একসময়ের ফুটবলার এখন ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে
- আপডেট সময় : ০২:১৮:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / 257

আমিনুল ইসলাম বুলবুল সবসময় চাইতেন দেশের ক্রিকেট যেন সঠিক পথে থাকে। আইসিসির চাকুরে হয়েও চিন্তা-ভাবনায় ছিল দেশের ক্রিকেট তথা ক্রীড়াঙ্গন। ছুটির ফাঁকে দেশে ফিরে যখনই স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হতো তখনই ক্রিকেট-ফুটবলসহ ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে উঠতেন। নিজেও খেলা দেখতেন, যেতেন প্রিয় ক্লাব মোহামেডানেও। যেখান থেকে পরিণত হয়েছেন আজকের বুলবুল হিসেবে। এবার ভাগ্যের রেখা এমনই হঠাৎ করেই বদলে গেলো যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বনে গেলেন। ফারুক আহমেদের জায়গায় বুলবুলের নাম। আপাদমস্তক এক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব বুলবুলের ক্যারিয়ার কিন্তু শুরু হয়েছে ফুটবল থেকে!
ঢাকার গেণ্ডারিয়ার স্থানীয় ছেলে বুলবুল ছিলেন ডানপিটে। পড়াশোনার চেয়ে খেলার দিকে তার ঝোক ছিল বেশি। গেণ্ডারিয়া ফেমাসের হয়ে পাইওনিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। এলাকার আরেক ঐতিহ্যবাহী ইস্ট অ্যাণ্ড ক্লাবের হয়ে একপর্যায়ে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ে নাম লেখান তখন। স্ট্রাইকার হয়ে যখন একটু একটু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ভাগ্য অন্য দিকে নিয়ে যায়। চোটের কারণে ফুটবল ছেড়ে চলে যান ক্রিকেট। সেখানেই দ্যুতি ছড়ান। আর আজ তো বিসিবি সভাপতি!
খেলাধুলার প্রতি তার টান এমনই যে ক্যারিয়ারের শুরুতে ফুটবল খেলার টানে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার রেকর্ডও আছে বুলবুলের। অতীত সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি ৫ বছর আগেই বিএসপিএ অফিসে এসে বলেছিলেন, ‘১৯৮৬ সালে ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের অগ্নিপরীক্ষা। রেলিগেশন লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে ম্যাচ ছিল। নটরডেম কলেজে পরীক্ষার সময় বন্ধুরা এসে আমাকে নিয়ে গেলো ম্যাচ খেলার জন্য। তখন পাড়ার ক্লাব ইস্ট অ্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা স্টেডিয়ামে এসে খেলেছি। কিন্তু দলকে রক্ষা করতে পারিনি। তখন আমরা বেশ কেঁদেছিলাম। আমার পরিবার পরবর্তিতে জেনেছিল আমি পরীক্ষায় ফেল করেছি। আসলে আমি সেইসময় অর্থনীতি পরীক্ষাই দেইনি। পরের বছর পাস করি।’
এরপরই পুরোদস্তুর ক্রিকেটার হওয়ার গল্পও শোনান এই সাবেক তারকা। নিজের অতীত ক্যারিয়ার নিয়ে বলেন, ‘ভিক্টোরিয়ার হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে খেলার সময় লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। তখন ফুটবল ছেড়ে পুরোপুরি ক্রিকেটে মনোযোগ দেই। সেই যে ১৯৮৭ সালে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়ালাম, এখনও আছি।’
ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে বুলবুল ওয়ানডে ও টেস্ট খেলেছেন, করেছেন অধিনায়কত্বও। ১৯৮৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ৩৯টি ওয়ানডে খেলে তিন হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ৭৯৪। টেস্ট খেলেছেন ১৩টি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান সাবেক এই ব্যাটার। ২০০২ সালে শেষ টেস্ট খেলার আগে ২৬ ইনিংসে করেন ৫৩০ রান। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে দুটি হাফ সেঞ্চুরিও। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ওয়ানডে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুলবুল। তার নেতৃত্বে ১৬ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে দুটি।
খেলা ছেড়ে কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেন। দেশের ক্লাবে কোচিংয়ের পর আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হয়ে কাজ করেন। অস্ট্রেলিয়াতে থিুত হওয়া বুলবুল ছুটিতে দেশে ফিরলেই ঢাকা স্টেডিয়াম, ক্রীড়া সাংবাদিকদের অফিস ও তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডানে এক পা দেবেনই। আপাদমস্তক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব বুলবুলের হাতে দেশের ক্রিকেটের ব্যাটন।
টালমাটাল ক্রিকেটকে অল্পসময়ে কতটুকু উজ্জ্বল আলোয় আনতে পারেন তা এখন দেখার বিষয়।


















