ঢাকা ০৫:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

পোস্টাল ভোটিং: অ্যাপে যেভাবে নিবন্ধন করবেন প্রবাসীরা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:২৮:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / 118
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের নিবন্ধনের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এম নাসির উদ্দিন অ্যাপটির উদ্বোধন করার পর এটি নিবন্ধনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

নমুনা হিসেবে মিশর, জাপান, আরব আমিরাত, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে একজন করে প্রবাসীকে নিবন্ধন করতে দেখা যায়।

পোস্টাল ভোটিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়াকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ‘এক অনন্য সংযোজন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান (পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠান) গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন।”

সরাসরি ও ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকা অতিথিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ইতিহাসের সাক্ষী হলেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আজ একটি ইতিহাস সৃষ্টি হলো। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন আপনারা।

“বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বিদেশে বসবাস করছে এবং বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। এতদিন বিদেশে থাকা এই নাগরিকরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকের এই উদ্যোগ সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাচ্ছে।”

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ দিন করে নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার থেকে নিবন্ধন শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাসীরা নিবন্ধন করতে পারবেন।

এ ছাড়া দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তিকে ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময় বাদ পড়া প্রবাসীরাও নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজিত হবে। একই দিনে গণভোট করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিয়ে সিইসি বলেন, “সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭.১ ঘোষণা করে গণতন্ত্রের মালিক জনগণ। এই মালিকানায় কোনো ভৌগলিক সীমা নেই। প্রবাসী নাগরিকেরা যেমন অর্থনৈতিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন, তেমনি গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। তাদের ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও বিস্তৃত, প্রতিনিধিত্বশীল ও শক্তিশালী হবে।”

সিইসি জানান, তিন মাসের কিছু বেশি সময়ে মোবাইলভিত্তিক এই অ্যাপ বাস্তবায়নকে তিনি ‘দুঃসাহসী’ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ একে সমর্থন না দিলেও কমিশন সাহস নিয়ে এগিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে এবং ভোট ডাকযোগে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। তবে এই অ্যাপ বাস্তবায়নে ‘অনেক চ্যালেঞ্জ’ রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সব বাধা মোকাবিলা করে তারা ধীরে ধীরে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “শনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যত দেশে প্রবাসী আছেন, তত দেশের ডাক বিভাগ যুক্ত থাকবে।”

কানাডায় গিয়ে অ্যাপ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নমুনা দেখে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটিও তুলে ধরেন তিনি।

নাসির উদ্দিন বলেন, “ওখানে (কানাডায়) শুনলাম অনেকদিন ডাকপিয়ন ধর্মঘট ছিল। এই অ্যাপে দেড়শর বেশি দেশ যুক্ত হবে। এসব দেশের ডাক বিভাগও যুক্ত থাকবে। কোনো দেশে যদি একই ধরনের পরিস্থিতি হয়, তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। এমন অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”

ভোটাধিকার প্রয়োগে যেন কোনো নাগরিক বঞ্চিত না হয়, সে জন্য ডাক ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মত দেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আজকের উদ্বোধনের মাধ্যমে শুধু একটি অ্যাপ চালু নয়, বরং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো—যেখানে নাগরিকত্ব ভৌগলিক নয়, বৈশ্বিক। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ সেই বৈশ্বিক গণতন্ত্রের দুয়ার খুলে দিচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান অ্যাপ, ভোটিং পদ্ধতি এবং এর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান।

কীভাবে ও কখন নিবন্ধন করবেন

আইটি সহযোগিতায় পরিচালিত পোস্টাল ভোটিংয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিবন্ধন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই)’ প্রকল্পের টিম লিডার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালীম আহমাদ খান।

তিনি জানান, প্রবাসীরা যে ঠিকানায় আছেন, সেই ঠিকানা অনুযায়ী নিবন্ধন করতে হবে। প্রবাসে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরই হবে ব্যবহারকারীর ‘পরিচয় নম্বর’।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বসে নিবন্ধন করা যাবে না। এক দেশে বসে অন্য দেশের নামে নিবন্ধন করার সুযোগ নেই। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসি, প্রকল্প, সরকার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনা থাকবে।”

তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া

অ্যাপ ডাউনলোড > প্রবেশ ও নিবন্ধন পাতায় যাওয়া > তালিকাভুক্তির জন্য একাউন্ট তৈরি > মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা, একবার ব্যবহারযোগ্য কোড, যাচাই ও পাসওয়ার্ড তৈরি > ব্যবহারকারীর নামে (মোবাইল নম্বর) প্রবেশ > জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই > মুখের পরিচিতি যাচাই, সক্রিয়তা যাচাই > নিজের ছবি তোলা > প্রবাসের ঠিকানা, পাসপোর্টসহ অন্যান্য তথ্য প্রদান > তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন সম্পন্ন।

নিবন্ধনের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অ্যাপ ডাউনলোডের পর ভাষা নির্বাচন করলে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ‘সহায়তা কেন্দ্র’ থাকবে। ভিডিও নির্দেশিকাও থাকবে, যা ব্যবহারকারীদের ধাপে ধাপে পথ দেখাবে। ১০টি ধাপ থাকলেও সহজেই নিবন্ধন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, নিবন্ধন করতে ৫-১০ মিনিটও লাগতে পারে। অনুমোদনের পর প্রবাসে নিবন্ধন করে দেশে এসে ভোট দেওয়া যাবে না। ১৪৩টি দেশের প্রতিটি অঞ্চলের জন্য পাঁচ দিন করে সময় নির্ধারিত হয়েছে। ৪০ দিনব্যাপী নিবন্ধন চলবে। নিবন্ধন শেষ হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকা প্রস্তুত হবে।

দেশে ও প্রবাসে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে নিবন্ধন শুরু হয়ে পঞ্চম দিনের রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শেষ হবে।

নিরাপদ হলেও চ্যালেঞ্জ আছে

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ২০২৬ সালের নির্বাচন। এর অন্যতম দুর্বলতা ছিল প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ৭-৮ শতাংশকে ভোট ব্যবস্থায় না আনা।

তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ইসি ধাপে ধাপে পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগটি এগিয়ে নেয়।

তিনি আরও বলেন, গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার ১১ দিনের মাথায় তারা তিন ডিসেম্বর কাজ শুরু করেন। অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। চলতি বছরের মে মাসে কারিগরি দল গঠন, পরামর্শ গ্রহণ এবং জুনে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

পোস্টাল ভোটিং চালুর সিদ্ধান্তের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন শুরু হলো।

এই ব্যবস্থায় চূড়ান্ত প্রার্থীর প্রতীক দেখে ভোটার খামে ভোট দেবেন। সেই খাম ডাকযোগে দেশে পাঠাতে হবে। ব্যালট খামের গতিপথও দেখা যাবে।

এই উদ্যোগ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি ভোটে ব্যয় হচ্ছে ৭০০ টাকা।

কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ নিবন্ধন। বিশ্বে নিবন্ধনের হার শতকরা তিন ভাগেরও কম। নিবন্ধন করেও খুব কম প্রবাসী ভোট দেন। অন্তর্ভুক্ত করা ও নিবন্ধন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি জানান, প্রতি চারটি ব্যালটের একটি নষ্ট হয়—সময়, ভুল ঠিকানা বা অসচেতনতার কারণে।

সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

পোস্টাল ভোটিং: অ্যাপে যেভাবে নিবন্ধন করবেন প্রবাসীরা

আপডেট সময় : ১০:২৮:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের নিবন্ধনের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এম নাসির উদ্দিন অ্যাপটির উদ্বোধন করার পর এটি নিবন্ধনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

নমুনা হিসেবে মিশর, জাপান, আরব আমিরাত, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে একজন করে প্রবাসীকে নিবন্ধন করতে দেখা যায়।

পোস্টাল ভোটিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়াকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ‘এক অনন্য সংযোজন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান (পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠান) গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন।”

সরাসরি ও ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকা অতিথিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ইতিহাসের সাক্ষী হলেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আজ একটি ইতিহাস সৃষ্টি হলো। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন আপনারা।

“বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বিদেশে বসবাস করছে এবং বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। এতদিন বিদেশে থাকা এই নাগরিকরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকের এই উদ্যোগ সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাচ্ছে।”

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ দিন করে নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার থেকে নিবন্ধন শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাসীরা নিবন্ধন করতে পারবেন।

এ ছাড়া দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তিকে ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময় বাদ পড়া প্রবাসীরাও নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজিত হবে। একই দিনে গণভোট করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিয়ে সিইসি বলেন, “সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭.১ ঘোষণা করে গণতন্ত্রের মালিক জনগণ। এই মালিকানায় কোনো ভৌগলিক সীমা নেই। প্রবাসী নাগরিকেরা যেমন অর্থনৈতিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন, তেমনি গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। তাদের ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও বিস্তৃত, প্রতিনিধিত্বশীল ও শক্তিশালী হবে।”

সিইসি জানান, তিন মাসের কিছু বেশি সময়ে মোবাইলভিত্তিক এই অ্যাপ বাস্তবায়নকে তিনি ‘দুঃসাহসী’ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ একে সমর্থন না দিলেও কমিশন সাহস নিয়ে এগিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে এবং ভোট ডাকযোগে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। তবে এই অ্যাপ বাস্তবায়নে ‘অনেক চ্যালেঞ্জ’ রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সব বাধা মোকাবিলা করে তারা ধীরে ধীরে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “শনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যত দেশে প্রবাসী আছেন, তত দেশের ডাক বিভাগ যুক্ত থাকবে।”

কানাডায় গিয়ে অ্যাপ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নমুনা দেখে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটিও তুলে ধরেন তিনি।

