কাদের সিদ্দিকীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর, বাসাইলে ১৪৪ ধারা
- আপডেট সময় : ০৩:১২:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 117
টাঙ্গাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাসা ‘সোনার বাংলায়’ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের জেলা সদর সড়কে বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত এ মুক্তিযোদ্ধার বাসায় হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি তানভির আহমেদ। হামলায় ভবনে থাকা দুটি গাড়িসহ বেশকিছু জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এদিকে বাসাইলের কাদেরিয়া বাহিনীর সমাবেশ ঠেকাতে একটি পক্ষ ছাত্র সমাবেশের ব্যানারে পৃথক সমাবেশ আহ্বান করলে প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। শনিবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. আকলিমা বেগম এ আদেশ জারি করেন। রোববার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। কাদেরিয়া বাহিনীর সমাবেশের প্রধান অতিথি কাদের সিদ্দিকী সে সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
কাদের সিদ্দিকীর বাসায় হামলার ব্যাপারে কেয়ারটেকার রাজু মিয়া বলেন, “রাতে স্যার (কাদের সিদ্দিকী) দ্বিতীয় তলায় ঘুমাচ্ছিলেন। এসময় ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত বাসায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা মই দিয়ে বাসার গেইট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে দুইটি গাড়িও ভাঙচুর করে।” এ সময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি। হামলাকারীদের মুখ বাঁধা এবং কয়েকজন হেলমেট পরা ছিল।
এর আগে শনিবার দুপুরে সখীপুর উপজেলার খান মার্কেটে দলের বর্ধিত সভায় সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। পরে তাকে নিজ বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন ও সুস্থ আছেন বলে জানান। তার পর থেকে তিনি নিজ বাসায় বিশ্রামে ছিলেন।
ওসি তানভির আহমেদ বলেন, “হামলার বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দ্রুতই জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে আমি কাজ করছি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছেন না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, “প্রায় ২৬ বছর আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে নিজেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রতিষ্ঠা করেছি। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিকভাবে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের জনগণকে ভালোবাসি ও সম্মান করি।”
শনিবার রাতে তার বাসভবন সোনার বাংলায় হামলার পর রোববার টাঙ্গাইল শহরের কবি নজরুল সরণির (জেলা সদর সড়ক) বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাবেক সংসদ সদস্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমার বাড়ি ভেঙেছে আরও ভাঙুক। বঙ্গবন্ধুর ৩২-এর বাড়িতে গিয়েছিলাম, আমার গাড়ি ভেঙেছিল। আরও ভেঙে যদি দেশে শান্তি স্থাপিত হয়, দেশের কল্যাণ হয়, আমি সব সময় রাজি আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গত রাতে আমার বাড়িতে হামলা করেছে। কারা করেছে জানি না। ১০-১২ জন লোক, তার মধ্যে বেশি বাচ্চা ছিল। ঢিল মেরেছে, গাড়ি ভেঙেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে আমরা এই স্বৈরাচারী মনোভাব আশা করিনি। আওয়ামী লীগ যদি স্বৈরাচার হয়, তাহলে আজকের কর্মকাণ্ডকে আমরা কী বলে অভিহিত করব।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘২৬ বছর হয়েছে নতুন দল করেছি। রাত–দিন সংগ্রাম করেছি। আওয়ামী লীগ আমাদের বহু প্রোগ্রাম করতে দেয়নি। তারপরও যদি সবাইকে আওয়ামী লীগের দোসর বানানো হয়, তা হলে তো আমি মনে করব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ব্যর্থ করার জন্য, ধ্বংস করার জন্য এটা কোনো ষড়যন্ত্র কি না! আমার কাছে মনে হয়, দেশটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য, জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ খুঁজছে। সেই সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকার দিচ্ছে কি না আমি ঠিক বলতে পারব না। আমার মতো মানুষের, যাকে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব দিয়েছে, তার বাড়ি যদি নিরাপদ না থাকে, আমার সাধারণ গরিব–দুঃখী মানুষের বাড়ি নিরাপদ কীভাবে হয়।’
“এ ঘটনায় আমি কোনো দলের নেতাকর্মীকে দোষারোপ করছি না। তবে এ ঘটনায় মামলা করা হবে।”
কাদেরিয়া বাহিনীর সমাবেশ ঠেকাতে কর্মসূচি
টাঙ্গাইলের বাসাইলে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কাদেরিয়া বাহিনীর সমাবেশ আহবান করে গত ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল লিখিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
ছাত্রসমাজের ব্যানারে একইস্থানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ৫ সেপ্টেম্বর লিখিত আবেদন করেন ছাত্র নেতৃবৃন্দের পক্ষে রনি মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তবে রনি মিয়ার মোবাইল নম্বর ও পুরো ঠিকানা আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। সমাবেশটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারবিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধি আয়োজন করে। সমাবেশে অতিথি হিসেবে কে থাকবেন বিষয়টি আবেদনে বলা হয়নি।
দুই পক্ষের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পৌর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করার চেষ্টা করবে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে সমাবেশ করতে না পারলে পৌর এলাকার আশপাশে সমাবেশ করবে মুক্তিযোদ্ধারা। একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।


















