ঢাকা ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

শত মানুষের ভিড়ে বাবাকে খুঁজছে কালামের দুই অবুঝ সন্তান
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে নিহত

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:২৮:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / 98

বাবাকে খুঁজছে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালাম আজাদের সন্তান

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আব্দুল্লাহ আর পারিসা—নিষ্পাপ দুই জোড়া চোখ। শত মানুষের ভিড়ে তারা খুঁজে ফিরছে তাদের বাবা, আবুল কালাম আজাদকে। এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, তাদের বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। আর কখনো ফিরবে না, কোলেও নেবে না তাদের। বাবার মৃত্যুর পর এক নিমিষে অন্ধকার নেমে এসেছে এই দুই শিশুর জীবনে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার মাশুল যেন দিতে হচ্ছে এই দুই সন্তানের ভবিষ্যৎকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার একটি বেসরকারি এজেন্সিতে চাকরি করতেন এবং আয়ের একটি অংশ পাঠাতেন গ্রামের বাড়িতে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় যাওয়ার সময় মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার ওপর। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আবুল কালাম। পরে মরদেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদরাসা মাঠে তার জানাজা সম্পন্ন হয়।

এর আগে রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় মরদেহ। জানাজায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন। পরে তাকে নড়িয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে দুই শিশু সন্তান নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন স্ত্রী প্রিয়া। সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এলেও তা তাদের জীবনের জন্য অপ্রতুল। কীভাবে সন্তানদের নিয়ে আগামীর দিনগুলো পার করবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখন অজানা। স্বজনরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণেই এই মর্মান্তিক মৃত্যু।

নিহত আবুল কালামের স্ত্রী প্রিয়া বলেন, “আমার হাজবেন্ড ছাড়া আমাদের এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আমাদের সংসার এখন কীভাবে চলবে? ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিয়ে কী করবো, বুঝতে পারছি না। সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ—আমার স্বামীর মতো যেন আর কারও মৃত্যু না হয়।”

প্রতিদিনের মতোই ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় রোববারও ছিল যান্ত্রিক কোলাহল। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসের হর্ন আর রিকশার বেলের শব্দে আবুল কালাম টেরও পাননি, এটাই হবে তার জীবনের শেষ যাত্রা। এক মুহূর্তে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার জীবন কেড়ে নেয়।

সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তবে স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, শুধু আশ্বাস নয়—পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে হবে কার্যকরভাবে।

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি বলেন, “সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকা অনুদানের কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আবুল কালামের আয়ে পুরো পরিবার চলতো। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, অন্তত এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, যাতে তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হয়।”

নিহতের আরেক আত্মীয় কাওসার আহম্মেদ বলেন, “আমরা মনে করি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন একটি তাজা প্রাণ হারাবে, তা কল্পনাও করিনি। আমরা তদন্ত ও পরিবারটির সহায়তায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করি।”

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি জেনেছি। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

শত মানুষের ভিড়ে বাবাকে খুঁজছে কালামের দুই অবুঝ সন্তান
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে নিহত

আপডেট সময় : ১১:২৮:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

আব্দুল্লাহ আর পারিসা—নিষ্পাপ দুই জোড়া চোখ। শত মানুষের ভিড়ে তারা খুঁজে ফিরছে তাদের বাবা, আবুল কালাম আজাদকে। এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, তাদের বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। আর কখনো ফিরবে না, কোলেও নেবে না তাদের। বাবার মৃত্যুর পর এক নিমিষে অন্ধকার নেমে এসেছে এই দুই শিশুর জীবনে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার মাশুল যেন দিতে হচ্ছে এই দুই সন্তানের ভবিষ্যৎকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার একটি বেসরকারি এজেন্সিতে চাকরি করতেন এবং আয়ের একটি অংশ পাঠাতেন গ্রামের বাড়িতে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় যাওয়ার সময় মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার ওপর। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আবুল কালাম। পরে মরদেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদরাসা মাঠে তার জানাজা সম্পন্ন হয়।

এর আগে রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় মরদেহ। জানাজায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন। পরে তাকে নড়িয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে দুই শিশু সন্তান নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন স্ত্রী প্রিয়া। সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এলেও তা তাদের জীবনের জন্য অপ্রতুল। কীভাবে সন্তানদের নিয়ে আগামীর দিনগুলো পার করবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখন অজানা। স্বজনরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণেই এই মর্মান্তিক মৃত্যু।

নিহত আবুল কালামের স্ত্রী প্রিয়া বলেন, “আমার হাজবেন্ড ছাড়া আমাদের এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আমাদের সংসার এখন কীভাবে চলবে? ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিয়ে কী করবো, বুঝতে পারছি না। সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ—আমার স্বামীর মতো যেন আর কারও মৃত্যু না হয়।”

প্রতিদিনের মতোই ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় রোববারও ছিল যান্ত্রিক কোলাহল। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসের হর্ন আর রিকশার বেলের শব্দে আবুল কালাম টেরও পাননি, এটাই হবে তার জীবনের শেষ যাত্রা। এক মুহূর্তে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার জীবন কেড়ে নেয়।

সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তবে স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, শুধু আশ্বাস নয়—পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে হবে কার্যকরভাবে।

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি বলেন, “সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকা অনুদানের কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আবুল কালামের আয়ে পুরো পরিবার চলতো। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, অন্তত এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, যাতে তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হয়।”

নিহতের আরেক আত্মীয় কাওসার আহম্মেদ বলেন, “আমরা মনে করি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন একটি তাজা প্রাণ হারাবে, তা কল্পনাও করিনি। আমরা তদন্ত ও পরিবারটির সহায়তায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করি।”

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি জেনেছি। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”