ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

বিএনপি জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৩২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • / 196

লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে গণঅভ্যুত্থনের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী তালিকা প্রকাশ শুরু করেছে। তবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন—এই প্রশ্নে তারা নীরব।

৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা জামায়াত বা ২৩৭ আসনে প্রার্থী দেওয়া বিএনপি—কেউই এখনও এ বিষয়ে কিছু বলেনি। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে—তাদের দলীয় প্রধান সরকারপ্রধান হবেন না, এটি তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।

সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের পর যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হবে, সেই দলের সংসদীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সাধারণত দলগুলো আগেই ইঙ্গিত দেয় কে সরকারপ্রধান হবেন, তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

দলীয় ও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে চলমান আলোচনায় বলা হচ্ছে—একই ব্যক্তি যেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান না হন। ফলে বিএনপি জিতলেও দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটি এখন নিশ্চিত নয়।

সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন।
সংস্কার নিয়ে গণভোটের যে আলোচনা চলছে—তা নির্বাচনের আগে বা ভোটের দিন অনুষ্ঠিত হলেও, এর অনুমোদন পরবর্তী সংসদে নিতে হবে—ফলে ফলাফল নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

বিএনপিতে প্রশ্ন কেন?

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। সবসময়ই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেই সামনে রেখে ভোটে গেছে দলটি।

তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তিনি এখনো সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরছেন না। তার শারীরিক অবস্থাও পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলের নেতৃত্ব কার্যত তারেক রহমানের হাতে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও বিএনপির নেতৃত্ব কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

দলীয় চেয়ারপারসন মুক্ত থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে রয়ে গেছেন তারেক রহমান। প্রার্থী মনোনয়ন, জোট সমন্বয়—সবকিছুই তার সিদ্ধান্তে হচ্ছে।

২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে না পারায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়।

সে সময় ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠন করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু তখনও তারা স্পষ্ট করে বলেনি—জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।

তখন যেমন, এবারও দেশের ভেতর ও বাইরের কূটনীতিকরা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে এ প্রশ্নে পরিষ্কার জবাব পাননি।

এবারও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগের মতোই বলছেন, “আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি সুস্থ থাকেন এবং কাজ করার মতো অবস্থায় থাকেন, তাহলে তিনি-ই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার অনুপস্থিতিতে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান হবেন।”

দলের একাধিক নেতা দেশকাল নিউজ ডটকমকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিএনপি যদি সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তাহলে ক্ষমতার বিন্যাস অনেকটা সৌদি আরবের ‘বাদশাহ–রাজপুত্র’ মডেলে হতে পারে। খালেদা জিয়া থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে, আর তারেক রহমান থাকবেন নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক পরামর্শদাতা হিসেবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “এখন নানা সংকটে আছি, সেগুলোতেই ফোকাস দিচ্ছি। আর মহাসচিব তো জানিয়েছেন, সবকিছুই ঘটনার ওপর নির্ভর করছে।”

স্থায়ী কমিটির আরও কয়েকজন নেতার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলেও কেউই সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি।

একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “আমার মনে হয়, যেভাবেই হোক বেগম জিয়ার নামই প্রাধান্য পাবে, কিংবা পাওয়া উচিত।”

ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আমরা তরুণরা মনে করি, এত বড় অভ্যুত্থানের পর দেশকে পুনর্গঠনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেই প্রধানমন্ত্রী করা উচিত। ম্যাডাম উপদেষ্টা হয়ে পরামর্শ দেবেন।”

জামায়াতও বিএনপির মতোই এ বিষয়ে নীরব। তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার শুরু করেছে, কিন্তু সরকারপ্রধান কে হবেন তা জানায়নি।

দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এটা এখনো ঠিক হয়নি। আমাদের প্রধান শফিকুর রহমানই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগে নির্বাচন শেষ হোক, তারপর সিদ্ধান্ত হবে।”

এনসিপির অবস্থান

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর গঠিত তরুণদের দল ‘এনসিপি’ও এখন আলোচনায়। তারা এককভাবে বা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানাচ্ছে।

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা দলীয় প্রধান ও সরকারপ্রধানকে আলাদা রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার গঠন করতে পারলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, এখনই বলা ঠিক নয়।”

যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করছি। সরকার গঠনের সুযোগ পেলে দলের আহ্বায়ককেই প্রধানমন্ত্রী করা হতে পারে। তবে আমরা গণতান্ত্রিক দল—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলই নেবে।”

দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, “দলে আহ্বায়ক, সদস্যসচিব ও উপদেষ্টা পরিষদ আছে। সব হিসাব-নিকাশ করে দল যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে। আগে থেকে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

স্বাধীনতার পর যারা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কখনও রাষ্ট্রপতি শাসিত, কখনও সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু ছিল। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে ছিলেন।

এরপর যাঁরা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন—

  • মো. মনসুর আলী (২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫–১৫ আগস্ট ১৯৭৫) – আওয়ামী লীগ

  • মশিউর রহমান (২৯ জুন ১৯৭৮–১২ মার্চ ১৯৭৯) – জাগদল/বিএনপি

  • শাহ আজিজুর রহমান (১৫ এপ্রিল ১৯৭৯–২৪ মার্চ ১৯৮২)

  • আতাউর রহমান খান (৩০ মার্চ ১৯৮৪–১৫ জানুয়ারি ১৯৮৫) – জাতীয় পার্টি/জনদল

  • মিজানুর রহমান চৌধুরী (৯ জুলাই ১৯৮৬–২৭ মার্চ ১৯৮৮) – জাতীয় পার্টি

  • মওদুদ আহমদ (২৭ মার্চ ১৯৮৮–১২ আগস্ট ১৯৮৯) – জাতীয় পার্টি

  • কাজী জাফর আহমদ (১২ আগস্ট ১৯৮৯–৬ ডিসেম্বর ১৯৯০) – জাতীয় পার্টি

  • খালেদা জিয়া (১৯৯১–১৯৯৬, ২০০১–২০০৬) – বিএনপি

  • শেখ হাসিনা (১৯৯৬–২০০১, ২০০৮–২০২৪) – আওয়ামী লীগ

(১৯৯১ সাল থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীই নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।)

নিউজটি শেয়ার করুন

বিএনপি জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?

আপডেট সময় : ০৭:৩২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে গণঅভ্যুত্থনের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী তালিকা প্রকাশ শুরু করেছে। তবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন—এই প্রশ্নে তারা নীরব।

৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা জামায়াত বা ২৩৭ আসনে প্রার্থী দেওয়া বিএনপি—কেউই এখনও এ বিষয়ে কিছু বলেনি। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে—তাদের দলীয় প্রধান সরকারপ্রধান হবেন না, এটি তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।

সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের পর যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হবে, সেই দলের সংসদীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সাধারণত দলগুলো আগেই ইঙ্গিত দেয় কে সরকারপ্রধান হবেন, তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

দলীয় ও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে চলমান আলোচনায় বলা হচ্ছে—একই ব্যক্তি যেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান না হন। ফলে বিএনপি জিতলেও দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটি এখন নিশ্চিত নয়।

সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন।
সংস্কার নিয়ে গণভোটের যে আলোচনা চলছে—তা নির্বাচনের আগে বা ভোটের দিন অনুষ্ঠিত হলেও, এর অনুমোদন পরবর্তী সংসদে নিতে হবে—ফলে ফলাফল নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

বিএনপিতে প্রশ্ন কেন?

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। সবসময়ই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেই সামনে রেখে ভোটে গেছে দলটি।

তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তিনি এখনো সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরছেন না। তার শারীরিক অবস্থাও পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলের নেতৃত্ব কার্যত তারেক রহমানের হাতে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও বিএনপির নেতৃত্ব কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

দলীয় চেয়ারপারসন মুক্ত থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে রয়ে গেছেন তারেক রহমান। প্রার্থী মনোনয়ন, জোট সমন্বয়—সবকিছুই তার সিদ্ধান্তে হচ্ছে।

২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে না পারায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়।

সে সময় ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠন করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু তখনও তারা স্পষ্ট করে বলেনি—জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।

তখন যেমন, এবারও দেশের ভেতর ও বাইরের কূটনীতিকরা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে এ প্রশ্নে পরিষ্কার জবাব পাননি।

