জাতির উদ্দেশে খামেনির ভাষণ : যুক্তরাষ্ট্রকে কষে চড় মেরেছি
- আপডেট সময় : ১০:৪৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
- / 244
যুদ্ধবিরতির দুই দিন পর জাতির উদ্দেশে প্রথম টেলিভিশন ভাষণে ‘বিজয়ের’ জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি। দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের যুদ্ধে জয়লাভের পর বৃহস্পতিবার এই ভাষণে তিনি বলেন, “ভুয়া ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। ইসরায়েল পরাজিত হয়েছে এবং ইসলামিক রিপাবলিকের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। ইহুদিবাদীরা যতই বড় কথা বলুক, ইরানের ধাক্কায় তারা পতনের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল।”
এই ধর্মীয় নেতা স্পষ্টভাবে বলেন, ইরান তার সামরিক সক্ষমতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালোভাবে চড় মারতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, “মার্কিন সরকার সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত হয়েছিল, কারণ তারা বুঝেছিল, যদি হস্তক্ষেপ না করে, তবে ইহুদিবাদীদের পতন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসন কোনো সুফল আনেনি। বিজয় হয়েছে ইরানের, আর আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্তভাবে আঘাত করেছি। এই জয় উপলক্ষে আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
খামেনি আরও বলেন, “ইরানের ওপর আক্রমণের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। ইহুদিবাদীরা কল্পনাও করেনি, তারা এমন প্রতিঘাত পাবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করে তাদের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী ও বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ভেদ করার শক্তি দিয়েছেন। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও উন্নত অস্ত্র ব্যবহারে আমরা শত্রুর বহু শহর ও সামরিক অঞ্চল ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছি। এটি মহান এক ঐশ্বরিক অনুগ্রহ।”
খামেনি ট্রাম্প সম্পর্কে বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের বিবরণ দিতে গিয়ে অতিরঞ্জন করেছেন এবং স্বীকার করেছেন, তিনি তা ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছেন। যারা শুনছিলেন, তারা বুঝতে পেরেছেন—এই কথার পেছনে রয়েছে অন্য এক সত্য। মার্কিনরা তাদের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তারা সত্য আড়াল করতে চেয়েছে অতিরঞ্জনের মাধ্যমে। এখানেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুখে জোরালো চড় বসিয়েছে। আমরা আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে তাদের ক্ষতিসাধন করেছি, যেটি আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি।”
খামেনি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য উঠে এসেছে। আর তা হলো, বিপ্লবের শুরু থেকেই আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে সক্রিয়। তাদের অজুহাত শুধু পরিবর্তন হয়—মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নারী অধিকার, পারমাণবিক ইস্যু কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য একটাই—ইরানকে আত্মসমর্পণ করানো। আগে কেউ তা স্বীকার না করলেও ট্রাম্প খোলাখুলি বলেছিলেন, আমেরিকা ইরানের আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুই মানে না। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক।”
তিনি বলেন, “ইরানি জাতি মহান। ইরান শক্তিশালী, সুপ্রাচীন একটি জাতি। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সভ্যতা আমেরিকার তুলনায় শতগুণ সমৃদ্ধ। ইনশাআল্লাহ, ইরান জয়ী ছিল, আছে এবং থাকবে।”
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির জটিলতায় আয়াতুল্লাহ খামেনির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রেক্ষাপটে এক বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনী তাঁর দায়িত্ব নেয়। যুক্তরাজ্যের দৈনিক টেলিগ্রাফ জানায়, তেহরানের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ পদক্ষেপের পেছনে খামেনির নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ইরানে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন খামেনি। এমনকি সেনাবাহিনীর আক্রমণের নির্দেশও তাঁর অনুমোদন ছাড়া হয় না। মনে করা হয়, কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিই। যুদ্ধ চলাকালীন তিনি একাধিকবার গোপন স্থান থেকে বিবৃতি দিয়েছেন।
রয়টার্স জানায়, খামেনি বর্তমানে তাঁর পরিবারসহ আত্মগোপনে রয়েছেন এবং এলিট বাহিনী ‘ভালি-ইয়ে আমর’ তাঁকে সুরক্ষা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতি ইরানের কৃতজ্ঞতা
ইসরায়েল ও তার মিত্রদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকার, জনগণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইরানের প্রতি যে সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে, সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ঢাকার ইরান দূতাবাস। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ, শিক্ষাবিদ ও সমাজ-রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে সমাবেশ, বক্তৃতা ও বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশিত সংহতি মানবতা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রতি একটি গভীর প্রতিশ্রুতির প্রতিচ্ছবি।”
এতে আরও বলা হয়, “ইরানি জনগণের এই প্রতিরোধ দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। একই সঙ্গে এটি আধিপত্যবাদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিশ্বাস করে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু বৈধ অধিকার নয়, এটি একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্বও।”
সূত্র: রয়টার্স, টেলিগ্রাফ, এপি
























