ঢাকা ০৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

টং দোকান থেকে অট্টালিকা—ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকাবাসী

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:০১:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • / 76

ভূমিকম্প আতঙ্কে রাস্তায় মানুষ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘আমি চা বানাচ্ছিলাম, হঠাৎ দোকানের ক্যাশবাক্সসহ পুরো দোকান কেঁপে উঠলো। ভয় পেয়ে আমরা কয়েকজন বাইরে বের হয়ে দেখি, কাছের একটি ভবনের রেলিং ভেঙে কয়েকজন গুরুতর আহত। কাছে গিয়ে দেখি তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন, আরও বেশ কয়েকজন আহত। চারদিকে মানুষ শুধু চিৎকার করছে। কয়েক মুহূর্তের এই দুঃসহ দৃশ্য তখন দুঃস্বপ্ন মনে হলেও মাথা থেকে আর সরাতে পারছি না। এখনও আতঙ্ক কাটেনি—কখন আবার ভূমিকম্প হয়, সেই ভয়ে আছি।’

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরোনো ঢাকার বংশালের আরমানিটোলায় একটি ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে তিনজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বাংলা ট্রিবিউনকে এভাবেই জানালেন চা দোকানদার আবুল কাশেম।

তিনি আরও বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ১৬ বছর ধরে ব্যবসা করি। ৮ বছরের একটি মেয়ে আর ১২ বছরের একটি ছেলে আছে—দু’জনেই স্কুলে পড়ে। চোখের সামনে এমন দুর্ঘটনা দেখার পর আর চা বানাতে মন বসে না। ছেলে-মেয়েদের নিয়েই বেশি চিন্তা। দোকানে যারা আসে, সবাই নানারকম কথা বলছে—রাজধানীর বেশিরভাগ ভবন নাকি ঝুঁকিপূর্ণ। আমি মরে গেলেও সমস্যা নেই, কিন্তু বাচ্চাদের যদি কিছু হয় তাহলে তো আমরাও শেষ।’

চা দোকানদার কাশেমের মতোই এখন টং দোকান থেকে উঁচু অট্টালিকা—সব জায়গাতেই ভূমিকম্পের আতঙ্ক। আগুন, সড়ক দুর্ঘটনা, নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ—এগুলো রাজধানীর নিয়মিত চিত্র হলেও মাত্র ৩২ ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প ঘটায় নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও নগরবিদরা বলছেন—এটি ছিল শুধু সতর্কতার পূর্ব সংকেত; এখনই যথাযথ প্রস্তুতি না নিলে ঢাকা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

ভূমিকম্পে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভবনে ফাটল—আতঙ্কে বাসিন্দারা

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীসহ দেশের নানা এলাকায় অনুভূত ভূমিকম্পে ঢাকার বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, আরমানিটোলা, স্বামীবাগ, বনানী, কলাবাগান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ন্দা, দক্ষিণ বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা, সিপাহীবাগ, মধুবাগ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার অন্তত একটি করে ভবনে ফাটলের খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া রামপুরা টিভি রোডের কয়েকটি ভবন, কলাবাগানের আবেদখালী রোডের একটি ভবন হেলে পড়েছে। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় চারদিকে বড় ফাটল ধরেছে। পঙ্গু হাসপাতালের সামনের অংশেও ওপর পর্যন্ত বড় ফাটল দেখা গেছে। পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি ভবনসহ কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও ঢাকা কলেজের আবাসিক হলের বিভিন্ন অংশেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

বাড্ডার যেই ভবনে ফাটল ধরেছে, সেখানকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দুই দিন আগেও নিশ্চিন্তে বউ–বাচ্চা নিয়ে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু গতকালের ভূমিকম্প সব বদলে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে বড় দুর্ঘটনা হয়নি। তবে ভবনে ফাটল ধরার পর সবাই আতঙ্কে আছে—কখন কী হয়ে যায়। বাসা ছাড়ার কথাও জানিয়েছি।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা তাজুল খন্দকার বলেন, ‘বাসা থেকে একটু দূরেই গতকাল দুর্ঘটনায় তিনজন মারা গেছে। আমার ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে, টাইলস খসে পড়ছে। কী করবো বুঝতে পারছি না। পুরো শহরের একই অবস্থা। ভাবছি পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাব, কিন্তু ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা আর চাকরির কথা ভেবে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’

ধানমন্ডির বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন মিন্টু বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের কঠোর প্রয়োগ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। যেসব ভবন সংস্কার করলে ঝুঁকি কমবে, সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে রাজউক ও সিটি করপোরেশনের।’

কবি নজরুল কলেজের শহীদ শামসুল আলম হলের শিক্ষার্থী বিপ্লব শেখ বলেন, ‘হলের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। এখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী থাকে। সবাই আতঙ্কে আছে। কলেজ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা কিছু বলেনি। ঐতিহ্যের কথা বলে বহুদিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি—এখন সবাইকে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

দুশ্চিন্তার মূল কারণ—নকশাবহির্ভূত ভবন

রাজধানীর প্রায় ৭৪ শতাংশ ভবন নকশাবহির্ভূত—অর্থাৎ অনুমোদন ছাড়া তৈরি, বা অনুমোদিত নকশা থেকে বড় ধরনের বিচ্যুতিতে নির্মিত। শুধু আবাসিক নয়, বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সর্বত্রই এই অনিয়ম। যে সব ভবনে এবার ফাটল ধরেছে, বেশিরভাগই নকশাবহির্ভূত। ফলে বড় ভূমিকম্প হলে বিপদ আরও বাড়বে।

সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক সেমিনারে জানানো হয়—ঢাকায় ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ—গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা মানা হয়নি, নিরাপত্তা যাচাই নেই, দুর্যোগ–সহনশীল নকশা নেই। বড় ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ‘মৃত্যুপুঞ্জে’ পরিণত হতে পারে।

স্থপতি ও নগরবিদ মো. ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ঢাকার প্রায় ১৩ শতাংশ এলাকায় কোনও ধরনের নির্মাণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণে সেসব জায়গায়ও ভবন তৈরি হচ্ছে। পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা তো দূরের কথা, তার ওপর নতুন ভবন উঠছে। বহুদিন ধরে এসব বিষয়ে পরামর্শ দিলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। ফলে এখন শহরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘শুক্রবার যে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে—সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। রাজধানী যে কত বড় ঝুঁকিতে রয়েছে, তা অনেকেই কল্পনাও করতে পারছেন না। এখনই উচ্চ পর্যায় সতর্ক না হলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

টং দোকান থেকে অট্টালিকা—ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকাবাসী

আপডেট সময় : ১২:০১:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

‘আমি চা বানাচ্ছিলাম, হঠাৎ দোকানের ক্যাশবাক্সসহ পুরো দোকান কেঁপে উঠলো। ভয় পেয়ে আমরা কয়েকজন বাইরে বের হয়ে দেখি, কাছের একটি ভবনের রেলিং ভেঙে কয়েকজন গুরুতর আহত। কাছে গিয়ে দেখি তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন, আরও বেশ কয়েকজন আহত। চারদিকে মানুষ শুধু চিৎকার করছে। কয়েক মুহূর্তের এই দুঃসহ দৃশ্য তখন দুঃস্বপ্ন মনে হলেও মাথা থেকে আর সরাতে পারছি না। এখনও আতঙ্ক কাটেনি—কখন আবার ভূমিকম্প হয়, সেই ভয়ে আছি।’

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরোনো ঢাকার বংশালের আরমানিটোলায় একটি ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে তিনজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বাংলা ট্রিবিউনকে এভাবেই জানালেন চা দোকানদার আবুল কাশেম।

তিনি আরও বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ১৬ বছর ধরে ব্যবসা করি। ৮ বছরের একটি মেয়ে আর ১২ বছরের একটি ছেলে আছে—দু’জনেই স্কুলে পড়ে। চোখের সামনে এমন দুর্ঘটনা দেখার পর আর চা বানাতে মন বসে না। ছেলে-মেয়েদের নিয়েই বেশি চিন্তা। দোকানে যারা আসে, সবাই নানারকম কথা বলছে—রাজধানীর বেশিরভাগ ভবন নাকি ঝুঁকিপূর্ণ। আমি মরে গেলেও সমস্যা নেই, কিন্তু বাচ্চাদের যদি কিছু হয় তাহলে তো আমরাও শেষ।’

চা দোকানদার কাশেমের মতোই এখন টং দোকান থেকে উঁচু অট্টালিকা—সব জায়গাতেই ভূমিকম্পের আতঙ্ক। আগুন, সড়ক দুর্ঘটনা, নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ—এগুলো রাজধানীর নিয়মিত চিত্র হলেও মাত্র ৩২ ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প ঘটায় নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও নগরবিদরা বলছেন—এটি ছিল শুধু সতর্কতার পূর্ব সংকেত; এখনই যথাযথ প্রস্তুতি না নিলে ঢাকা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

ভূমিকম্পে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভবনে ফাটল—আতঙ্কে বাসিন্দারা

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীসহ দেশের নানা এলাকায় অনুভূত ভূমিকম্পে ঢাকার বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, আরমানিটোলা, স্বামীবাগ, বনানী, কলাবাগান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ন্দা, দক্ষিণ বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা, সিপাহীবাগ, মধুবাগ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার অন্তত একটি করে ভবনে ফাটলের খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া রামপুরা টিভি রোডের কয়েকটি ভবন, কলাবাগানের আবেদখালী রোডের একটি ভবন হেলে পড়েছে। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় চারদিকে বড় ফাটল ধরেছে। পঙ্গু হাসপাতালের সামনের অংশেও ওপর পর্যন্ত বড় ফাটল দেখা গেছে। পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি ভবনসহ কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও ঢাকা কলেজের আবাসিক হলের বিভিন্ন অংশেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

বাড্ডার যেই ভবনে ফাটল ধরেছে, সেখানকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দুই দিন আগেও নিশ্চিন্তে বউ–বাচ্চা নিয়ে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু গতকালের ভূমিকম্প সব বদলে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে বড় দুর্ঘটনা হয়নি। তবে ভবনে ফাটল ধরার পর সবাই আতঙ্কে আছে—কখন কী হয়ে যায়। বাসা ছাড়ার কথাও জানিয়েছি।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা তাজুল খন্দকার বলেন, ‘বাসা থেকে একটু দূরেই গতকাল দুর্ঘটনায় তিনজন মারা গেছে। আমার ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে, টাইলস খসে পড়ছে। কী করবো বুঝতে পারছি না। পুরো শহরের একই অবস্থা। ভাবছি পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাব, কিন্তু ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা আর চাকরির কথা ভেবে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’

ধানমন্ডির বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন মিন্টু বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের কঠোর প্রয়োগ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। যেসব ভবন সংস্কার করলে ঝুঁকি কমবে, সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে রাজউক ও সিটি করপোরেশনের।’

কবি নজরুল কলেজের শহীদ শামসুল আলম হলের শিক্ষার্থী বিপ্লব শেখ বলেন, ‘হলের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। এখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী থাকে। সবাই আতঙ্কে আছে। কলেজ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা কিছু বলেনি। ঐতিহ্যের কথা বলে বহুদিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি—এখন সবাইকে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

দুশ্চিন্তার মূল কারণ—নকশাবহির্ভূত ভবন

রাজধানীর প্রায় ৭৪ শতাংশ ভবন নকশাবহির্ভূত—অর্থাৎ অনুমোদন ছাড়া তৈরি, বা অনুমোদিত নকশা থেকে বড় ধরনের বিচ্যুতিতে নির্মিত। শুধু আবাসিক নয়, বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সর্বত্রই এই অনিয়ম। যে সব ভবনে এবার ফাটল ধরেছে, বেশিরভাগই নকশাবহির্ভূত। ফলে বড় ভূমিকম্প হলে বিপদ আরও বাড়বে।

সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক সেমিনারে জানানো হয়—ঢাকায় ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ—গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা মানা হয়নি, নিরাপত্তা যাচাই নেই, দুর্যোগ–সহনশীল নকশা নেই। বড় ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ‘মৃত্যুপুঞ্জে’ পরিণত হতে পারে।

স্থপতি ও নগরবিদ মো. ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ঢাকার প্রায় ১৩ শতাংশ এলাকায় কোনও ধরনের নির্মাণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণে সেসব জায়গায়ও ভবন তৈরি হচ্ছে। পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা তো দূরের কথা, তার ওপর নতুন ভবন উঠছে। বহুদিন ধরে এসব বিষয়ে পরামর্শ দিলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। ফলে এখন শহরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘শুক্রবার যে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে—সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। রাজধানী যে কত বড় ঝুঁকিতে রয়েছে, তা অনেকেই কল্পনাও করতে পারছেন না। এখনই উচ্চ পর্যায় সতর্ক না হলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।’