ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ডাকসু : রিট আবেদনের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উমামার
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত, ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৩:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 193

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ভবন

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। এর ফলে ডাকসু নির্বাচনে আপাতত কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা বিবিধ আপিলের শুনানি নিয়ে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে লেখা একটি আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তাৎক্ষণিক এ আদেশ দেন।

এসময় আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পরে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন। ফলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনও বাধা রইলো না।

এর কয়েক মিনিট আগে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর প্রচারের মধ্যে ছাত্রশিবির প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রোববার হাই কোর্টে রিট করেন তিন বাম ছাত্র সংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। ৫ অগাস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন, এর পরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী হলেন, এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিট আবেদনে।

হাইকোর্ট তার অপর আদেশে ডাকসু নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ওই ট্রাইব্যুনালকে অভিযোগ আমলে নিতে এবং এ বিষয়ে সবার উপস্থিতিতে শুনানি ও অনুসন্ধান করে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি রুলও জারি করেছিলেন আদালত।

নির্বাচন স্থগিত করে হাই কোর্টের আদেশের খবর ক্যাম্পাসের পৌঁছার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে আসে। ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন রিটকারীর প্যানেল ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের কর্মী-সমর্থকরাও। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ছাত্র ফ্রন্টের একাংশ এবং বাংলাদেশ জাসদের ছাত্র সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগ মিলে এই প্যানেল গড়েছে।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের খবরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ডাকসু আমার অধিকার রুখে দেয় সাধ্য কার, হাইকোর্ট না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। এ খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে থেকে চলে যান।

রিট আবেদনের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উমামার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে প্রার্থিতা নিয়ে রিট আবেদন করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। সোমবার হাই কোর্টের রায়ে নির্বাচন স্থগিত এবং পরে তা চেম্বার আদালতে স্থগিতাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

উমামা ফাতেমা বলেন, “এখানে ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়েছে ১১ অগাস্ট। প্রার্থী প্রত্যাহার হয় ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত। এই পুরো সময়ে এখানে কিন্তু ওই গোষ্ঠী চাইলে রিট করতে পারত। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন যখন প্রায় ঘনিয়ে এসেছে, ওই সময় কিন্তু এসে তারা হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেছে। আমরা মনে করি, এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ এবং পুরো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে শেষ মুহূর্তে এসে রিটটি করা হয়েছে।”

ডাকসু ভবনের সামনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ইশতেহার ঘোষণার মধ্যে হাই কোর্টের আদেশের খবর আসে। ওই আদেশের পর নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় দিয়েও ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেনি উমামা ফাতেমার প্যানেল। স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে নামা প্রার্থীদের থেকে বাছাই করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল গড়েছেন বিগত শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। তার প্যানেলের জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি। আর জিএস পদে লড়ছেন জাহেদ আহমদ।

সন্ধ্যা ৬টায় ডাকসু ভবনের সামনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে উমামা ফাতেমা বলেন, “আমরা বলতে চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা অভ্যন্তরীণ নির্বাচন। এখানে কোনো জাতীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়। যারা এই ডাকসু বা ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ছাত্রদের পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বারবার টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা আসলে সামনের সময়গুলোতে আমাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো বন্ধ করার পাঁয়তারা করছেন।”

তিনি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই আমাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে জাতীয় রাজনীতির গুটি হতে দেখতে চাই না। সোজা কথা, এই ডাকসু নির্বাচন আমরা এই ৯ সেপ্টেম্বরেই দেখতে চাই। আমরা দ্রুতই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করব এবং আমরা সরাসরি বলব যে, ডাকসু নির্বাচন কোনোভাবে ৯ সেপ্টেম্বরের থেকে বিলম্বিত হতে পারবে না।”

উমামা ফাতেমা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নির্বাচন কীভাবে আয়োজন হবে না হবে, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত। এখানে হাই কোর্টকে টেনে নিয়ে আসা, এটা পুরাপুরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের সঙ্গে বেইমানি।”

তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য থেকে আমরা সরাসরি বলতে চাই যে, এই ডাকসু ইলেকশনকে শিক্ষার্থীদের ওয়েলফেয়ারের একটা মাধ্যম হিসেবে দেখতে চাই, জাতীয় নেতা তৈরির কারখানা আমরা ডাকসুকে বানাতে চাইনা।

“সেই জায়গা থেকে আমাদের ডাকসু প্রতিবছর নিয়মিত করার জন্য ক্যালেন্ডারের ডেট ধরে আমরা ১২ মাসে একবার ডাকসু ইলেকশন হবে, সেভাবে আমরা ডাকসুকে নিয়ে যাব।”

জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক মিলিয়ে প্রায় ১০টি প্যানেল ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ডাকসু : রিট আবেদনের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উমামার
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত, ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই

