অমর একুশে বইমেলা নিয়ে কী হচ্ছে?
- আপডেট সময় : ০৭:৩০:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / 560

এবারের অমর একুশে বইমেলায় কিছু প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়ন/স্টলের বরাদ্দ বাতিল এবং বেশ কিছু প্রকাশকের বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় কমিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত মেলা পরিচালনা কমিটি নিয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বইমেলায় অতিরিক্ত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলে এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে এক ডজনের বেশি প্রকাশনা সংস্থার। এই তালিকায় আছে- তাম্রলিপি, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, চারুলিপি, বিশ্বসাহিত্য ভবন, শব্দশৈলী, পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, মিজান পাবলিশার্স, অন্বেষা প্রকাশন, অনিন্দ্য প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী, সময় প্রকাশন, নালন্দা, পার্ল পাবলিকেশন্স ও অনুপম প্রকাশনী। এ ছাড়াও, অন্যপ্রকাশ, আগামীসহ তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে প্যাভিলিয়ন দিলেও আকার ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটি।আরও বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন বাতিল করে তাদের ৩ ও ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাতের প্রতিষ্ঠান ‘জার্নিম্যান বুকস’কে এবার মেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গত বৃহস্পতিবার বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ড. সরকার আমিন জানিয়েছেন, প্রকাশকদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির সুপারিশে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বঞ্চিত প্রকাশকরা অভিযোগ করেছেন, যে সব প্রকাশক তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদেরকে দিয়েই এই কমিটি গঠিত হয়েছে।
বাংলা একাডেমির এ সব সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায় এবং অবিচার’ বলে মনে করছে ‘সুবিচার প্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ’ নামের একটি প্লাটফর্ম। তাদের একটি প্রতিনিধিদল রোববার বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেশ কিছু দাবি লিখিত আকারে দিয়েছেন।
‘আগামী’ প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, “অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদসহ আমরা প্রকাশকদের একটি দল বাংলা একাডেমি মহাপরিচালকের কাছে লিখিত কিছু দাবি জানিয়েছি। বাংলা একাডেমি কর্তৃক এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারীদের তালিকা প্রকাশের পর বেশকিছু অসমাঞ্জস্যতা সকলের, বিশেষত প্রকাশকদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যা বইমেলার ঐতিহ্য ও সুনামের পরিপন্থি।”
‘সুবিচার প্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ’ এর লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “কয়েকজন প্রকাশকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক হিংসার বশবর্তী হয়ে বেশ কিছু প্রকাশকের নামে আনা বায়বীয় অভিযোগ যাচাই-বাছাই না করেই অভিযোগকারী প্রকাশকদের নিয়ে সাবকমিটি গঠন করে ওই সাবকমিটির সিদ্ধান্তে কোনো প্রকাশকের প্যাভিলিয়ন/স্টল বরাদ্দ বাতিল এবং বেশ কিছু প্রকাশকের বরাদ্দ পূর্ব-বছরের তুলনায় অবনমন করা হয়েছে, যা অন্যায় এবং অবিচার। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে যথাযথ প্রতিকার চেয়ে আমরা সুবিচার প্রত্যাশাকারী প্রকাশকগণ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছি।”
ড. সরকার আমিন জানিয়েছেন, “কয়েকজন প্রকাশকের সই করা একটি দাবিনামা আমাদের কাছে এসেছে। বইমেলা পরিচালনা কমিটির কাছে এটি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
প্রকাশকদের দাবিনামায় বলা হয়েছে, “এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন/স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থানকে পূর্ববর্তী বছরগুলোর চেয়ে অবনমন করা হয়েছে। এ বিষয়ে একাডেমি কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। অবনমনের শিকার প্রকাশকদের কোনোরকম কারণ দর্শানোও হয়নি। সকল নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদন করার পর যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, তবে অবশ্যই ওই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া প্রয়োজন, এ বিষয়ে তার বক্তব্য শোনাটা সঙ্গত। কিন্তু এক্ষেত্রে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে কোনো কিছুই অবহিত করা হয়নি।”
বইমেলাকে ‘সকল অপরাজনীতি এবং বৈষম্যের ঊর্ধ্বে’ রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে ওই দাবিনামায়।
১০ দাবি
• প্যাভিলিয়ন/স্টল অবনমনকৃত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ পূর্ববর্তী বছরগুলোর পর্যায়ে পুর্নবহাল করা।
• যদি কোনো প্রকাশকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া; তারপর যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
• অনিবন্ধিত সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের বইমেলা পরিচালনা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া।
• যেসব প্রকাশক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ কিছু সংখ্যক প্রকাশকের বিরুদ্ধে ‘বিগত সরকারের দোসর এবং সুবিধাভোগী’র অভিযোগ উত্থাপন করেছে, অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দাখিলে তাদের বাধ্য করা।
• অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য নিরপেক্ষ একটি কমিটি গঠন।
• যেসব প্রতিষ্ঠানের স্থান বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে তা নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে যাচাই করা।
• ‘অন্যায়ভাবে’ কিছু সংখ্যক প্রকাশকের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে ওইসব প্রকাশকের ব্যবসা ও জীবনকে হুমকির মুখেমুখি করা হয়েছে। ‘সুবিধাবাদীরা’ উদ্দেশ্যমূলকভাবে একাজ করেছে। এর ফলে অভিযুক্ত প্রকাশকদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি প্রকাশকদের ব্যক্তি নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন। এই সম্ভাব্য ক্ষতির দায়িত্ব অভিযোগকারীদেরই নিতে হবে, তা নিশ্চিত করা।
• বইমেলা প্রাঙ্গণে ‘অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠনগুলোর মাল ও জানের নিরাপত্তার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
• বইমেলার প্যাভিলিয়ন/স্টল ভাড়া দেওয়ার শেষ সময়ের অন্তত একদিন আগে বঞ্চিত প্রকাশকদের আগের বরাদ্দ বহাল করে নোটিস দেওয়া।



















