সংবাদ শিরোনাম :
ইউনূসের পদত্যাগেই কি সমাধান?
মতামত
৫২ বাংলা
- আপডেট সময় : ১১:৩২:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
- / 419

উপদেষ্টা পরিষদের সূত্র ধরে আজকে প্রথম আলো লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা তার সহকর্মীদের বলেছেন, তাঁরা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছিল। মতামতটি লিখেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাদিম মাহমুদ।
এই খবরটি যদি সত্যি হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার উচিত হবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়া। তিনি কেন, পদত্যাগ করতে চান, তার ব্যাখা জাতির জানবার অধিকার রয়েছে। কারণ, আমার জানা মতে আওয়ামীলীগ ব্যতিত অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের দাবি কোন রাজনৈতিক দল করেছে বলে মনে হয় না। তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন তিনি পদত্যাগ করতে চান? পদত্যাগেই কি তার মুক্তি মিলবে? নাকি পদত্যাগের উদ্যেগের কথা গণমাধ্যমে জানিয়ে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি তালাশ করছেন?
ড. ইউনূস পদত্যাগ করুক বা সামনে ক্ষমতা আকড়ে ধরুক, তিনি যদি সত্যিই ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের আয়োজন করতে সংশয় প্রকাশ করে, তাহলে তার উচিত হবে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। কারণ, এই সরকারকে উচ্চ আদালত বিশেষ আইন করে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, কেবলই একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিয়ে গণতান্ত্রিক যাত্রাকে সহায়তা করার জন্য।
কিন্তু আমরা দেখলাম কি, তিনি ক্ষমতায় এসে সর্ব প্রথম আত্মতৃপ্তির চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি প্রথম যে ভুলটি করেছেন তাহলো, জাতির সামনে কোন ধরনের ব্যাখ্যা না দিয়েই তার বিরুদ্ধে আদালতের আরোপিত আদেশের ৬৬৬ কোটি টাকার কর দেয়ার আদেশটি বাতিল করেছেন, যা অনেকেই মনে করেছেন আদালতে পরোক্ষ হস্তক্ষেপ। এরপর একের পর নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক নামে নতুন নতুন কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাবসার জন্য সুবিধা বাগিয়ে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ মধ্যে পড়েছেন। এইগুলো নিয়ে জনমনে সমালোচনার জন্ম যেমন দিয়েছেন, তেমনি নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি স্নায়ু বিবাদে জড়িয়ে গিয়েছেন।
অন্যদিকে তার কাঁধে বন্ধুক রেখে সুবিধা আদায় করেছে জামায়াত। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অংশই শীর্ষস্থানীয় পদগুলো তাদের দখলে। গণমাধ্যম দখল থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিজেদের পছন্দের লোকদের বসিয়ে দলটির ইতিহাসে সবোর্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করছে। তার চোখের সামনে কিংবা মৌন সম্মতিতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিজড়িত বত্রিশ নাম্বার বাড়ি ভাঙা হয়েছে রাষ্ট্রীয় বুলডোজার দিয়ে। একের পর এক আক্রমণ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা, ভাস্কর্য, মুক্তিযোদ্ধাদের। স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনায় নামকরণ পর্যন্ত করানো হয়েছে।
মব ভায়োলেন্স প্রশয় দিয়ে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের পদত্যাগ করানো হয়েছে, আদালতের বিচারকদের সরানো হয়েছে। বলতে গেলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহারের পরিবর্তে এই সরকার মবদের প্রতি আস্থাশীল থাকার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতি মবদের কাছে শৃ্ঙখলহারিয়ে জনগণের মনে চরম অসন্তোষ তৈরির জন্য তার সরকার অবশ্যই দায়ী।
অধ্যাপক ইউনূসকে জিম্মি করেই হোক আর তার সহানুভূতিতেই হোক, দেশের জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শক্তিশালী করা হয়েছে। হিযুবত তাহরী সমর্থকদের ক্ষমতায় বসানো যেমন হয়েছে, তেমনি এইসব সম্প্রদায়দের দিয়ে নারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ভীতির সঞ্চার করানো হয়েছে। যা তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চতার তৈরির জন্য মূলত তিনি দায়ী। দেশ পরিচালনায় ৫/৬ মাস আগেই নিজের ব্যর্থতা যখন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছিল, এরপরও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অস্পষ্টতা তাকে ক্ষমতাসম্ভাবী অংশটির কাছে অবিশ্বাসী করে তুলেছে। সর্বশেষ করিডোর ও বন্দর নিয়ে ‘একক সিদ্ধান্তে’র কারণে তার প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে, তেমনি এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি ক্রমেই দূরে সরিয়ে গিয়েছে।
প্রতিহিংসার স্পষ্টতায় ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিকদলটিকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধকরণ, দমনপীড়ন ও সীমাহীন মামলাও গ্রেপ্তার হয়রানী দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংসের পেরেক মেরে দিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের শাস্তির আওয়তায় না এনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়নতার লক্ষনগুলো স্পষ্ট হওয়ায় তিনি ও তার সরকার দেশের একটি বড় অংশের কাঠগড়ায় নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।
নোবেল বিজয়ীর খেতাব মাথায় নিয়ে তার সরকার ইতিমধ্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিবৃতিতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। মূলত নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য গণ-অভ্যুত্থানের আকাংক্ষা আজ ব্যর্থতার দিকে। জনগণের চাওয়ার সায়ে সংযোগ না মিলে কেবল মবারুদের প্রবঞ্চনায় অন্তবর্তীকালিন সরকারের অঙ্গগুলো অকেজো হয়ে গিয়েছে। নিজের অর্জিত সম্মান ও খ্যাতির বদ্যনতায় এতোদিন টিকে গেলেও, আগামীতে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তা সহজে যাবে না। তাই সরকারের উচিত হবে, অন্তুভূক্তিমূলক নির্বাচনের প্রতি হাটা।
প্রতিহিংসা ফেলে জনগণের চাওয়াকে মূল্যায়িত করা। এটা করতে ব্যর্থ হলে, এই সরকার একদিন আদালতে না হলেও জনগণের কাঠগড়ায় অভিশপ্ত হিসেবে থেকে যাবেন। শত প্রাণের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার আত্মতৃপ্তির লিপ্সায় নিজেদের হারিয়ে ফেললে, এই দেশের মানুষের বিশ্বাস একবারে অমর্যাদার কবলে পড়বে। তাই সময় থাকতেই এই সরকারের উচিত হবে রিফর্ম করা। অন্তবর্তীকালিন সরকারকে তত্ত্ববধায়ক সরকারে রুপান্তরিত করা। নির্বাচনের পথে হাটা। দেশের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ফেলা।

