আপডেট সময় : ০৯:৩৩:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। এর ফলে ডাকসু নির্বাচনে আপাতত কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা বিবিধ আপিলের শুনানি নিয়ে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে লেখা একটি আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তাৎক্ষণিক এ আদেশ দেন।

এসময় আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পরে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন। ফলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনও বাধা রইলো না।

এর কয়েক মিনিট আগে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর প্রচারের মধ্যে ছাত্রশিবির প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রোববার হাই কোর্টে রিট করেন তিন বাম ছাত্র সংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। ৫ অগাস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন, এর পরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী হলেন, এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিট আবেদনে।

হাইকোর্ট তার অপর আদেশে ডাকসু নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ওই ট্রাইব্যুনালকে অভিযোগ আমলে নিতে এবং এ বিষয়ে সবার উপস্থিতিতে শুনানি ও অনুসন্ধান করে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি রুলও জারি করেছিলেন আদালত।

নির্বাচন স্থগিত করে হাই কোর্টের আদেশের খবর ক্যাম্পাসের পৌঁছার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে আসে। ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন রিটকারীর প্যানেল ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের কর্মী-সমর্থকরাও। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ছাত্র ফ্রন্টের একাংশ এবং বাংলাদেশ জাসদের ছাত্র সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগ মিলে এই প্যানেল গড়েছে।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের খবরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ডাকসু আমার অধিকার রুখে দেয় সাধ্য কার, হাইকোর্ট না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। এ খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে থেকে চলে যান।

রিট আবেদনের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উমামার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে প্রার্থিতা নিয়ে রিট আবেদন করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। সোমবার হাই কোর্টের রায়ে নির্বাচন স্থগিত এবং পরে তা চেম্বার আদালতে স্থগিতাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

উমামা ফাতেমা বলেন, “এখানে ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়েছে ১১ অগাস্ট। প্রার্থী প্রত্যাহার হয় ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত। এই পুরো সময়ে এখানে কিন্তু ওই গোষ্ঠী চাইলে রিট করতে পারত। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন যখন প্রায় ঘনিয়ে এসেছে, ওই সময় কিন্তু এসে তারা হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেছে। আমরা মনে করি, এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ এবং পুরো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে শেষ মুহূর্তে এসে রিটটি করা হয়েছে।”

ডাকসু ভবনের সামনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ইশতেহার ঘোষণার মধ্যে হাই কোর্টের আদেশের খবর আসে। ওই আদেশের পর নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় দিয়েও ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেনি উমামা ফাতেমার প্যানেল। স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে নামা প্রার্থীদের থেকে বাছাই করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল গড়েছেন বিগত শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। তার প্যানেলের জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি। আর জিএস পদে লড়ছেন জাহেদ আহমদ।

সন্ধ্যা ৬টায় ডাকসু ভবনের সামনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে উমামা ফাতেমা বলেন, “আমরা বলতে চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা অভ্যন্তরীণ নির্বাচন। এখানে কোনো জাতীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়। যারা এই ডাকসু বা ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ছাত্রদের পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বারবার টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা আসলে সামনের সময়গুলোতে আমাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো বন্ধ করার পাঁয়তারা করছেন।”

তিনি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই আমাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে জাতীয় রাজনীতির গুটি হতে দেখতে চাই না। সোজা কথা, এই ডাকসু নির্বাচন আমরা এই ৯ সেপ্টেম্বরেই দেখতে চাই। আমরা দ্রুতই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করব এবং আমরা সরাসরি বলব যে, ডাকসু নির্বাচন কোনোভাবে ৯ সেপ্টেম্বরের থেকে বিলম্বিত হতে পারবে না।”

উমামা ফাতেমা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নির্বাচন কীভাবে আয়োজন হবে না হবে, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত। এখানে হাই কোর্টকে টেনে নিয়ে আসা, এটা পুরাপুরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের সঙ্গে বেইমানি।”

তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য থেকে আমরা সরাসরি বলতে চাই যে, এই ডাকসু ইলেকশনকে শিক্ষার্থীদের ওয়েলফেয়ারের একটা মাধ্যম হিসেবে দেখতে চাই, জাতীয় নেতা তৈরির কারখানা আমরা ডাকসুকে বানাতে চাইনা।

“সেই জায়গা থেকে আমাদের ডাকসু প্রতিবছর নিয়মিত করার জন্য ক্যালেন্ডারের ডেট ধরে আমরা ১২ মাসে একবার ডাকসু ইলেকশন হবে, সেভাবে আমরা ডাকসুকে নিয়ে যাব।”

জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক মিলিয়ে প্রায় ১০টি প্যানেল ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনেকে।