ঢাকা ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:৫০:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 47
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আজ আমি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। দুঃখজনক হলেও সত্য, এটি অনেক ঘরেই ঘটে, হয়তো আমাদের নিজের ঘরেও। আর তা হলো পারিবারিক নির্যাতন । এটি প্রথমবার নয় যে আমরা এ বিষয়ে শুনছি, এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়তো শেষবারও হবে না। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট করে বলতে হবে ইসলাম কোনো ধরনের নির্যাতনকে অনুমতি দেয় না। কারো কাছ থেকে, কোনো অবস্থাতেই নয়।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হোক, স্ত্রী স্বামীকে কষ্ট দিক, সন্তানদের উপর জুলুম হোক, অথবা বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি দুর্ব্যবহার-এসবের কোনোটি ইসলাম গ্রহণ করে না। আমাদের ঘর হওয়ার কথা ভালোবাসা, শান্তি ও দয়ার জায়গা—ভয়ের জায়গা নয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক প্রাণ হতে এবং তার থেকেই সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনীকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর সদা তত্ত্বাবধানকারী।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:১)

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা সবাই একই উৎস থেকে সৃষ্টি। তাই আমাদের মধ্যে থাকা উচিত পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব, ভালোবাসা—সহিংসতা নয়। আর আল্লাহ দেখছেন আমরা একে অপরের সাথে কেমন আচরণ করি।

আরেক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে রেখেছেন মহব্বত ও দয়া।” (সূরা আর-রূম, ৩০:২১)।

দেখুন, শব্দগুলো কী সুন্দর। শান্তি, ভালোবাসা, দয়া। বিবাহের ভিত্তি এগুলোর ওপর। ভয়, ধমক বা মারধর নয়। ঘরে শান্তি না থাকলে মানুষ আর কোথায় শান্তি পাবে?
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন: “তোমরা তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে জীবনযাপন কর।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:১৯)

এই সুন্দর আচরণ শুধু ভালো সময়ে নয়, কথাবার্তায়, স্বরে, আচরণে সবসময়। অবজ্ঞা করা, হুমকি দেয়া, কষ্ট দেয়া—এসব ইসলাম নিষেধ করেছে।

রাসুলুল্লাহ (সা:) এ শিক্ষাটিই আমাদের দেখিয়েছেন। তিনি (সা:) কখনো কোনো নারী বা চাকরকে মারেননি। তিনি শিখিয়েছেন—শক্তিমান সে নয় যে অন্যকে পরাস্ত করে, বরং সে-ই শক্তিশালী যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

এবং আল্লাহ বলেছেন: “যারা রাগ নিভিয়ে ফেলে, মানুষকে ক্ষমা করে—আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৪)

পারিবারিক নির্যাতন হলো একটি জুলুম। আর আল্লাহ বলেন: “হে আমার বান্দারা, আমি নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তা হারাম করেছি। তাই তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।” (সহিহ মুসলিম)
ঘরের ভেতরের জুলুম সবচেয়ে কঠিন জুলুমগুলোর একটি । কারণ আমাদের ঘর হওয়ার কথা শান্তির জায়গা। আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরকে শান্তির স্থান করেছেন (সূরা আন-নহল, ১৬:৮০)। আরবি শব্দ সুকন—অর্থ শান্তি, স্থিরতা । কিন্তু চিৎকার, মারধর, মানসিক চাপ থাকলে সেই শান্তি নষ্ট হয়ে যায়।

আর সত্য কথা হলো, পারিবারিক নির্যাতন সবসময় শারীরিক নয়। মানসিক নির্যাতনও হতে পারে—আর্থিকভাবে আটকে রাখা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা, অপমান করা, তুচ্ছ করা—এসবই হারাম।

আমাদের দায়িত্ব আছে । যদি আপনি কারো ঘরে নির্যাতন হতে দেখেন, চুপ থাকা ঠিক নয়। রাসুল (সা:) বলেছেন: তোমার ভাইকে সাহায্য করো সে অত্যাচারী হোক বা নির্যাতিত হোক।” জিজ্ঞেস করা হলো, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করব? তিনি (সা‍:) বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে বিরত রেখে।”