এবারও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগের মতোই বলছেন, “আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি সুস্থ থাকেন এবং কাজ করার মতো অবস্থায় থাকেন, তাহলে তিনি-ই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার অনুপস্থিতিতে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান হবেন।”

দলের একাধিক নেতা দেশকাল নিউজ ডটকমকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিএনপি যদি সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তাহলে ক্ষমতার বিন্যাস অনেকটা সৌদি আরবের ‘বাদশাহ–রাজপুত্র’ মডেলে হতে পারে। খালেদা জিয়া থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে, আর তারেক রহমান থাকবেন নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক পরামর্শদাতা হিসেবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “এখন নানা সংকটে আছি, সেগুলোতেই ফোকাস দিচ্ছি। আর মহাসচিব তো জানিয়েছেন, সবকিছুই ঘটনার ওপর নির্ভর করছে।”

স্থায়ী কমিটির আরও কয়েকজন নেতার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলেও কেউই সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি।

একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “আমার মনে হয়, যেভাবেই হোক বেগম জিয়ার নামই প্রাধান্য পাবে, কিংবা পাওয়া উচিত।”

ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আমরা তরুণরা মনে করি, এত বড় অভ্যুত্থানের পর দেশকে পুনর্গঠনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেই প্রধানমন্ত্রী করা উচিত। ম্যাডাম উপদেষ্টা হয়ে পরামর্শ দেবেন।”

জামায়াতও বিএনপির মতোই এ বিষয়ে নীরব। তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার শুরু করেছে, কিন্তু সরকারপ্রধান কে হবেন তা জানায়নি।

দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এটা এখনো ঠিক হয়নি। আমাদের প্রধান শফিকুর রহমানই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগে নির্বাচন শেষ হোক, তারপর সিদ্ধান্ত হবে।”

এনসিপির অবস্থান

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর গঠিত তরুণদের দল ‘এনসিপি’ও এখন আলোচনায়। তারা এককভাবে বা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানাচ্ছে।

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা দলীয় প্রধান ও সরকারপ্রধানকে আলাদা রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার গঠন করতে পারলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, এখনই বলা ঠিক নয়।”

যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করছি। সরকার গঠনের সুযোগ পেলে দলের আহ্বায়ককেই প্রধানমন্ত্রী করা হতে পারে। তবে আমরা গণতান্ত্রিক দল—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলই নেবে।”

দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, “দলে আহ্বায়ক, সদস্যসচিব ও উপদেষ্টা পরিষদ আছে। সব হিসাব-নিকাশ করে দল যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে। আগে থেকে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

স্বাধীনতার পর যারা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কখনও রাষ্ট্রপতি শাসিত, কখনও সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু ছিল। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে ছিলেন।

এরপর যাঁরা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন—

  • মো. মনসুর আলী (২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫–১৫ আগস্ট ১৯৭৫) – আওয়ামী লীগ

  • মশিউর রহমান (২৯ জুন ১৯৭৮–১২ মার্চ ১৯৭৯) – জাগদল/বিএনপি

  • শাহ আজিজুর রহমান (১৫ এপ্রিল ১৯৭৯–২৪ মার্চ ১৯৮২)

  • আতাউর রহমান খান (৩০ মার্চ ১৯৮৪–১৫ জানুয়ারি ১৯৮৫) – জাতীয় পার্টি/জনদল

  • মিজানুর রহমান চৌধুরী (৯ জুলাই ১৯৮৬–২৭ মার্চ ১৯৮৮) – জাতীয় পার্টি

  • মওদুদ আহমদ (২৭ মার্চ ১৯৮৮–১২ আগস্ট ১৯৮৯) – জাতীয় পার্টি

  • কাজী জাফর আহমদ (১২ আগস্ট ১৯৮৯–৬ ডিসেম্বর ১৯৯০) – জাতীয় পার্টি

  • খালেদা জিয়া (১৯৯১–১৯৯৬, ২০০১–২০০৬) – বিএনপি

  • শেখ হাসিনা (১৯৯৬–২০০১, ২০০৮–২০২৪) – আওয়ামী লীগ

(১৯৯১ সাল থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীই নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।)