চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে গুলি বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার নিহত
- আপডেট সময় : ১১:৪৮:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
- / 51
চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেওয়ার সময় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। একই ঘটনায় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও–বোয়ালখালী) আসনের বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। বুধবার (০৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে সরোয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে চিকিৎসাধীন। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির সরোয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, সরোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। গত ৫ আগস্ট জামিনে মুক্তি পাওয়া সরোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১৬টি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি চান্দগাঁও এলাকায়।
গত ২৯ মার্চ রাত পৌনে ৩টার দিকে নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডে সরোয়ারের প্রাইভেট কারে গুলি চালানো হয়। সেদিন গাড়িতে থাকা দুজন—বখতিয়ার হোসেন মানিক (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩৬)—নিহত হন। তারা সরোয়ারের সহযোগী ছিলেন। সরোয়ার ও তার দুই সহযোগী রবিন এবং হৃদয় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেই ঘটনার পর থেকে তিনি কোথায় ছিলেন তা পুলিশ বা প্রশাসন কেউই নিশ্চিত করতে পারেনি। স্থানীয়দের দাবি ছিল, তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।
বিএনপি বলছে, সরোয়ার তাদের লোক নন। বুধবারের জনসংযোগ কর্মসূচিতে শত শত মানুষ অংশ নেন। সেখানে গুলিতে সরোয়ার মারা যান এবং বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন।
পুলিশ সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে সরোয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
এর আগে বিকেলে চালিতাতলী এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি প্রচারে সরোয়ার যোগ দেন। সেখানে গুলিতে এরশাদ উল্লাহ, সরোয়ার এবং শান্ত নামের একজন আহত হন। পরে সরোয়ারের মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ মার্চ বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডে সরোয়ারকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল। সে ঘটনায় গাড়িতে থাকা দুজন মারা যান এবং সরোয়ার অল্পের জন্য বেঁচে যান। ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা জবানবন্দিতে জানায়, ছোট সাজ্জাদের নির্দেশেই ঘটনাটি ঘটে।
ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। সরোয়ারও একসময় তাদের অনুসারী ছিলেন, তবে ২০১৫ সালের পর তিনি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হন।
২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটজন নিহত হন। সে ঘটনায় সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান এবং বিদেশে পালিয়ে যান। বিদেশে থেকেও তিনি বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় তার বাহিনীর মাধ্যমে অপরাধ পরিচালনা করেন। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন ছোট সাজ্জাদ।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এক মাস আগে সরোয়ার বিয়ে করেন। তাঁর বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বিএনপি সমাবেশে তাকে দেখা যেত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, প্রার্থী জনসংযোগে গেলে সেখানে লোকজন জড়ো হয়। সরোয়ার সেখানে উপস্থিত থাকায় সন্ত্রাসী দুই পক্ষের পূর্ববিরোধের জেরে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। “আমাদের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন, তার চিকিৎসা চলছে।”
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, “এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী সরোয়ার নিহত হয়েছেন।”
কারা গুলি করেছে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব রানা বলেন, “প্রতিপক্ষের লোকজন হতে পারে। তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা। বর্তমানে আমাদের দলীয় প্রার্থী এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি শঙ্কামুক্ত। পাশাপাশি সরোয়ার বাবলা নিহত হন।”


















