বিশ্বের তিন প্রভাবশালী গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার: কেন ক্ষমা চাইবেন না জানালেন শেখ হাসিনা
- আপডেট সময় : ১২:৫০:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
- / 413
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার একযোগে প্রকাশ করেছে বিশ্বের তিনটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এই প্রথম সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলো শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট। সাক্ষাৎকারগুলো নেওয়া হয়েছে ই–মেইলে।
সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যায় তাঁর দায়, আসন্ন নির্বাচন, দেশে ফেরা, ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিচার এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় নেবেন না তিনি।
সাক্ষাৎকারে যখন হাসিনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, নিহত বিক্ষোভকারীদের পরিবারের কাছে তিনি ক্ষমা চাইবেন কি না? জবাবে হাসিনা বলেন, ‘আমি আমাদের প্রতিটি সন্তান, ভাই, বোন ও বন্ধুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। আমি তাদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাতে থাকবো।’ তবে হাসিনা দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, তিনি কখনো পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি।
হাসিনা বলেন, তিনি কোনো হত্যাকাণ্ডের দায় ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। বরং তিনি ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে ‘একটি সহিংস বিদ্রোহ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন, ‘একজন নেতা হিসেবে আমি সার্বিকভাবে দায় স্বীকার করি। কিন্তু এই অভিযোগ যে আমি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম- এটি সম্পূর্ণ ভুল।’
নিজের বিচার প্রসঙ্গে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চলছে শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের। শেখ হাসিনাকে ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করা হয়েছে। অভিযোগ হচ্ছে, হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ফলে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন।
শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ১ হাজার ৪০০ মৃত্যুর সংখ্যাটি ‘অতিরঞ্জিত’। তাঁর ভাষায়, ‘এই সংখ্যা ট্রাইব্যুনালের প্রচারণার কাজে লাগে, কিন্তু বাস্তবে তা বাড়িয়ে বলা।’
এ নিয়ে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘যদি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাতে আমি অবাক হব না বা ভয়ও পাব না। এটি একটি প্রহসনের বিচার, যার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করছে। এই ট্রাইব্যুনাল একটি প্রহসনের আদালত, যেটি পরিচালনা করছে আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে গঠিত একটি অনির্বাচিত সরকার। এই প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেকেই আমাকে সরাতে যেকোনো কিছু করতে পারে।’
দেশত্যাগ ও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে
দেশত্যাগ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ায় তিনি চলে যান। তিনি বলেন, ‘থেকে গেলে আমার জীবন যেমন ঝুঁকিতে পড়ত, আশপাশের মানুষদের জীবনও তেমনি বিপদে পড়ত।’ তবে নির্বাসনে থাকলেও তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর ভাষায়, ‘শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই দেশকে সুস্থ করতে পারে।’
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো সরকার যদি এমন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যেখানে তাঁর দল থাকবে না, তবে তিনি সেই সরকারের অধীনে বাংলাদেশে ফিরবেন না। তিনি ভারতে থাকার পরিকল্পনা করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একদিন আবার বাংলাদেশের ভবিষ্যতে ভূমিকা রাখবে, সরকারে থাকুক বা বিরোধী দলে। আর এই দল পরিচালনার জন্য তাঁর পরিবার দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘এটা আমার বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংবিধান ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না।’


















