ইসরায়েল ধ্বংসের দিন গুণে যাচ্ছে যে ‘ঘড়ি’
- আপডেট সময় : ১০:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
- / 240

তেহরানের ব্যস্ততম এলাকা ফিলিস্তিন স্কয়ার। ইসরায়েল ধ্বংসের দিন গুনে যাওয়া এক কাউন্টডাউন ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছে এখানে। কাউন্টডাউন ঘড়িটি চালু হয়েছে সেই ২০১৫ সালে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি যেদিন ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, “আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ইসরায়েল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে”, ঠিক তার পরই এই কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হয়।
ঘড়িটি কেবলই ‘ঘড়ি’ নয়, এটি মূলত ইরান এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র হামাস এবং হিজবুল্লাহর পক্ষে এক প্রতীকী প্রতিরোধী বার্তা। এই ঘড়ির মাধ্যমে ইরান সরকার আন্তর্জাতিক বিশ্বকে একটি বার্তাই দিতে চায়, আর তা হলো- ইসরায়েলের পতন অবশ্যম্ভাবী। আর এই পতনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইরান।
ভবিষ্যদ্বাণী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান সরকারের এক কৌশলগত সমর হাতিয়ার এই ঘড়ি। কারণ এই ঘড়ি ইরানের জনগণকে বিশ্বাস করায়- ইসরায়েলের ধ্বংস অনিবার্য। আর ইসরায়েল আর তার মিত্রদের ফেলে দেয় এক মনস্তাত্ত্বিক চাপে।
ঘড়িটি চালুও করা হয় এমন এক সময় যখন ইরান পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছিল। একদিকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আলোচনা আর অন্যদিকে ইসরায়েল ধ্বংসের কাউন্টডাউন ঘড়ি, অর্থ্যাৎ একদিকে কুটনীতি আর অন্যদিকে স্নায়ু যুদ্ধ, দুই দিকেই খেলতে চেয়েছে ইরান।
৭ অক্টোবর
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস এক ভয়াবহ স্থল হামলা চালায় ইসরায়েলের ভূ-খন্ডে। সেদিন বুলডোজার আর ট্রাকটর দিয়ে ইসরায়েলের সীমানা ভেদ করে হামাস ভয়াবহ এক সামরিক অভিযান চালায়। সেই অভিযানে নিহত হয় ইসরায়েলের অসংখ্য বেসামরিক মানুষ। সেদিন হামাস সে দেশের বহু নাগরিককে জিম্মি করে ফিলিস্তিনে নিয়ে আসে। এই হামলার পর ইরানের বহু নেতা আর তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়া দাবি করতে থাকে, এই অভিযান নাকি খামেনেরই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতার এক ঝলক মাত্র।
হামাসের এই অভিযানকে সামরিক বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার ভয়ঙ্কর ভরাডুবি হিসেবেই চিহ্নিত করে। শুধু কি নিরাপত্তা? এই অভিযান, ইসরায়েলের জন্য মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও এক বিশাল ধাক্কা ছিল। এই ঘটনার পর তেহরানের ওই কান্টডাউন বা ডুমসডে ক্লকের দিকে সারাবিশ্বের নজর চলে যায়। তাই, ডুমস ডে ক্লক-কে কেবল প্রোপাগান্ডা নয়, অনেকেই বরং একে মধ্যপ্রাচ্যের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখতে আগ্রহী।
কেবলই প্রতীক নাকি সত্যিকারের হুমকি?
সমালোচকদের মতে, এই ঘড়ি রাজনৈতিক প্রতীক ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা ইরানের তরফে ইসরায়েলের সঙ্গে এক স্নায়ু লড়াইয়ের স্মারক। বাস্তবে ইসরায়েলের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি নাকি এতটাই দৃঢ় যে, কেবল কাউন্টডাউন চালিয়ে তার পতন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবুও, এই ঘড়ি ইরান রাষ্ট্রকে, ইসরায়েলের সঙ্গে তার মিত্র ও তার নিজের লড়াইয়ে মনোবল জোগায়। ইরানের সরকার তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ইসরায়েল বিরোধী প্রতিটি ইভেন্টকে এই ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে মিলিয়ে উদ্যাপন করে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল এই ঘড়িকে কিন্তু হুমকি হিসেবেই নিয়েছে। কিছুদিন আগে ইসরায়েল দাবি করে, তাদের অব্যাহত হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত তিন বছর পিছিয়ে গেছে। এটা স্পষ্ট যে, তেহরানের এই প্রতীকী ঘড়ির বিপরীতে একটি বাস্তব প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টায় আছে তেলআবিব।
ইরানের তরুণ প্রজন্মের প্রতিক্রিয়া
ইরানের তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ এই ঘড়িকে নিছক ইসরায়েল বিরোধী প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই মনে করে না। বিশেষ করে ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাশা আমিনি, ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ কর্তৃক আটক হবার পর মৃত্যুবরণ করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানের তরুণ সমাজ।
“মাশা আমিনি মৃত্যুবরণ করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানের তরুণ সমাজ।” ছবিটি ইরাকের।
এমন সামাজিক বাস্তবতায় সরকারের এই সমস্ত প্রচার কার্যক্রমকে অনেকের কাছেই অপচয় বলে মনে হয়েছে। তাদের মতে, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্বের মতো সংকটের সামনে, ডুমস ডে ক্লক গুরুত্বহীন।
সময় গোনা, নাকি বয়ান নির্মাণ?
তেহরানের ফিলিস্তিন স্কয়ারে স্থাপিত এই ডুমস ডে ঘড়ি শুধুমাত্র একটি ঘড়ি নয়। এটি বরং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল বিরোধী এক বয়ান নির্মাণ করে চলেছে। যে বয়ান জায়নবাদ বিরোধী অগণিত মানুষকে বিশ্বাস করাচ্ছে- একদিন ইসরায়েলের পতন হবেই। আর এই ঘড়ি বেজে চলেছে সেই পতনের সময় রেখা ধরে।
এই ঘড়িটি তাই ইরানের প্রতিরোধ আর জায়নবাদ বিরোধীতার এক সপ্রাণ প্রতীক।
সূত্র: দি গার্ডিয়ান ও নিউ ইয়র্ক পোস্ট
























