আবার ফিরলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তবে এবার নয় পরের নির্বাচনে
- আপডেট সময় : ০৭:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
- / 75
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় ঘোষণা করেছেন। ফলে চৌদ্দ বছর আগে আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া এই ব্যবস্থা আবারও ফিরে এলো।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার সকালে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত ১১ই নভেম্বর শুনানি শেষ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি দীর্ঘদিন ধরে তুলছিল একাধিক রাজনৈতিক দল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিষয়টি আবার আপিল বিভাগে আসে।
এ বছরের ২৭শে অগাস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ২১শে অক্টোবর শুরু হয় শুনানি।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘদিনের নির্বাচনী অস্বচ্ছতা ও বিতর্কের সমাধান। তবে সময়ের সঙ্গে এই ব্যবস্থার বিরোধও শুরু হয় এবং ২০১১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আপিল বিভাগ সংশোধনীটি বাতিল করে। কিন্তু পরবর্তী দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একাধিক নির্বাচনে নতুন বিতর্কের জন্ম নেয়।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার রায় এলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি প্রয়োগ সম্ভব নয়। অর্থাৎ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সূচনা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত আলোচিত একটি ধারণা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা—এটি শুধু প্রশাসনিক কাঠামোর বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক অবিশ্বাস ও নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্কের প্রতিফলন।
ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই এই ব্যবস্থার উদ্ভব। এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচন একটি অনানুষ্ঠানিক অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হলেও ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপনির্বাচনের অভিযোগ পরিস্থিতি বদলে দেয়।
১৯৯৬ সালে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হয়, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়। এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিতর্ক ও বাতিল
২০০৬ সালের পর এই ব্যবস্থা নিয়ে জটিলতা বাড়ে, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। বিরোধ ঘনীভূত হয়ে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, যা পরে ১/১১ সরকার নামে পরিচিত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালের ১০ই মে সুপ্রিম কোর্ট ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায় দেয়, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
পরবর্তীতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়।
ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়—যেগুলো নিয়ে দেশে-বিদেশে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং প্রশাসন–আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রভাব ভোটারদের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে।
