এটাই আসল সাহায্য। নির্যাতনের ঘটনা দেখে চেপে যাওয়া যাবেনা, সত্যের পথে দাঁড়ানো কর্তব্য । ভদ্রতা এবং উত্তম চরিত্র একজন মুমিনের আসল পরিচয়। রাসুল (সা:) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে সে ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।

তিনি (সা:) আরও বলেছেন, “যেকোনো কিছুতে কোমলতা যোগ করলে তা সুন্দর হয়; আর কোমলতা সরিয়ে নিলে তা কুৎসিত হয়ে যায়। তিনি (সা:) আরো বলেছেন: আমি কি তোমাদের বলে দেব কে সেই ব্যক্তি যাকে আগুন স্পর্শ করবে না? সে হলো, যে ব্যক্তি কোমল, নম্র এবং শান্ত স্বভাবের।

তাই আমরা ভেবে দেখি আমাদের ঘরে কি সুন্নাহের প্রতিফলন আছে? আমরা কি দয়ার পরিবেশ তৈরি করছি, নাকি ভয়ের? আমাদের সন্তানরা কি ভালোবাসা পাচ্ছে, নাকি আতঙ্কে থাকে? আমাদের জীবনসঙ্গী কি নিরাপদ বোধ করেন, নাকি চুপ থাকার জন্য বাধ্য হন?

আসুন, আমরা ঘর থেকেই শান্তি ছড়াতে শুরু করি। হে আল্লাহ, আমাদের হৃদয়কে নরম করে দিন, আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দিন এবং আমাদের ঘরগুলোকে আপনার রহমতে ভরপুর করে দিন। আমাদেরকে কোমল স্বভাবের মানুষ বানিয়ে দিন, এবং আমাদেরকে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

শায়খ আব্দুল কাইয়ুম : প্রধান ইমাম ও খতীব- ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম

আপডেট সময় : ০৪:৫০:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ আমি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। দুঃখজনক হলেও সত্য, এটি অনেক ঘরেই ঘটে, হয়তো আমাদের নিজের ঘরেও। আর তা হলো পারিবারিক নির্যাতন । এটি প্রথমবার নয় যে আমরা এ বিষয়ে শুনছি, এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়তো শেষবারও হবে না। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট করে বলতে হবে ইসলাম কোনো ধরনের নির্যাতনকে অনুমতি দেয় না। কারো কাছ থেকে, কোনো অবস্থাতেই নয়।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হোক, স্ত্রী স্বামীকে কষ্ট দিক, সন্তানদের উপর জুলুম হোক, অথবা বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি দুর্ব্যবহার-এসবের কোনোটি ইসলাম গ্রহণ করে না। আমাদের ঘর হওয়ার কথা ভালোবাসা, শান্তি ও দয়ার জায়গা—ভয়ের জায়গা নয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক প্রাণ হতে এবং তার থেকেই সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনীকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর সদা তত্ত্বাবধানকারী।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:১)

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা সবাই একই উৎস থেকে সৃষ্টি। তাই আমাদের মধ্যে থাকা উচিত পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব, ভালোবাসা—সহিংসতা নয়। আর আল্লাহ দেখছেন আমরা একে অপরের সাথে কেমন আচরণ করি।

আরেক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে রেখেছেন মহব্বত ও দয়া।” (সূরা আর-রূম, ৩০:২১)।

দেখুন, শব্দগুলো কী সুন্দর। শান্তি, ভালোবাসা, দয়া। বিবাহের ভিত্তি এগুলোর ওপর। ভয়, ধমক বা মারধর নয়। ঘরে শান্তি না থাকলে মানুষ আর কোথায় শান্তি পাবে?
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন: “তোমরা তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে জীবনযাপন কর।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:১৯)

