এনসিপি লক্ষ্য ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা : ভারতপন্থি-পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির ঠাঁই হবে না
নতুন দলের উদ্বোধনে কে কী বললেন
- আপডেট সময় : ১০:০৮:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 250

জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভে জন্ম নেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তারা সামনের কথা বলতে চান, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চান।
অতীতে বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে ‘দুর্বল করে রাখার চেষ্টা’ হয়েছে মন্তব্য করে সেই পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ নেতা।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকালে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।
এনসিপির আংশিক কমিটি ঘোষণার পর সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি ঘোষণাপত্র পড়ে শোনান নাহিদ। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, বাংলাদেশে যে বিভাজনের রাজনীতি তৈরি করে বাংলাদেশের জনগণকে দুর্বল করে রেখে, রাষ্ট্রকে দুর্বল করে রাখার যে ষড়যন্ত্র তৈরি হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্র আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সকলের ঐক্যের মাধ্যমে ভেঙে দিয়েছি।
“আমরা আজকের এই মঞ্চ থেকে শপথ করতে চাই, বাংলাদেশকে আর কখনও বিভাজিত করা যাবে না। বাংলাদেশে ভারতপন্থি-পাকিস্তানপন্থি কোনো রাজনীতির ঠাঁই হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আজকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সামনের কথা বলতে চাই। আমরা পেছনের কথাকে অতিক্রম করে একটি সামনের সম্ভাবনার বাংলাদেশের, স্বপ্নের কথা বলতে চাই।
“সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে স্লোগান উঠেছিল, ‘তুমি কে আমি কে, বিকল্প বিকল্প’। আজকে সেই বিকল্পের জায়গা থেকে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘেটেছে।”
এরপর নতুন দলের ঘোষণাপত্র পড়ে শোনান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নাম লেখানো নাহিদ ইসলাম।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
“কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে— এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি।
“বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।”
নাহিদ বলেন, জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের পতন ঘটিয়েছে।
“কিন্তু আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিলে, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়।”
সেই লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে দলটির আহ্বায়ক বলেন, “এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।”
নাহিদ বক্তৃতা শুরুর আগে মঞ্চের ঘোষক তাকে বিভিন্ন অভিধায় অভিহিত করেন। তার একটি ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ইমাম’।
বক্তৃতার এক পর্যায়ে নাহিদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সূচনা।

“একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদেরকে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।
“আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্য দিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব।”
তিনি বলেন, নাগরিক পার্টি এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চায়, যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ‘বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার’ মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান সেই রাজনীতিতে হবে না।
“আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। তাদের সকল ধরনের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী সুরক্ষাই হবে আমাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই।
“আমাদের রিপাবলিক সকল নাগরিককে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকেই অপরায়ন করা হবে না। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।”
একটি ‘ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক’ সমাজ প্রতিষ্ঠায় নাগরিক পার্টির সংকল্প ঘোষণাপত্রে তুলে ধরেন দলের আহ্বায়ক।
তিনি বলেন, “চলুন আমরা একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে, এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারের সংগ্রামই হবে রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য। যেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই সময়—নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন পথচলার, এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার!”

