ইরানে কত বাংলাদেশি, ফিরবেন কীভাবে?
- আপডেট সময় : ০৭:০৬:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
- / 291

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান চারদিনের সংঘাতে দুই পক্ষের মধ্যে আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ে সামরিক ও বেসামরিক বহু মানুষ হতাহত হচ্ছেন। ইরানে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক এবং ইসরায়েলে প্রায় ২৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা।
কারণ, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু তেহরানেই অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। সেখানে রয়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার, কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী বাংলাদেশি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেহরানের বাইরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিরাপত্তা। তেহরানে থাকা বিপজ্জনক হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়াই সঙ্গত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তেহরানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দূতাবাস নিজ উদ্যোগেও ব্যবস্থা নিতে পারে।’
ইরানে কতজন বাংলাদেশি?
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, সেখানে রাষ্ট্রদূত, দুইজন কর্মকর্তা ও পাঁচজন কর্মচারীসহ তাদের পরিবার মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে কর্মরত আটজনসহ সেখানে আরও ২৭ জন বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তেহরানে শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন, পেশাজীবী প্রায় ১০ জন।
এছাড়া ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল ২৮ জন বাংলাদেশির, কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশির সংখ্যা শতাধিক।
তেহরানের বাইরে ইরানের অন্যান্য অঞ্চলে প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, যারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এছাড়া আরও ৮০০ জনের মতো বাংলাদেশি গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বসবাস করে বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন। প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। মানবপাচারের রুট হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন, যাদের অন্য দেশে পাচারের অপেক্ষায় রাখা হয়।
পরিবারগুলো সরানো যায়নি
সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাধারণত দূতাবাসে কর্মরতদের পরিবারকে আগে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এই ঘটনায় ইসরায়েলি হামলার কোনও আগাম সতর্কতা না থাকায় পরিবারগুলো সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সরকারের একটি সূত্র জানায়, তেহরানে প্রায় শতাধিক দূতাবাস রয়েছে এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার অসংখ্য কর্মকর্তা সেখানে কর্মরত। অধিকাংশই পরিবার সরিয়ে নেওয়ার সময় পাননি।
তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছিল। সে সময় ইসরায়েল হামলা চালাবে, এমনটি তেহরান ভাবেনি। দূতাবাসগুলোকেও কোনও পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি।’
একটি সূত্র জানিয়েছে, রোববার (১৫ জুন) ইরাকে অবস্থিত দূতাবাসের পাশে একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়েছে। ফলে তেহরানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নিরাপদ স্থান খোঁজা হচ্ছে
তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কোনও গ্রাম কিংবা শহরের বাইরে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব স্বাগতিক রাষ্ট্রের হলেও, আকাশপথে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে দূতাবাসের লোকজনকেই নিজেরা সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান সরকারও কতটা সহায়তা করতে পারবে, তা বলা কঠিন।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও তুরস্কের। আকাশপথ বন্ধ থাকায় একমাত্র বিকল্প হচ্ছে স্থলপথ। এর মধ্যে পাকিস্তান সবচেয়ে দূরে ও দুর্গম। আর্মেনিয়া ও তুরস্ক যেতে হলে ভিসা প্রয়োজন, আর এখন ভিসা পাওয়া কঠিন।’
লেবাননে বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার অনুরোধ
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে লেবাননে বসবাসরত বাংলাদেশিদের চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য অনুরোধ করেছে দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস।
সোমবার (১৬ জুন) ফেসবুকের মাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বিশেষ করে রাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। লেবাননে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জারিকৃত সতর্কতামূলক বার্তা অনুসরণ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।’
বিশেষ প্রয়োজনে দূতাবাসের নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে– ফ্রন্ট ডেস্ক ৭১২১৭১৩৯, হটলাইন ৭০৬৩৫২৭৮ এবং হেল্পলাইন নম্বর ৮১৭৪৪২০৭।

















