ঢাকা ১২:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ঘাঁটিতে হামলা: নিহত ৬ বাংলাদেশি বিএনপি থেকে তিন দফা বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানকে দলে নিল জামায়াত তিন দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি বৈঠক: ‘ষড়যন্ত্রকারীরা প্রশিক্ষিত শুটার নামিয়েছে মাঠে’ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়িতে চুরির ঘটনা হাদিকে গুলি: প্রধান সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ, ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার রিকশায় থাকা হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি হাদির মাথা ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গেছে, ঢাকা মেডিকেল থেকে এভারকেয়ারে স্থানান্তর তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন, জানালেন মির্জা ফখরুল ধানমন্ডি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আসিফ মাহমুদ ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে গুলি, নির্বাচনী পরিবেশ বানচালের ‘নীলনকশা’ বলছে বিএনপি

যোদ্ধা-বীরাঙ্গনা মেহেরজান (পর্ব ৫ )

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:২৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০১৯
  • / 1989
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


যে যুদ্ধ করে আর যে যুদ্ধের বয়ান তৈরি করে- এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের প্রজন্ম, তারা তৈরি করা বয়ান দিয়েই তো যুদ্ধ, যোদ্ধা, ইতিহাসকে চিনেছি। তাহলে এই ফারাকটা ভরাটের পথ কী?

ঠিক এই জায়গাটা থেকেই একসময় ভাবি, যোদ্ধার প্রকৃত বয়ানটাই বোধহয় সেই ফারাকটা ভরাট করে দিতে পারে। একসময় যোদ্ধার বয়ান শোনা শুরু করি। সত্যিকার অর্থেই তখন অন্য এক যুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করি যোদ্ধার চোখে। সেই ঘোর আজও কাটেনি।

কিন্তু যোদ্ধাও তো মানুষ, সময়ের ব্যবধানে সেও নিজেকে যে পাল্টে ফেলেনি- তাই বা কে বলবে! তবু আজও মুক্তিযোদ্ধার, বীরাঙ্গণার, শরণার্থীর গল্প শুনি ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার মতো সরলতা, মুগ্ধতা আর শিহরণ নিয়েই।

সেই অচেনা, অজানা, অখ্যাত যোদ্ধা, যারা মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছিল, তাদের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এই উত্তাল মার্চের দিনগুলোতে শুনাতে চাই ৫২বাংলায় ।

‘মুক্তিযুদ্ধের পর তো সোয়ামি আমারে আর ঘরে লয় না। বলে, তুই পাকিস্তানী ক্যাম্পে যা। আমি তোর লগে থাকুম না। বাহে কন, আমি তখন কই যাই? সোয়ামি ঘরে আসে না, বাইরে বাইরে থাকে। ততদিনে বড় পোলা মোস্তফার জন্ম হইছে। বাপের বাড়ির লোকজন আমারে দেখে, পোলারে দেখে। সোয়ামিরে তখন অনেক বুঝায় বাপের বাড়ির লোকজন আর গ্রামের মানুষ। শেষে ছয় মাস পরে সোয়ামি আমারে ঘরে লইছে। হেরপরেও কত ঝগড়া, কথায় কথায় খালি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা তুলত। সে এখন পঙ্গু, অচল; চলাফেরা করতে পারে না। আমিই তারে দেখি, খাওয়াই।’

মেহেরজানের সামনে বসে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ বোধহয় তার মূল অবয়ব ছেড়ে বেরিয়ে আসছে আমার চোখের সামনে, মেহেরজানের কঙ্কাল যেন অন্য-ভিন্ন এক ছায়াশরীর হয়ে হানা দেয় পৃথিবীর তামাম যুদ্ধবিধ্বস্ত মনস্তত্ত্বে। আমি ইতিহাসের সেই কঙ্কাল খুঁজতে এসেছিলাম কুড়িগ্রামে।

বীরাঙ্গনা মেহেরজান বেগম ২০১৩ সালের আগস্টের এক সকালে আক্ষেপ করেই এসব কথা বলছিলেন।(ছবি: চন্দন সাহা রায়)

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যোদ্ধা-বীরাঙ্গনা মেহেরজান (পর্ব ৫ )

আপডেট সময় : ০৬:২৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০১৯


যে যুদ্ধ করে আর যে যুদ্ধের বয়ান তৈরি করে- এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের প্রজন্ম, তারা তৈরি করা বয়ান দিয়েই তো যুদ্ধ, যোদ্ধা, ইতিহাসকে চিনেছি। তাহলে এই ফারাকটা ভরাটের পথ কী?

ঠিক এই জায়গাটা থেকেই একসময় ভাবি, যোদ্ধার প্রকৃত বয়ানটাই বোধহয় সেই ফারাকটা ভরাট করে দিতে পারে। একসময় যোদ্ধার বয়ান শোনা শুরু করি। সত্যিকার অর্থেই তখন অন্য এক যুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করি যোদ্ধার চোখে। সেই ঘোর আজও কাটেনি।

কিন্তু যোদ্ধাও তো মানুষ, সময়ের ব্যবধানে সেও নিজেকে যে পাল্টে ফেলেনি- তাই বা কে বলবে! তবু আজও মুক্তিযোদ্ধার, বীরাঙ্গণার, শরণার্থীর গল্প শুনি ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার মতো সরলতা, মুগ্ধতা আর শিহরণ নিয়েই।

সেই অচেনা, অজানা, অখ্যাত যোদ্ধা, যারা মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছিল, তাদের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এই উত্তাল মার্চের দিনগুলোতে শুনাতে চাই ৫২বাংলায় ।

‘মুক্তিযুদ্ধের পর তো সোয়ামি আমারে আর ঘরে লয় না। বলে, তুই পাকিস্তানী ক্যাম্পে যা। আমি তোর লগে থাকুম না। বাহে কন, আমি তখন কই যাই? সোয়ামি ঘরে আসে না, বাইরে বাইরে থাকে। ততদিনে বড় পোলা মোস্তফার জন্ম হইছে। বাপের বাড়ির লোকজন আমারে দেখে, পোলারে দেখে। সোয়ামিরে তখন অনেক বুঝায় বাপের বাড়ির লোকজন আর গ্রামের মানুষ। শেষে ছয় মাস পরে সোয়ামি আমারে ঘরে লইছে। হেরপরেও কত ঝগড়া, কথায় কথায় খালি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা তুলত। সে এখন পঙ্গু, অচল; চলাফেরা করতে পারে না। আমিই তারে দেখি, খাওয়াই।’

মেহেরজানের সামনে বসে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ বোধহয় তার মূল অবয়ব ছেড়ে বেরিয়ে আসছে আমার চোখের সামনে, মেহেরজানের কঙ্কাল যেন অন্য-ভিন্ন এক ছায়াশরীর হয়ে হানা দেয় পৃথিবীর তামাম যুদ্ধবিধ্বস্ত মনস্তত্ত্বে। আমি ইতিহাসের সেই কঙ্কাল খুঁজতে এসেছিলাম কুড়িগ্রামে।

বীরাঙ্গনা মেহেরজান বেগম ২০১৩ সালের আগস্টের এক সকালে আক্ষেপ করেই এসব কথা বলছিলেন।(ছবি: চন্দন সাহা রায়)