ট্রাইব্যুনালের তলবে হুইল চেয়ারে হাজির হয়ে ক্ষমা চাইতে হলো জেড আই খান পান্নাকে
- আপডেট সময় : ০৬:০৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 95
গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও অপারগতা জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির হয়ে তিনি পুনরায় জানান, শেখ হাসিনার পক্ষে আর আইনগত লড়াই চালাতে পারবেন না।
নিজ উদ্যোগে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হওয়ার আবেদন করার পর এখন অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চান।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি তার অপারগতার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে আবেদনের মাধ্যমেও জানান।
গত ২৩ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ৩ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর আবেদন করেন জেড আই খান পান্না এবং ট্রাইব্যুনাল তাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগের আদেশ দেয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার–এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ দুপুরে র্যাবের টিএফআই সেলে নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করে।
প্রধান কৌঁসুলি শুনানি উপস্থাপন করছিলেন। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নির্দেশ দেন—আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে ‘এখনই’ হাজির হতে বলা হোক। নির্দেশের ১০–১২ মিনিটের মধ্যে তিনি হুইলচেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছান।
এ সময় চেয়ারম্যান তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে বলেন, “আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ চেয়ে অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু আসেননি। আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি করতে হয়েছে। যেটা হয়ে গেছে এখন আবার তার শুনানি করতে হবে। নিয়ম হচ্ছে উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি করতে হয়।”
পান্না বলেন, “আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ মামলায় না দাঁড়ানোর জন্য আমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”
ট্রাইব্যুনাল জিজ্ঞেস করেন, “আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হবেন না; আপনিও আসবেন না। আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অর্ডার দিয়েছি। আপনি না করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে এসে বলতে হবে। এছাড়া আপনি এক ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে আপনার ক্লায়েন্ট এই আদালত মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। এটা কি আপনি বলতে পারেন?”
জেড আই খান পান্না বলেন, “আমি আনকনডিশনাল অ্যাপোলজি চাই।”
ট্রাইব্যুনাল আবার জানতে চান—তিনি এ মামলায় দাঁড়াবেন কি না। জবাবে তিনি ‘না’ বলেন।
এ সময় প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মন্তব্য করেন, একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে তার করা মন্তব্য অবমাননাকর।
এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, “আমরা আশা করব আপনার কাছ থেকে সহায়তা পাব।”
সঙ্গে জানতে চান—তার বদলে কাকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, কোনো সুপারিশ আছে কি না। পান্না ‘না’ জানান।
পরে ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে জিজ্ঞেস করেন তিনি রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হতে আগ্রহী কি না। আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমির হোসেন এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে লড়েছিলেন, যে মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড হয়।
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থান দমনের চেষ্টায় হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার চলছে।
তার সরকার আমলে গঠিত এই ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত-বিএনপির কয়েকজন নেতার ফাঁসির রায় দেয়, যা পরে কার্যকর হয়।
















