সৌদি আরবে অবস্থানের সময় এক প্রবাসীকে অপহরণ করে একটি চক্র। পরে বাংলাদেশে তার স্ত্রী ও শ্বশুরের কাছে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এরপর সৌদি আরবেই অপহৃত ব্যক্তিকে ফের মুক্ত করে দেয় অপহরণকারীরা।
এই ঘটনায় চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ধরা পড়া ব্যক্তির নাম মো. জিয়াউর রহমান (৪২)। বুধবার সন্ধ্যায় মাগুরার শালিথা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তদন্ত করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদীর মেয়ের জামাই দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন এবং সেখানে তার নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি সকালে পরিকল্পিতভাবে তাকে রিয়াদ শহর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অপহরণ করে। পরে রাসেলের বড় ভাই সাইফুল ইসলামের সঙ্গে অজ্ঞাত ইমু আইডি ও ভিওআইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে রাসেলকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। মুক্তিপণের অর্থ পাঠানোর জন্য তারা বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক হিসাব নম্বর সরবরাহ করে।
পরবর্তীতে বাদী, সাইফুল ইসলামসহ অন্যরা বাধ্য হয়ে মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। সাইফুল ইসলাম খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকা থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টে মোট ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাবে ২৫ লাখ টাকা পাঠান। সব মিলিয়ে ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীরা রাসেলকে রিয়াদের রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায়। যাওয়ার আগে তাদের একজন রাসেলের হাতের ছাপ এবং আকামা আইডি নিয়ে নেয় এবং ঘটনা প্রকাশ পেলে হত্যার ভয় দেখায়।
পরে স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে গিয়ে রাসেল পরিবারকে সব জানালে, তার শ্বশুর ২১ জানুয়ারি খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।
তদন্তে সিআইডি মুক্তিপণ নেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশে ও বিদেশে সংশ্লিষ্টদের সন্ধান অনুসন্ধান শুরু করে। এসব অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে মো. জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউর জানিয়েছেন, তিনি সৌদিভিত্তিক অজ্ঞাত অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে মুক্তিপণের অর্থ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন পেয়েছেন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মো. জিয়াউর রহমানসহ এই মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতার দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’
মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিটের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। চক্রের বাকি সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।