এই সুন্দর আচরণ শুধু ভালো সময়ে নয়, কথাবার্তায়, স্বরে, আচরণে সবসময়। অবজ্ঞা করা, হুমকি দেয়া, কষ্ট দেয়া—এসব ইসলাম নিষেধ করেছে।

রাসুলুল্লাহ (সা:) এ শিক্ষাটিই আমাদের দেখিয়েছেন। তিনি (সা:) কখনো কোনো নারী বা চাকরকে মারেননি। তিনি শিখিয়েছেন—শক্তিমান সে নয় যে অন্যকে পরাস্ত করে, বরং সে-ই শক্তিশালী যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

এবং আল্লাহ বলেছেন: “যারা রাগ নিভিয়ে ফেলে, মানুষকে ক্ষমা করে—আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৪)

পারিবারিক নির্যাতন হলো একটি জুলুম। আর আল্লাহ বলেন: “হে আমার বান্দারা, আমি নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তা হারাম করেছি। তাই তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।” (সহিহ মুসলিম)
ঘরের ভেতরের জুলুম সবচেয়ে কঠিন জুলুমগুলোর একটি । কারণ আমাদের ঘর হওয়ার কথা শান্তির জায়গা। আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরকে শান্তির স্থান করেছেন (সূরা আন-নহল, ১৬:৮০)। আরবি শব্দ সুকন—অর্থ শান্তি, স্থিরতা । কিন্তু চিৎকার, মারধর, মানসিক চাপ থাকলে সেই শান্তি নষ্ট হয়ে যায়।

আর সত্য কথা হলো, পারিবারিক নির্যাতন সবসময় শারীরিক নয়। মানসিক নির্যাতনও হতে পারে—আর্থিকভাবে আটকে রাখা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা, অপমান করা, তুচ্ছ করা—এসবই হারাম।

আমাদের দায়িত্ব আছে । যদি আপনি কারো ঘরে নির্যাতন হতে দেখেন, চুপ থাকা ঠিক নয়। রাসুল (সা:) বলেছেন: তোমার ভাইকে সাহায্য করো সে অত্যাচারী হোক বা নির্যাতিত হোক।” জিজ্ঞেস করা হলো, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করব? তিনি (সা‍:) বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে বিরত রেখে।”

এটাই আসল সাহায্য। নির্যাতনের ঘটনা দেখে চেপে যাওয়া যাবেনা, সত্যের পথে দাঁড়ানো কর্তব্য । ভদ্রতা এবং উত্তম চরিত্র একজন মুমিনের আসল পরিচয়। রাসুল (সা:) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে সে ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।

তিনি (সা:) আরও বলেছেন, “যেকোনো কিছুতে কোমলতা যোগ করলে তা সুন্দর হয়; আর কোমলতা সরিয়ে নিলে তা কুৎসিত হয়ে যায়। তিনি (সা:) আরো বলেছেন: আমি কি তোমাদের বলে দেব কে সেই ব্যক্তি যাকে আগুন স্পর্শ করবে না? সে হলো, যে ব্যক্তি কোমল, নম্র এবং শান্ত স্বভাবের।

তাই আমরা ভেবে দেখি আমাদের ঘরে কি সুন্নাহের প্রতিফলন আছে? আমরা কি দয়ার পরিবেশ তৈরি করছি, নাকি ভয়ের? আমাদের সন্তানরা কি ভালোবাসা পাচ্ছে, নাকি আতঙ্কে থাকে? আমাদের জীবনসঙ্গী কি নিরাপদ বোধ করেন, নাকি চুপ থাকার জন্য বাধ্য হন?

আসুন, আমরা ঘর থেকেই শান্তি ছড়াতে শুরু করি। হে আল্লাহ, আমাদের হৃদয়কে নরম করে দিন, আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দিন এবং আমাদের ঘরগুলোকে আপনার রহমতে ভরপুর করে দিন। আমাদেরকে কোমল স্বভাবের মানুষ বানিয়ে দিন, এবং আমাদেরকে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

শায়খ আব্দুল কাইয়ুম : প্রধান ইমাম ও খতীব- ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫।