুলো বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থানকে ইতিবাচক বলেই দেখছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “গত নয়মাসে সরকারের কর্মকাণ্ড ও বাড়তে থাকা রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে দ্রুত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনা করেছি যে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করা দরকার।” নুরুল হক নুরের মতে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ কিংবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে আরও দেরি হলে প্রাকৃতিক কারণেই নির্বাচন পেছানোর শঙ্কা আছে।

সংস্কার প্রশ্নে একমত হলেও কার্যত কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান না হওয়ায় একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। “যার ফলে বিএনপি মনে করছে, সবকিছুকে অস্পষ্টতায় রেখে সংকটকে আরও ঘনীভূত করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “এ কারণে বিএনপি ঠিক বলছে এবং সরকারের উচিত তা আমলে নেওয়া।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব। সরকারের ঘোষিত জুনের সময়সীমাকে তিনি অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ বলে মন্তব্য করেন। “নির্বাচন কেবল বিএনপির দাবি নয়, জনগণের দাবি। ১৬ বছর ধরে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছে।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে নির্বাচনমুখী তৎপরতা বেড়ে যাবে। এতে দেশের অস্থিরতা, আধা নৈরাজ্যিক অবস্থা খানিকটা হলেও দূর হবে।”

নাগরিক ঐক্যও দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে ডিসেম্বর না জুন—এই বিতর্কে দলটি জড়াতে চাইছে না। দলটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ডিসেম্বরে ভোট করা সম্ভব, সরকার চাইলে করতে পারে। তবে এ নিয়ে বাড়াবাড়ির ঝুঁকি আছে।” তিনি জানান, নয়মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম আশানুরূপ না হওয়ায় সময় বাড়িয়েও খুব বেশি কিছু হবে না বলে তারা মনে করে।

সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা