ঢাকা ০৬:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গাজায় এখনও হত্যাকাণ্ড, জিম্মিদের ফেরত পেয়ে ‘পুরোনো রূপে’  ইসরায়েল

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:৫১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / 128

গাজায় যাচ্ছে ত্রাণ সহায়তা

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাজায় আবারও জ্বলছে সহিংসতার আগুন। সদ্য ঘোষিত অস্ত্রবিরতির মাত্র চার দিন পরই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

একই সঙ্গে ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জীবিত জিম্মিদের ফেরত পাওয়ার পর থেকেই যেন পুরোনো রূপে ফিরে গেছে ইসরায়েল—অবরোধ, হামলা ও মানবিক সংকটের চক্রে ফের বন্দি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গাজায়।

ইসরায়েল জাতিসংঘকে জানিয়েছে, বুধবার থেকে তারা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেবে—যা আগের অনুমোদিত সংখ্যার অর্ধেক।

জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থা ওসিএইচএ-র মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা ইসরায়েলি সামরিক দপ্তর সিওজিএটি থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বার্তা পেয়েছেন।

সিওজিএটি জানিয়েছে, মানবিক অবকাঠামোর প্রয়োজনে নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কোনো জ্বালানি বা গ্যাস গাজায় প্রবেশ করতে পারবে না।

জাতিসংঘের হিসেবে, গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন ত্রাণ। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, “ত্রিশো ট্রাক একেবারেই যথেষ্ট নয়। এটি দুর্ভিক্ষে জর্জরিত গাজার বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারবে না।”

রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।

চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, গাজা সিটিতে ছয়জন এবং খান ইউনিসে তিনজন নিহত হয়েছেন। আল-আহলি আরব হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা পাঁচজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, উত্তর গাজায় সেনাদের ওপর হুমকি তৈরি করেছিল এমন কয়েকজনের দিকেই গুলি ছোড়া হয়েছে।

অস্ত্রবিরতির পর এই হামলাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে—পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ঘোষিত এই অস্ত্রবিরতির লক্ষ্য ছিল গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে সংঘাত প্রশমিত করা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই গাজা ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে।

অস্ত্রবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময় করেছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন, আর গাজা থেকে ২০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

তবে হামাস ২৮ জন নিহত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রথমে মাত্র চারটি কফিন হস্তান্তর করে।

পরের দিন আরও চারটি মরদেহ ফেরত দেয়, যা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস গ্রহণ করে পরে ইসরায়েলে পাঠানো হয়। এই বিলম্ব নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযোগ, হামাস অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে।

ট্রাম্পও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে তিনি লিখেছেন, “প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মৃতদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয় ধাপ এখন শুরু হবে।”

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বহু স্থান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় কিছু মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৯১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একযোগে আহ্বান জানিয়েছে—সব সীমান্ত খুলে দিয়ে আরও বেশি সহায়তা পাঠানোর জন্য।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, তাদের ১ হাজার ৩৭০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। সংস্থার মুখপাত্র রিকাদো পিরেস বলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করানো। বাস্তবে আমরা তার কাছাকাছিও নেই।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ সতর্ক করে বলেছেন, “হাসপাতালগুলো ভয়াবহ চাপে আছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত পাঠানো না গেলে, অবশিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকতে পারবে না।”

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় এখনও হত্যাকাণ্ড, জিম্মিদের ফেরত পেয়ে ‘পুরোনো রূপে’  ইসরায়েল

আপডেট সময় : ১১:৫১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় আবারও জ্বলছে সহিংসতার আগুন। সদ্য ঘোষিত অস্ত্রবিরতির মাত্র চার দিন পরই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

একই সঙ্গে ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জীবিত জিম্মিদের ফেরত পাওয়ার পর থেকেই যেন পুরোনো রূপে ফিরে গেছে ইসরায়েল—অবরোধ, হামলা ও মানবিক সংকটের চক্রে ফের বন্দি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গাজায়।

ইসরায়েল জাতিসংঘকে জানিয়েছে, বুধবার থেকে তারা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেবে—যা আগের অনুমোদিত সংখ্যার অর্ধেক।

জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থা ওসিএইচএ-র মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা ইসরায়েলি সামরিক দপ্তর সিওজিএটি থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বার্তা পেয়েছেন।

সিওজিএটি জানিয়েছে, মানবিক অবকাঠামোর প্রয়োজনে নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কোনো জ্বালানি বা গ্যাস গাজায় প্রবেশ করতে পারবে না।

জাতিসংঘের হিসেবে, গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন ত্রাণ। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, “ত্রিশো ট্রাক একেবারেই যথেষ্ট নয়। এটি দুর্ভিক্ষে জর্জরিত গাজার বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারবে না।”

রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।

চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, গাজা সিটিতে ছয়জন এবং খান ইউনিসে তিনজন নিহত হয়েছেন। আল-আহলি আরব হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা পাঁচজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, উত্তর গাজায় সেনাদের ওপর হুমকি তৈরি করেছিল এমন কয়েকজনের দিকেই গুলি ছোড়া হয়েছে।

অস্ত্রবিরতির পর এই হামলাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে—পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ঘোষিত এই অস্ত্রবিরতির লক্ষ্য ছিল গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে সংঘাত প্রশমিত করা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই গাজা ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে।

অস্ত্রবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময় করেছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন, আর গাজা থেকে ২০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

তবে হামাস ২৮ জন নিহত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রথমে মাত্র চারটি কফিন হস্তান্তর করে।

পরের দিন আরও চারটি মরদেহ ফেরত দেয়, যা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস গ্রহণ করে পরে ইসরায়েলে পাঠানো হয়। এই বিলম্ব নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযোগ, হামাস অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে।

ট্রাম্পও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে তিনি লিখেছেন, “প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মৃতদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয় ধাপ এখন শুরু হবে।”

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বহু স্থান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় কিছু মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৯১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একযোগে আহ্বান জানিয়েছে—সব সীমান্ত খুলে দিয়ে আরও বেশি সহায়তা পাঠানোর জন্য।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, তাদের ১ হাজার ৩৭০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। সংস্থার মুখপাত্র রিকাদো পিরেস বলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করানো। বাস্তবে আমরা তার কাছাকাছিও নেই।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ সতর্ক করে বলেছেন, “হাসপাতালগুলো ভয়াবহ চাপে আছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত পাঠানো না গেলে, অবশিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকতে পারবে না।”