অভ্যুত্থানের নায়করা নতুন দলের মঞ্চে
বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এনসিপি’র আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে। প্রথমে কোরআন তেলাওয়াত, এরপর একে একে পাঠ করা হয় গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে। তারপর পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত।
এর মধ্যে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা সমর্থকদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশের নির্ধারিত অংশের বাইরে দক্ষিণ প্লাজার সামনের অংশে খামারবাড়ি পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কেই অবস্থান রয়েছে মানুষের।
জাতীয় সংগীতের পর চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করা হয়।
বক্তৃতা পর্বের শুরুতে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন, “এই তরুণদের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ গত ৫৩ বছরে মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় নাই, সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, “নাগরিক পার্টি মনে করে, শহীদ ও আহতদের স্পিরিট ধারণ করে কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে আমরা এক থাকব।”
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহরিয়ার হাসনাত অপু বক্তব্য দেন। এরপর মঞ্চের ডাকা হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের। একে একে মঞ্চে আসেন নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনসহ নেতারা। তারপর দেখানো হয় জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত আরেকটি ডকুমেন্টারি।
মঞ্চের সামনেই রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।এরপরেই শহীদ পরিবার, জুলাই যোদ্ধা পরিবারের জন্য আসন।
দুপুরে জুমার নামাজের পর থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হতে দেখা যায় ছাত্র-জনতাকে। এ সময় মঞ্চের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল- কোন কোন এলাকা থেকে কার নেতৃত্বে মিছিল আসছে।
নতুন দলের কাছে আমার দেশ যেন নিরাপদ থাকে: শহীদ জাবিরের বাবা
অধিকার আদায়ের জন্য মাঠে নামা মানুষের ওপর যেন আর রক্তপাত না হয়, নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির কাছে সেই প্রত্যাশা রাখলেন জুলাই শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা নওশের আলী।
নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “এই দেশে ১৯৭১ সালে যেভাবে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেই রক্তক্ষরণ আমরা চাই না। নব্বইয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেই রক্তক্ষরণ আমরা আর চাই না। এই চব্বিশে রক্তক্ষরণ হয়েছে, জুলাই বিপ্লবে, সেই রক্তক্ষরণ আমরা চাই না।”
দলটির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা থাকবে, সমর্থন থাকবে তারা যেন নতুন বাংলাদেশ উপহার দেয়। আমি চাই, আমার দেশ যেন এই দলের কাছে নিরাপদ থাকে। এই দল আরও ভালো করবে। এই দলের প্রতি আমাদের, বিশেষ করে এই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই।”
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের মধ্যে থেকে জাবির ইব্রাহিমের বাবা নওশের আলী বক্তব্য দেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের উদাহরণ টেনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘সিরিয়াল কিলার’ অভিহিত করেন তিনি।
নওশের আলী বলেন, “আমার পরিচয়, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে ছোট যে শিশু, ছয় বছরের সেই জাবির ইব্রাহিমের বাবা। আমার জাবির, এই শিশুটি বাংলাদেশে নিরাপত্তায় ছিল না।”
নওশের আলীর বক্তব্যের সময় গোপালগঞ্জ থেকে অনুষ্ঠানস্থলে একটি মিছিল আসার ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানের ঘোষক। তিনি বলেন, “প্রিয় উপস্থিতি আমাদের মাঝে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন আমাদের গোপালগঞ্জের সহযোদ্ধারা। করতালি দিয়ে স্বাগত জানাই।
“আমরা বলতে চাই, এই গোপালগঞ্জ শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ নয়, এই গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবের গোপালগঞ্জ নয়, এই গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের গোপালগঞ্জ নয়। এই গোপালগঞ্জ শহীদ আবু সাঈদদের গোপালগঞ্জ। জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট নিয়ে গোপালগঞ্জ এগিয়ে যাবে মুজিববাদের কবর রচনার করার মাধ্যমে।”
দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ‘একতার রাজনীতি’ চালু করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন নতুন আত্মপ্রকাশ করা ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির’ (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।
দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এ দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবর দেওয়া হয়েছে। দেশে কামারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে; কুমারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। দেশে নেতৃত্ব উঠে আসবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। “সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।”
বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ আহ্বায়ক বলেন, “আমরা দীর্ঘ দেড় দশকের আওয়ামী জাহিলিয়াতের শাসনের পরে আজ মুক্ত বাংলাদেশে যে সংসদ ভবনকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছি, সেই সংসদ ভবনে যেতে আজ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দাঁড়িয়েছি।”
হাসনাত বলেন, “লগি-বৈঠা থেকে শুরু করে ২০০৯ সালে দেশে ‘ডিফেন্স অব ফাস্টলাইন’ বিডিআরকে কীভাবে ভারতীয় আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। স্পষ্ট বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ হিসেবে চালানো হয়েছে। শাপলা চত্বরে আমাদের দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ভাইদের ওপর রাতের অন্ধকারে কীভাবে জোনোসাইড চালানো হয়েছে!”
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন দেশে কীভাবে দিনের ভোট রাতে চালু করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে; কীভাবে ডামি ইলেকশন চালু করা হয়েছে। আমরা ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কবর রচনা করেছি। আমরা বলতে চাই, এই সংসদ ভবনে কে যাবে, সেটি নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ থেকে, ভারত থেকে নয়। নির্ধারণ করবে দেশের খেটে খাওয়া জনতা।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘ দেড় দশকের সময়ে আমরা একটা জাতি গড়ে তুলতে পারিনি, বিভাজনের রাজনীতি ইচ্ছাকৃতভাবে জিইয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সুশাসন নিশ্চিত করতে পারিনি, স্বাধীন পুলিশ ও বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব। আমরা এই বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একতার রাজনীতি চালু করব আমরা, স্টেট ডেভেলপ করব।” ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে কারা এলেন?
গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের সামনে রেখে যে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে, তার প্রথম সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত নেতারাও।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল যোগ দেন অনুষ্ঠানে।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আহমেদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী ও নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. দিদারুল আলম অনুষ্ঠানে এসেছেন।
অতিথি হয়ে এসেছেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান ও জেএসডি’র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি আবদুর রব ইউসুফি।
সভাস্থলে ছিলেন-ইসলামী ঐক্য জোটের একাংশের মাওলানা জসিম উদ্দিন ও সাখাওয়াত হোসেন রাজি, ইসলামী ঐক্যজোটের সহ-সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন, বিকল্পধারার কার্যকরী সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল মান্নান, বিকল্প ধারা একাংশের সাবেক মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল।
কূটনীতিবিদদের মধ্যে ঢাকায় ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস রেন্ডাল, পাকিস্তান হাই কমিশনের কাউন্সেলর কামরান ধাঙ্গালও এসেছেন।


















