ঢাকা ০৮:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

কে জিতল—ভারত, না পাকিস্তান?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / 272
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বলা হয়ে থাকে, বিজয়ের বহু অভিভাবক থাকলেও পরাজয় থাকে নির্ভরহীন, যেন এক অসহায় এতিম। সম্প্রতি পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া স্বল্পস্থায়ী কিন্তু তীব্র সংঘাতের পর দুই পক্ষের আচরণ দেখে এ কথাটিই আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় দেশই নিজেদের বিজয়ী হিসেবে তুলে ধরতে ব্যস্ত, কিন্তু পরাজয়ের দায় কেউই নিচ্ছে না।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ভেসে ওঠে একটাই ঘোষণা—‘পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে’। একইসঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের প্রতিক্রিয়ায় চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’ পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।

অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই ইসলামাবাদের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে তারা বিজয় উদযাপন করে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী এক অনন্য সামরিক ইতিহাস রচনা করেছে। ভারতের আগ্রাসনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের যুদ্ধবিমান যেভাবে তাদের থামিয়ে দিয়েছে, তা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়।”

পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের বিমানবাহিনী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফরাসি নির্মিত রাফাল জেট।

ঠিক একই সময়ে, সিএনএন জানায়—ভারতের দুটি রাজ্যে দেশটির দুটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ফরাসি গোয়েন্দা সূত্রও নিশ্চিত করে, অন্তত একটি রাফাল পাকিস্তানের হামলায় ধ্বংস হয়েছে।

যদিও ভারত এই ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি, তবে তারা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে পাকিস্তানের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির রানওয়ে ও রাডার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, এসব ঘাঁটি তাদের অভিযানে ধ্বংস হয়েছে।

দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব সংঘাতের ফলাফল নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ব্যাখ্যা করলেও, সিএনএনের আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক ম্যাথিউ চান্স মনে করেন, এই সংঘাতে কেউই স্পষ্টভাবে বিজয়ী নয়।

তাছাড়া, যুদ্ধবিরতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা থাকলেও এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থানে রয়েছে স্পষ্ট পার্থক্য। যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্স দুই দেশকেই সংযত থাকার আহ্বান জানান।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা পরে যুক্তরাষ্ট্রকে কৃতজ্ঞতা জানালেও ভারতীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে নীরব থাকে। তারা দাবি করে, দুই দেশ সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে।

সাংবাদিক ম্যাথিউ চান্স মনে করেন, ভারতের এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে জাতীয় অহংবোধ। কাশ্মীর ইস্যুতে বাইরের কারও মধ্যস্থতা ভারত একেবারেই পছন্দ করে না। তাদের মতে, এটি একটি দ্বিপক্ষীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার সমাধানও করতে হবে ভারত ও পাকিস্তানকেই।

এই মনোভাব থেকেই ভারত যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা স্বীকার করতে চায় না বলে মন্তব্য করেন চান্স।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব কূটনৈতিক সূক্ষ্মতা নিয়ে ভাবছেন না। যুদ্ধবিরতির দ্রুত প্রতিক্রিয়া পেয়ে তিনি উৎসাহিত হয়ে কাশ্মীর সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

পাকিস্তান দ্রুত এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, ভারত এ বিষয়ে নিশ্চুপ থেকেছে। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের উদারহস্ত প্রস্তাব যেন তারা শুনেও শুনেনি।

চান্সের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাব একটি কঠিন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় পাওয়া এই যুদ্ধবিরতি আসলে তাৎক্ষণিক একটি সমাধান মাত্র—যেমন কাটা ঘায়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া।

কিন্তু কাশ্মীর সংকট এক দিনের নয়, বরং বহু দশকের পুরনো। তাই সাময়িক ব্যবস্থায় এর স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কে জিতল—ভারত, না পাকিস্তান?

আপডেট সময় : ১০:০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

বলা হয়ে থাকে, বিজয়ের বহু অভিভাবক থাকলেও পরাজয় থাকে নির্ভরহীন, যেন এক অসহায় এতিম। সম্প্রতি পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া স্বল্পস্থায়ী কিন্তু তীব্র সংঘাতের পর দুই পক্ষের আচরণ দেখে এ কথাটিই আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় দেশই নিজেদের বিজয়ী হিসেবে তুলে ধরতে ব্যস্ত, কিন্তু পরাজয়ের দায় কেউই নিচ্ছে না।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ভেসে ওঠে একটাই ঘোষণা—‘পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে’। একইসঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের প্রতিক্রিয়ায় চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’ পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।

অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই ইসলামাবাদের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে তারা বিজয় উদযাপন করে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী এক অনন্য সামরিক ইতিহাস রচনা করেছে। ভারতের আগ্রাসনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের যুদ্ধবিমান যেভাবে তাদের থামিয়ে দিয়েছে, তা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়।”

পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের বিমানবাহিনী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফরাসি নির্মিত রাফাল জেট।

ঠিক একই সময়ে, সিএনএন জানায়—ভারতের দুটি রাজ্যে দেশটির দুটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ফরাসি গোয়েন্দা সূত্রও নিশ্চিত করে, অন্তত একটি রাফাল পাকিস্তানের হামলায় ধ্বংস হয়েছে।

যদিও ভারত এই ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি, তবে তারা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে পাকিস্তানের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির রানওয়ে ও রাডার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, এসব ঘাঁটি তাদের অভিযানে ধ্বংস হয়েছে।

দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব সংঘাতের ফলাফল নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ব্যাখ্যা করলেও, সিএনএনের আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক ম্যাথিউ চান্স মনে করেন, এই সংঘাতে কেউই স্পষ্টভাবে বিজয়ী নয়।

তাছাড়া, যুদ্ধবিরতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা থাকলেও এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থানে রয়েছে স্পষ্ট পার্থক্য। যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্স দুই দেশকেই সংযত থাকার আহ্বান জানান।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা পরে যুক্তরাষ্ট্রকে কৃতজ্ঞতা জানালেও ভারতীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে নীরব থাকে। তারা দাবি করে, দুই দেশ সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে।

সাংবাদিক ম্যাথিউ চান্স মনে করেন, ভারতের এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে জাতীয় অহংবোধ। কাশ্মীর ইস্যুতে বাইরের কারও মধ্যস্থতা ভারত একেবারেই পছন্দ করে না। তাদের মতে, এটি একটি দ্বিপক্ষীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার সমাধানও করতে হবে ভারত ও পাকিস্তানকেই।

এই মনোভাব থেকেই ভারত যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা স্বীকার করতে চায় না বলে মন্তব্য করেন চান্স।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব কূটনৈতিক সূক্ষ্মতা নিয়ে ভাবছেন না। যুদ্ধবিরতির দ্রুত প্রতিক্রিয়া পেয়ে তিনি উৎসাহিত হয়ে কাশ্মীর সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

পাকিস্তান দ্রুত এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, ভারত এ বিষয়ে নিশ্চুপ থেকেছে। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের উদারহস্ত প্রস্তাব যেন তারা শুনেও শুনেনি।

চান্সের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাব একটি কঠিন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় পাওয়া এই যুদ্ধবিরতি আসলে তাৎক্ষণিক একটি সমাধান মাত্র—যেমন কাটা ঘায়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া।

কিন্তু কাশ্মীর সংকট এক দিনের নয়, বরং বহু দশকের পুরনো। তাই সাময়িক ব্যবস্থায় এর স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন