এদিনটির জন্য অস্থিরতা আছে ব্রিটেনের বাংলাদেশিদের মধ্যে। কি হবে, মাশরাফি মর্তুজার নেতৃত্বে বাঙালি ‘টাইগার’দের গর্জনে কতটুকু প্রকম্পিত হবে ওভাল মাঠ, ব্যাট আর বলে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট ধরাশায়ী হবেই বা কতটুকু, তা নিয়ে এখনই চলছে জোর হিসাব-নিকাশ। যুক্তরাজ্যের যেখানেই বাংলাদেশির আবাস, সেখানেই ক্রিকেট জ্বরে কাঁপছে যেন পুরো বাঙালি।
আজকের খেলা হবে লন্ডনের ওভাল স্টেডিয়ামে। কিন্তু লন্ডন থেকে বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার থেকে ওয়েলস-লন্ডন থেকে শত শত মাইল দূরে যুক্তরাজ্যের প্রতিটি প্রান্তেই যেন বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের উৎসব লেগেছে। একটা কথা এখানে বলতেই হয়, সবাই যে ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা ঘাটাঘাটি করে তা নয়। অনেকেই আছেন এমনকি ক্রিকেটের ইনিংস বুঝেন না, একজন ফিল্ডারের সুনিপুণ ক্যাচে কখন কেনই বা একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান, কেনই ‘নট আউট’, এসবের ধারধারেন না। কিন্তু বাংলাদেশ খেলবে, এ এক গর্বিত উচ্চারণ নিয়ে তারা গ্রুপ করেন, বাংলাদেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে কোচ কিংবা বাসে হৈ-হুল্লুড়ের মধ্য দিয়ে সহযাত্রী হচ্ছেন সবার সঙ্গে। কিংবা চার-পাঁচজন মিলে শত শত মাইলের লং ড্রাইভে খুব সকালে যাত্রা শুরু করছেন আজ। যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার বাংলাদেশি আজ তাই করছেন এই ব্রিটেনে।
আরেকটা কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই, ব্রিটেনে বেড়ে উঠা বাংলাদেশিদের খুব কম সংখ্যক তরুণ এই ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করে। ক্রিকেটপ্রেমীদের সিংহভাগই তারা, যারা বাংলাদেশের মাটি আর পতাকার ঘ্রাণ নিয়ে এসেছেন, বাংলা আর বাঙালিত্বকে যারা হৃদয়ে ধারণ করে যারা আবাস গেড়েছেন এখানে, তারাই মূলত মেতে উঠেন এই উৎসবে। ধারণা করা হয় ৫ লাখ বাংলাদেশির আবাস এই ব্রিটেন। যাদের এক তৃতীয়াংশই আর কোন খেলা দেখুক কিংবা না দেখুক অন্তত বাংলাদেশের খেলাগুলো উপভোগ করবে লাইভ অথবা টিভিতে। আর তারই প্রমাণ মেলে যখন হিসাবের খাতায় দেখা যায়, ওভাল স্টেডিয়ামের ২৪ হাজার টিকেটের ১৬ হাজারই বাংলাদেশিরা কিনে নেন। অর্থাৎ আজকের ওভাল স্টেডিয়াম থাকবে শুধুই ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। কালও দেখেছি টিকেটের সন্ধান করতে মানুষের হা হুতাশ। হেসে হেসে শুক্রবার একজন জানালেন, মনে হচ্ছে টিকেট পাওয়া গেলে ওভাল স্টেডিয়ামটা শুধু বাংলাদেশিদেরই হতো।
আজ ওভাল স্টেডিয়াম বাংলাদেশের পতাকায় ছেয়ে যাবে। বাঘের কস্টিউম গায়ে দিয়ে ম্যানচেস্টারের মুরতাহিন বিল্লাহ জুয়েল গত কয়েক বছর থেকেই ব্রিটেনের স্টেডিয়ামগুলোতে জানান দিচ্ছেন তার সপ্রাণ উপস্থিতি। যখনই বাংলাদেশের কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকে, তখন সেখানেই ছুটে যান তিনি। তিনি এবারও যাচ্ছেন ওভাল স্টেডিয়ামে। তার মতো কেউ কেউ বাংলাদেশের সব খেলার টিকেট কিনে নিয়েছেন অনেক আগেই। কাজ থেকেও ছুটি নিয়ে রেখেছেন। তিনি জানালেন, বছরখানেক আগেই ১১৫০ পাউন্ডের টিকেট কিনে নিয়েছিলেন বন্ধুদের অনুরোধে।
ইংল্যান্ডের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে যে দল, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টাইগারদের জয়ের প্রত্যাশায় ওভাল স্টেডিয়ামের দিকে আজ তাকিয়ে আছে বিশে^র কোটি কোটি বাংলাদেশি দর্শক। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।