ওমান প্রবাসী ৭ মরদেহ নিয়ে সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালু
- আপডেট সময় : ০৫:০৩:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
- / 108
গত ৮ অক্টোবর ওমানের সড়ক দুর্ঘটনায় সন্দ্বীপের সাত প্রবাসী নিহত হন। গতকাল রাতে নিহতদের লাশ সন্দ্বীপে পৌঁছায়। এই সাত প্রবাসীর লাশ পরিবহনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে চালু হল লাশবাহী স্পিডবোট। সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালু হচ্ছে—নিজের ফেসবুক আইডিতে এমন খবর শেয়ার করে স্বস্তি জানিয়েছিলেন প্রবাসী মোহাম্মদ আমীন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) সেই স্পিডবোটের প্রথম যাত্রা হয় তাঁর নিজের লাশ বহন করে। আজ রোববার সকালে জানাজা শেষে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রবাসী মোহাম্মদ আমীন সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী কব্বরের ছেলে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগে তিনি ফেসবুকে লাশবাহী স্পিডবোট চালুর খবরটি দিয়েছিলেন। ঘরে তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। আলী কব্বর জানান, কিছুদিন পর দেশে ফিরে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করার কথা ছিল আমীনের।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) ও মোশারফ হোসেন (২৬)। তাঁরা সবাই ওমানের সাগরে মাছ ধরার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। স্বজনদের বরাতে জানা যায়, ৮ অক্টোবর ওমানের ধুকুম প্রদেশের সিদরা এলাকায় তাঁদের বহনকারী গাড়ির সঙ্গে অপর এক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তাঁরা প্রাণ হারান।
নিহত মো. সাহাবুদ্দিনের পরিবারে আছেন মা–বাবা, স্ত্রী ও চার মাস বয়সী এক সন্তান। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনার আশায় তিনি বিদেশ গিয়েছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতেন। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘মধ্যবিত্ত মানে হাজারটা স্বপ্ন, কিন্তু দিন শেষে ভাগ্যের খাতাটা শূন্য।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তাঁদের অধিকাংশের বাড়ি ভাঙা টিনের ঘর। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনেরই সন্তান বয়সে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে।
গতকাল রাত ৯টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিহতদের লাশ গ্রহণ করেন স্বজনেরা। সকাল আটটায় পূর্বনির্ধারিত জানাজার স্থান সন্দ্বীপের পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চবিদ্যালয়ে পৌঁছায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স। সেখানে জড়ো হন হাজারো মানুষ।
লাশ পৌঁছানোর খবর পেয়ে সকাল থেকেই স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। সাতটি কফিন একসঙ্গে দেখে আশপাশের মানুষও চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি।
জানাজায় অংশ নেওয়া মুছাপুর ইউনিয়নের ৭২ বছর বয়সী আবদুল হাই বলেন, ‘নিহতরা আমার আত্মীয় নয়, কিন্তু ওরা আমার সন্তান। সাতটা কফিনে সাতটা ছেলের লাশ—এমন দৃশ্য যেন আর না দেখতে হয়। সহ্য করা যায় না, এমনটা আর চাই না।’
দাফনের পর নিহত প্রবাসী সাহাবুদ্দিনের পিতা মো. সিদ্দিক বলেন, ‘আমার জীবন তো শেষ হইবই, কিন্তু আমার সাহাবুদ্দিনের চার মাস বয়সী মেয়েটার কী হইব? ছেলেরে হারানোর শোকের মধ্যে ছোট্ট নাতিনটার ভবিষ্যতের কথা ভাবলেই বুকটা ফেটে যায়।’

















