ঢাকা ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি কমান্ডার ও বিজ্ঞানীরা কতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৬:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
  • / 228
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি ও কিছু বেসামরিক স্থাপনা।

এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তেহরান।

এরপর রাতে ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এ হামলায় এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত এবং আনুমানিক ৬৩ জন আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে তারা ইরানে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে।

অন্যদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, শুক্রবারের হামলার জন্য ইসরায়েলকে ‘কঠিন শাস্তি’ ভোগ করতে হবে।


কারা ছিলেন নিহত ইরানি সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা?

এই সামরিক অভিযানকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ হিসেবে অভিহিত করেছে ইসরায়েল।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি)–সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় পরমাণু কার্যক্রমে যুক্ত কমপক্ষে ছয়জন বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি, শিশুসহ বহু বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

নিহত হাই-প্রোফাইল কমান্ডারদের পরিচয় নিচে দেওয়া হলো:


মোহাম্মদ বাঘেরি

ইরানের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। রেভল্যুশনারি গার্ডস ও সেনাবাহিনী—উভয় বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৮০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি আইআরজিসিতে যোগ দেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তার এবং ভাইয়ের নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছিল বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ।

তাকে তুলনামূলকভাবে কম কট্টরপন্থী মনে করা হতো। গত এপ্রিলে তিনি শান্তির পক্ষে বক্তব্য রাখায় কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আব্দোলরাহিম মৌসাভি।


হোসেইন সালামি

রেভল্যুশনারি গার্ডসের কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন সালামি। তিনিও ১৯৮০ সালে যুদ্ধের সময় বাহিনীতে যোগ দেন।

২০০৯ সালে ডেপুটি কমান্ডার ও ২০১৯ সালে প্রধান হন। বক্তৃতায় তিনি ছিলেন প্রভাবশালী এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।

এক মাস আগে এক ভাষণে বলেছিলেন, “ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করলে তাদের জন্য ‘নরকের দরজা’ খুলে যাবে।”

তার স্থানে আইআরজিসির নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মাদ পাকপোর।


গোলামালি রাশিদ

আইআরজিসির খাতাম-আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ছিলেন তিনি। এই ইউনিট আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের সমন্বয় করত।

ইরান-ইরাক যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার পর তিনি সেনাবাহিনীর উপপ্রধানের দায়িত্বও পালন করেন।

তার স্থানে নিয়োগ পেয়েছেন আলি সাদমানি।


আমির আলি হাজিযাদেহ

আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্সের প্রধান ছিলেন। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন।

আইডিএফের দাবি অনুযায়ী, তিনি ও অন্য কয়েকজন কমান্ডার মাটির নিচে একটি ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন এবং সেখান থেকেই ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা হচ্ছিল।

২০২০ সালে ইউক্রেনিয়ান বিমান ভূপাতিত হওয়ার দায় স্বীকার করেছিলেন হাজিযাদেহ, যেখানে ১৭৬ জন মারা যান। এরপর থেকে তার জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন হয়।


ফেরেইদুন আব্বাসি

২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি। পরে সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন। মে মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন।


আরও যারা মারা গেছেন

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আরও কয়েকজন পরিচিত পরমাণু বিজ্ঞানী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন:

  • মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি – তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান

  • আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর – শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান

  • আহমেদ রেজা জোলফাঘারি – একই বিভাগের অধ্যাপক

  • আমিরহোসেইন ফেকহি – নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি কমান্ডার ও বিজ্ঞানীরা কতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন?

আপডেট সময় : ০৩:৪৬:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি ও কিছু বেসামরিক স্থাপনা।

এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তেহরান।

এরপর রাতে ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এ হামলায় এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত এবং আনুমানিক ৬৩ জন আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে তারা ইরানে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে।

অন্যদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, শুক্রবারের হামলার জন্য ইসরায়েলকে ‘কঠিন শাস্তি’ ভোগ করতে হবে।


কারা ছিলেন নিহত ইরানি সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা?

এই সামরিক অভিযানকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ হিসেবে অভিহিত করেছে ইসরায়েল।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি)–সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় পরমাণু কার্যক্রমে যুক্ত কমপক্ষে ছয়জন বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি, শিশুসহ বহু বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

নিহত হাই-প্রোফাইল কমান্ডারদের পরিচয় নিচে দেওয়া হলো:


মোহাম্মদ বাঘেরি

ইরানের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। রেভল্যুশনারি গার্ডস ও সেনাবাহিনী—উভয় বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৮০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি আইআরজিসিতে যোগ দেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তার এবং ভাইয়ের নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছিল বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ।

তাকে তুলনামূলকভাবে কম কট্টরপন্থী মনে করা হতো। গত এপ্রিলে তিনি শান্তির পক্ষে বক্তব্য রাখায় কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আব্দোলরাহিম মৌসাভি।


হোসেইন সালামি

রেভল্যুশনারি গার্ডসের কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন সালামি। তিনিও ১৯৮০ সালে যুদ্ধের সময় বাহিনীতে যোগ দেন।

২০০৯ সালে ডেপুটি কমান্ডার ও ২০১৯ সালে প্রধান হন। বক্তৃতায় তিনি ছিলেন প্রভাবশালী এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।

এক মাস আগে এক ভাষণে বলেছিলেন, “ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করলে তাদের জন্য ‘নরকের দরজা’ খুলে যাবে।”

তার স্থানে আইআরজিসির নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মাদ পাকপোর।


গোলামালি রাশিদ

আইআরজিসির খাতাম-আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ছিলেন তিনি। এই ইউনিট আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের সমন্বয় করত।

ইরান-ইরাক যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার পর তিনি সেনাবাহিনীর উপপ্রধানের দায়িত্বও পালন করেন।

তার স্থানে নিয়োগ পেয়েছেন আলি সাদমানি।


আমির আলি হাজিযাদেহ

আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্সের প্রধান ছিলেন। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন।

আইডিএফের দাবি অনুযায়ী, তিনি ও অন্য কয়েকজন কমান্ডার মাটির নিচে একটি ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন এবং সেখান থেকেই ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা হচ্ছিল।

২০২০ সালে ইউক্রেনিয়ান বিমান ভূপাতিত হওয়ার দায় স্বীকার করেছিলেন হাজিযাদেহ, যেখানে ১৭৬ জন মারা যান। এরপর থেকে তার জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন হয়।


ফেরেইদুন আব্বাসি

২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি। পরে সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন। মে মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন।


আরও যারা মারা গেছেন

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আরও কয়েকজন পরিচিত পরমাণু বিজ্ঞানী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন:

  • মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি – তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান

  • আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর – শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান

  • আহমেদ রেজা জোলফাঘারি – একই বিভাগের অধ্যাপক

  • আমিরহোসেইন ফেকহি – নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক