ঢাকা ১০:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

দু্ই তিনে তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:০২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / 77

বাংলাদেশ ভূমিকম্প টেকটনিক ও ভূগোলিক পৃষ্ঠতল স্ট্যাকচার

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাড়ে সাত ঘণ্টার মধ্যে আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। এ নিয়ে দেশে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় তিনবার ভূমিকম্প হয়েছে।  এর মধ্যে আজ শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় দুবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় হালকা ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। তবে এ ভূমিকম্পে হতাহত বা কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এক ঘণ্টা পরও পায়নি ঢাকার ফায়ার সার্ভিস।

আগের দিন শুক্রবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর শনিবার দিনের দ্বিতীয় এই ভূমিকম্প ছিল তুলনামূলকভাবে হালকা। প্রথমে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৩ দশমিক ৭ বলা হলেও পরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, প্রকৃত মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা এলাকা, যা কেন্দ্র থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর।

এদিন সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটেও আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যা ছিল মৃদু। রিখটার স্কেলে সেটি ছিল ৩ দশমিক ৩ মাত্রার। সেটিতেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। প্রথমে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সাভারের বাইপাল বলা হলেও পরে নরসিংদীর পলাশ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যার ভূমিকম্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। তবে ইউএসজিএস উৎপত্তিস্থল হিসেবে নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমাঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে। কেন্দ্র ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) বলছে, তাদের গণনায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭, আর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে।

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চল কাঁপিয়ে যাওয়া এই ভূমিকম্পের প্রায় এক ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, “এখনো কোথাও থেকে কোনো ফোন পাইনি।”

এর আগের দিনই শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ।

সেই ভূমিকম্পে তিন জেলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক আহত হন। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়, কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটে।

রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে; কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থায়িত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড।

শুক্রবারের তীব্র ঝাঁকুনির পরই তাৎক্ষণিক প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী মন্তব্য করেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প হয়, এটা সেগুলোরই একটি।”

বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বহুদিনের। তাদের মতে, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। অবরুদ্ধ হতে পারে ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ, আর ভেঙে পড়তে পারে ঢাকার প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো না গেলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

তাদের সুপারিশ—

  • ভবনের কাঠামোগত মান যাচাই করা

  • ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো শনাক্ত করা

  • জনসাধারণকে নিয়মিত সতর্ক করা

  • মহড়া আয়োজন বাড়ানো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার শুক্রবার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে অনেক উপরে। ইন্ডিয়ান–বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যে বিপুল শক্তি জমা হয়েছে, তা মুক্তি পেলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।

“এটা আগামীকালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে বলা যায় না; তবে হলে তা হবে ভয়াবহ। ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প সাধারণত খুব বিধ্বংসী হয়।”

নিউজটি শেয়ার করুন

দু্ই তিনে তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৮:০২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

সাড়ে সাত ঘণ্টার মধ্যে আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। এ নিয়ে দেশে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় তিনবার ভূমিকম্প হয়েছে।  এর মধ্যে আজ শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় দুবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় হালকা ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। তবে এ ভূমিকম্পে হতাহত বা কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এক ঘণ্টা পরও পায়নি ঢাকার ফায়ার সার্ভিস।

আগের দিন শুক্রবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর শনিবার দিনের দ্বিতীয় এই ভূমিকম্প ছিল তুলনামূলকভাবে হালকা। প্রথমে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৩ দশমিক ৭ বলা হলেও পরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, প্রকৃত মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা এলাকা, যা কেন্দ্র থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর।

এদিন সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটেও আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যা ছিল মৃদু। রিখটার স্কেলে সেটি ছিল ৩ দশমিক ৩ মাত্রার। সেটিতেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। প্রথমে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সাভারের বাইপাল বলা হলেও পরে নরসিংদীর পলাশ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যার ভূমিকম্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। তবে ইউএসজিএস উৎপত্তিস্থল হিসেবে নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমাঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে। কেন্দ্র ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) বলছে, তাদের গণনায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭, আর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে।

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চল কাঁপিয়ে যাওয়া এই ভূমিকম্পের প্রায় এক ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, “এখনো কোথাও থেকে কোনো ফোন পাইনি।”

এর আগের দিনই শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ।

সেই ভূমিকম্পে তিন জেলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক আহত হন। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়, কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটে।

রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে; কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থায়িত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড।

শুক্রবারের তীব্র ঝাঁকুনির পরই তাৎক্ষণিক প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী মন্তব্য করেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প হয়, এটা সেগুলোরই একটি।”

বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বহুদিনের। তাদের মতে, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। অবরুদ্ধ হতে পারে ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ, আর ভেঙে পড়তে পারে ঢাকার প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো না গেলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

তাদের সুপারিশ—

  • ভবনের কাঠামোগত মান যাচাই করা

  • ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো শনাক্ত করা

  • জনসাধারণকে নিয়মিত সতর্ক করা

  • মহড়া আয়োজন বাড়ানো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার শুক্রবার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে অনেক উপরে। ইন্ডিয়ান–বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যে বিপুল শক্তি জমা হয়েছে, তা মুক্তি পেলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।

“এটা আগামীকালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে বলা যায় না; তবে হলে তা হবে ভয়াবহ। ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প সাধারণত খুব বিধ্বংসী হয়।”