চলতি বছর এখন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান।
তালেবুর রহমান বলেন, “চলতি বছরের আজকের দিন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্যই যারা সরাসরি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি জানান, ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণের চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে ডিসি বলেন, “আমরা যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি তাদেরসহ ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করছে। এর পেছনে অনেকে অর্থায়ন করছে এবং প্রত্যেক মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। মূলত এর উদ্দেশ্য হচ্ছে— তাদের যে অবস্থান সেটা জানানো এবং ঢাকা মহানগরীতে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার একটা অপচেষ্টা করা। যেকোনো মূল্যে ঢাকায় তাদের যে অবস্থান আছে সেটা প্রকাশ করা। বেসিক্যালি মিছিলের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের যে তৎপরতা আছে, তারা সক্রিয় রয়েছে, সেটা জানানো।”
এক প্রশ্ন ছিল—একই দিনে ঢাকায় এত ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা হলে কি গণগ্রেপ্তার শুরু হবে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা আসলে গণগ্রেপ্তার বলা যাবে না। আমরা যে গ্রেপ্তারগুলো করছি একদম তাৎক্ষণিকভাবে ঝটিকা মিছিলে যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের। আমরা গ্রেপ্তার করার পর যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তাদের পূর্বাপর যে ইতিহাস সেটা যাচাই-বাছাই করে তারপর সন্তুষ্ট হলেই তাকে মামলায় চালান দেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থান থেকে এসে তারা মিছিলে অংশগ্রহণ করে আবার চলে যাচ্ছে এবং অনেককে হাতেনাতে ককটেলসহ ধরা হয়েছে—“এগুলো খুবই বিপজ্জনকভাবে তৈরি করা।”
তালেবুর রহমান বলেন, “আপনারা দেখেছেন আমরা এর আগে একদিনে ২৪৪ জন, আরেকদিন ১৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। মিছিলে থেকে ককটেল বিস্ফোরণ করে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার একটা অপচেষ্টা করা হয়। অনেককেই আমরা ককটেলসহ গ্রেপ্তার করেছি। যে অপতৎপরতা তারা চালিয়ে যাচ্ছে সেটা যেন না করতে পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। আর যারা ঢাকার বাইরে থেকে আসছে, সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই নজরদারি রাখছি। আমাদের নজরদারি এবং তৎপরতার কারণেই এই যে গ্রেপ্তারগুলো, সেটা সম্ভব হচ্ছে।”
মিছিলের জন্য অংশগ্রহণকারীরা কি আর্থিক প্রণোদনা পাচ্ছে—এরও জিজ্ঞাসা করা হয়। ডিসি বলছেন, “ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার খরচ, থাকা-খাওয়ার বাইরে তার একটা নির্দিষ্ট টাকা না হলে তো সে আসবে না। এক্ষেত্রে আমরা অনেকের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়েছি। তাদেরকে মোটিভেট করার জন্য বিভিন্নভাবে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো আমরা মাথায় রাখছি এবং যারা এই প্রণোদনাগুলো দিচ্ছেন, যারা আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের তালিকা দেখে জানা যায় বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা—যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঢাকা শহরে পাঠানো হয়েছে। ডিসি যোগ করেন, “যারা কো-অর্ডিনেট করছে তারাও আমাদের নজরের মধ্যে আছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধ করার বা রুখে দেওয়ার সক্ষমতা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রয়েছে।”
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গ্রেপ্তার
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও ঢাবির মুজিব হলের সাবেক সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কার্যক্রম ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে তাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির একটি টিম।
জানা যায়, বরিকুল ইসলাম বাঁধন রাজধানীতে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ও নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে শিবির নেতা ও আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল বাশারকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় বাঁধনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর এসএম হল সংসদের প্রার্থী মো. ফরিদ হাসানকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে রাসেলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।


















