ঢাকা ০৬:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

জুলাই যোদ্ধাদের ছাড়াই ‘জুলাই সনদ’ সই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:০০:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / 146

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূস ও আলী রিয়াজ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার পর রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা হিসেবে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) স্বাক্ষরিত হলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং কমিশনের সদস্যরা এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেন।

সই শেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছে’। তার ভাষায়, “এটি সারা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হয় সনদ স্বাক্ষরের এই অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়। ঠিক সাড়ে ৪টায় ব্যান্ড দলের সুরে মঞ্চে ওঠেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। এরপর একে একে মঞ্চে আসেন সনদ প্রণয়নে যুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। সেই প্রেক্ষিতেই গত বছর জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা এই সনদের দাবি তোলেন। তাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংলাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে। সনদের আইনি ভিত্তি ‘অস্পষ্ট’ উল্লেখ করে অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয় দলটি।

এছাড়া ইতিহাসের উপস্থাপন ‘বিকৃত’ এবং সংবিধানের মূলনীতি সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সনদে সই করেনি বাম ধারার চার দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।

মঞ্চে ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুমসহ বিভিন্ন দলের নেতা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও উপদেষ্টারা—আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

কূটনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ছিলেন অতিথি হিসেবে। তবে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় থাকা ৩৩ দল ও জোটের কয়েকটির প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। দর্শক সারিতে ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।

স্বাগত বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, “আজ দেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত—একটি ক্রান্তিকালে নতুন যাত্রার মাইলফলক।” অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সনদ স্বাক্ষরের পর প্রদর্শিত হয় সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র।

জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫: মূল অঙ্গীকার

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত এই সনদে সাতটি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—

  • ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তন বাস্তবায়ন,

  • সংবিধানে সনদকে সংযুক্ত করা,

  • এর বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন না তোলা,

  • ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্বীকৃতি প্রদান,

  • গুম-খুন ও নির্যাতনের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, আহতদের পুনর্বাসন,

  • রাষ্ট্র, নির্বাচন, বিচার ও প্রশাসন সংস্কারে আইন সংশোধন,

  • এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত কার্যকর করা।

সই করেছে যেসব দল

১. বিএনপি
২. জামায়াতে ইসলামি
৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)
৪. খেলাফত মজলিস
৫. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
৬. আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)
৭. নাগরিক ঐক্য
৮. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)
৯. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
১০. গণসংহতি আন্দোলন
১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)
১২. গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)
১৩. বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট
১৫. ১২ দলীয় জোট
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
১৭. গণফোরাম
১৮. জাকের পার্টি
১৯. জাতীয় গণফ্রন্ট
২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টি
২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টি
২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
২৪. ইসলামী ঐক্যজোট
২৫. আমজনতার দল

সরকারের পক্ষে সই করেছেন

১. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
২. সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ
৩. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া
৪. পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন
৫. নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার
৬. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক
৭. দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান

যারা সই করেনি

১. জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
২. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
৩. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
৪. বাসদ (মার্ক্সবাদী)
৫. বাংলাদেশ জাসদ

এর আগে দুপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে অনুষ্ঠানস্থলের সামনে অবস্থান নেন।
তাদের বিক্ষোভের মুখে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সনদে সংশোধনী আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সেখান থেকে সরে যাননি।
পরে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।

সনদে সই না করা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এদিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের নামে কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কয়েকটি দল মিলে কাগজে স্বাক্ষর করলেই জাতীয় ঐক্য হয় না। যেখানে ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সবাই থাকবে, সেটাই হবে প্রকৃত জাতীয় ঐক্য।”

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাই যোদ্ধাদের ছাড়াই ‘জুলাই সনদ’ সই

আপডেট সময় : ০৮:০০:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার পর রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা হিসেবে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) স্বাক্ষরিত হলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং কমিশনের সদস্যরা এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেন।

সই শেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছে’। তার ভাষায়, “এটি সারা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হয় সনদ স্বাক্ষরের এই অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়। ঠিক সাড়ে ৪টায় ব্যান্ড দলের সুরে মঞ্চে ওঠেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। এরপর একে একে মঞ্চে আসেন সনদ প্রণয়নে যুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। সেই প্রেক্ষিতেই গত বছর জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা এই সনদের দাবি তোলেন। তাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংলাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে। সনদের আইনি ভিত্তি ‘অস্পষ্ট’ উল্লেখ করে অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয় দলটি।

এছাড়া ইতিহাসের উপস্থাপন ‘বিকৃত’ এবং সংবিধানের মূলনীতি সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সনদে সই করেনি বাম ধারার চার দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।

মঞ্চে ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুমসহ বিভিন্ন দলের নেতা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও উপদেষ্টারা—আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

কূটনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ছিলেন অতিথি হিসেবে। তবে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় থাকা ৩৩ দল ও জোটের কয়েকটির প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। দর্শক সারিতে ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।

স্বাগত বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, “আজ দেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত—একটি ক্রান্তিকালে নতুন যাত্রার মাইলফলক।” অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সনদ স্বাক্ষরের পর প্রদর্শিত হয় সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র।

জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫: মূল অঙ্গীকার

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত এই সনদে সাতটি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—

  • ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তন বাস্তবায়ন,

  • সংবিধানে সনদকে সংযুক্ত করা,

  • এর বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন না তোলা,

  • ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্বীকৃতি প্রদান,

  • গুম-খুন ও নির্যাতনের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, আহতদের পুনর্বাসন,

  • রাষ্ট্র, নির্বাচন, বিচার ও প্রশাসন সংস্কারে আইন সংশোধন,

  • এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত কার্যকর করা।

সই করেছে যেসব দল

১. বিএনপি
২. জামায়াতে ইসলামি
৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)
৪. খেলাফত মজলিস
৫. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
৬. আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)
৭. নাগরিক ঐক্য
৮. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)
৯. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
১০. গণসংহতি আন্দোলন
১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)
১২. গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)
১৩. বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট
১৫. ১২ দলীয় জোট
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
১৭. গণফোরাম
১৮. জাকের পার্টি
১৯. জাতীয় গণফ্রন্ট
২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টি
২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টি
২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
২৪. ইসলামী ঐক্যজোট
২৫. আমজনতার দল

সরকারের পক্ষে সই করেছেন

১. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
২. সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ
৩. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া
৪. পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন
৫. নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার
৬. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক
৭. দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান

যারা সই করেনি

১. জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
২. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
৩. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
৪. বাসদ (মার্ক্সবাদী)
৫. বাংলাদেশ জাসদ

এর আগে দুপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে অনুষ্ঠানস্থলের সামনে অবস্থান নেন।
তাদের বিক্ষোভের মুখে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সনদে সংশোধনী আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সেখান থেকে সরে যাননি।
পরে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।

সনদে সই না করা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এদিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের নামে কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কয়েকটি দল মিলে কাগজে স্বাক্ষর করলেই জাতীয় ঐক্য হয় না। যেখানে ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সবাই থাকবে, সেটাই হবে প্রকৃত জাতীয় ঐক্য।”