নাসির উদ্দিন বলেন, “ওখানে (কানাডায়) শুনলাম অনেকদিন ডাকপিয়ন ধর্মঘট ছিল। এই অ্যাপে দেড়শর বেশি দেশ যুক্ত হবে। এসব দেশের ডাক বিভাগও যুক্ত থাকবে। কোনো দেশে যদি একই ধরনের পরিস্থিতি হয়, তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। এমন অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”

ভোটাধিকার প্রয়োগে যেন কোনো নাগরিক বঞ্চিত না হয়, সে জন্য ডাক ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মত দেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আজকের উদ্বোধনের মাধ্যমে শুধু একটি অ্যাপ চালু নয়, বরং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো—যেখানে নাগরিকত্ব ভৌগলিক নয়, বৈশ্বিক। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ সেই বৈশ্বিক গণতন্ত্রের দুয়ার খুলে দিচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান অ্যাপ, ভোটিং পদ্ধতি এবং এর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান।

কীভাবে ও কখন নিবন্ধন করবেন

আইটি সহযোগিতায় পরিচালিত পোস্টাল ভোটিংয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিবন্ধন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই)’ প্রকল্পের টিম লিডার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালীম আহমাদ খান।

তিনি জানান, প্রবাসীরা যে ঠিকানায় আছেন, সেই ঠিকানা অনুযায়ী নিবন্ধন করতে হবে। প্রবাসে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরই হবে ব্যবহারকারীর ‘পরিচয় নম্বর’।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বসে নিবন্ধন করা যাবে না। এক দেশে বসে অন্য দেশের নামে নিবন্ধন করার সুযোগ নেই। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসি, প্রকল্প, সরকার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনা থাকবে।”

তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া

অ্যাপ ডাউনলোড > প্রবেশ ও নিবন্ধন পাতায় যাওয়া > তালিকাভুক্তির জন্য একাউন্ট তৈরি > মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা, একবার ব্যবহারযোগ্য কোড, যাচাই ও পাসওয়ার্ড তৈরি > ব্যবহারকারীর নামে (মোবাইল নম্বর) প্রবেশ > জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই > মুখের পরিচিতি যাচাই, সক্রিয়তা যাচাই > নিজের ছবি তোলা > প্রবাসের ঠিকানা, পাসপোর্টসহ অন্যান্য তথ্য প্রদান > তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন সম্পন্ন।

নিবন্ধনের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অ্যাপ ডাউনলোডের পর ভাষা নির্বাচন করলে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ‘সহায়তা কেন্দ্র’ থাকবে। ভিডিও নির্দেশিকাও থাকবে, যা ব্যবহারকারীদের ধাপে ধাপে পথ দেখাবে। ১০টি ধাপ থাকলেও সহজেই নিবন্ধন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, নিবন্ধন করতে ৫-১০ মিনিটও লাগতে পারে। অনুমোদনের পর প্রবাসে নিবন্ধন করে দেশে এসে ভোট দেওয়া যাবে না। ১৪৩টি দেশের প্রতিটি অঞ্চলের জন্য পাঁচ দিন করে সময় নির্ধারিত হয়েছে। ৪০ দিনব্যাপী নিবন্ধন চলবে। নিবন্ধন শেষ হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকা প্রস্তুত হবে।

দেশে ও প্রবাসে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে নিবন্ধন শুরু হয়ে পঞ্চম দিনের রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শেষ হবে।

নিরাপদ হলেও চ্যালেঞ্জ আছে

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ২০২৬ সালের নির্বাচন। এর অন্যতম দুর্বলতা ছিল প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ৭-৮ শতাংশকে ভোট ব্যবস্থায় না আনা।

তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ইসি ধাপে ধাপে পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগটি এগিয়ে নেয়।

তিনি আরও বলেন, গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার ১১ দিনের মাথায় তারা তিন ডিসেম্বর কাজ শুরু করেন। অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। চলতি বছরের মে মাসে কারিগরি দল গঠন, পরামর্শ গ্রহণ এবং জুনে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

পোস্টাল ভোটিং চালুর সিদ্ধান্তের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন শুরু হলো।

এই ব্যবস্থায় চূড়ান্ত প্রার্থীর প্রতীক দেখে ভোটার খামে ভোট দেবেন। সেই খাম ডাকযোগে দেশে পাঠাতে হবে। ব্যালট খামের গতিপথও দেখা যাবে।

এই উদ্যোগ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি ভোটে ব্যয় হচ্ছে ৭০০ টাকা।

কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ নিবন্ধন। বিশ্বে নিবন্ধনের হার শতকরা তিন ভাগেরও কম। নিবন্ধন করেও খুব কম প্রবাসী ভোট দেন। অন্তর্ভুক্ত করা ও নিবন্ধন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি জানান, প্রতি চারটি ব্যালটের একটি নষ্ট হয়—সময়, ভুল ঠিকানা বা অসচেতনতার কারণে।

সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।