কত দিনের জন্য মেয়র হচ্ছেন ইশরাক, ১ সপ্তাহ, নাকি নির্বাচন পর্যন্ত?
- আপডেট সময় : ১২:৫৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
- / 260

পাঁচ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে আদালতের রায়ে মেয়র নির্বাচিত হন ইশরাক হোসেন। কিন্তু তখনও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তার দায়িত্ব পালনের জন্য হাতে ছিল প্রায় দুই মাস। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট প্রকাশ ও একটি রিট মামলার প্রেক্ষিতে আট সপ্তাহ কেটে যায়।
এখন শপথ নিলে ইশরাক মাত্র এক সপ্তাহ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। তবুও কেন তিনি আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও আন্দোলনে নামলেন?
এই প্রশ্নে ইশরাকের প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে বুধবার রাতে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা বা একটি পদ দখলের জন্য নয়। বরং এটি নির্ধারণ করে দেবে—এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা একটি নির্বাচন দেখতে পাব কি না, যেখানে জনগণ ভোটের মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।”
তার অভিযোগ, মেয়র নির্বাচনের রায় ঘোষণার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভেতর থেকে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। একই ঘটনা জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘটার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “আজকে নির্বাচন কমিশনকে কার্যত জিম্মি করা হয়েছে, পুরো আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। একজন মেয়র প্রার্থীর সঙ্গেই যদি এমন আচরণ করা হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ হবে, তা বোঝাই যায়।”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে ইশরাক প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২৭ এপ্রিল ইসি এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে। তবে ১৪ মে হাইকোর্টে একটি রিট করে তার শপথ ঠেকানোর চেষ্টা হয়।
ওই দিন থেকেই ইশরাকের সমর্থকরা তার শপথের দাবিতে নগর ভবনে অবস্থান শুরু করেন, ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনগত জটিলতার কথা বলে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে বিরত থাকে।
এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ ইশরাক ফেসবুকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন, সমর্থকরাও সেই দাবি তোলেন। পরে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট রিট খারিজ করে দেয়। এরপর বিকেলে আন্দোলন স্থগিত করে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে শপথ আয়োজনের আল্টিমেটাম দেন ইশরাক।
শুক্রবার সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “শপথ একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। জনতার মেয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব রয়েছে—আসন্ন কোরবানির ঈদের আগেই যেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। উত্তরে মেয়র না আসা পর্যন্ত আমি প্রশাসন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সহযোগিতা করব। দক্ষিণে সাবেক কাউন্সিলর ও প্রার্থীদের সমন্বয়ে জোনভিত্তিক মনিটরিং টিম অনুমোদন দেব।”
ইশরাকের মেয়াদ কতদিন?
ইশরাকের শপথ ঠেকাতে দাখিল করা রিট খারিজ হলেও আপিল করার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী। meanwhile, মেয়াদ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে লিখেছেন, মেয়াদ বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে—তিনি আসলে কতদিন মেয়র থাকবেন তা স্পষ্ট নয়।
সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার জানান, “শপথের তারিখের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। সিটি করপোরেশনের মেয়াদ সাধারণত নির্বাচনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। সে হিসেবে যতদিন মেয়াদ অবশিষ্ট থাকে, ইশরাকও ততদিন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”
আইন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তাপস প্রথম সভা করেন ২ জুন। ফলে করপোরেশনের মেয়াদ চলতি বছরের ১ জুন পর্যন্ত। সে হিসেবে যদি ইশরাক ২৪ মে শপথ নেন, তবে তার কার্যকাল হবে মাত্র আট দিন।
সাবেক সচিব মজুমদার মনে করেন, এ সময়ের মধ্যেই শপথ হলে মেয়াদের বিষয়টি নিয়ে সরকার নির্বাহী আদেশ দিতে পারে। বলেন, “সরকার চাইলে বাকি সময় প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে, এটি তাদের বিবেচনার বিষয়।”
তবে ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “যদিও কাগজে-কলমে মেয়াদ ৯ দিন, তবে শপথ হলে পরবর্তী মেয়র না আসা পর্যন্ত তিনিই মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।”
খোকনের ভাষায়, “২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ হয়েছে, তাই ২৬ মে’র মধ্যে শপথ করানো বাধ্যতামূলক। তা না হলে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠতে পারে।”
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে মেয়রের পদ শূন্য হয়। আবার ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ইশরাকের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ২০০২ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সিটি নির্বাচন কবে হবে?
বর্তমানে দেশে ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে, যার মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সালের পর থেকে বেশিরভাগ সিটিতে মেয়র পদ ফাঁকা রয়েছে।
গত ১৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকার মেয়রসহ সকল সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। বর্তমানে চট্টগ্রামে বিএনপির শাহাদাত হোসেন ও ঢাকা দক্ষিণে ইশরাক আদালতের রায়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ৩৪(১)(খ) ধারা অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সিটি নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোনো অনুরোধপত্র পায়নি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “নির্বাচনের সময় নির্ধারণ ইসির হাতে নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নির্বাচন আগে হবে।”


















