২৯ বছর পর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার নির্দেশ
- আপডেট সময় : ০৫:৪৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
- / 126
চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান।
এদিন সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার মা নীলা চৌধুরীর দায়ের করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
আদালত সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগপত্র ও ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানা পুলিশকে।
আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, “সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়, তা উঠে আসে। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি।”
তিনি আরও বলেন, “সবশেষে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আদালত সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতি দেন। আজ আদালত সেই আদেশ বাতিল করে কমর উদ্দিনের অভিযোগ ও রিজভী আহমেদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। রমনা মডেল থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজের ফ্ল্যাটে মারা যান চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন)। সে সময় তিনি ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক।
ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই তিনি মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন জানান।
এরপর আদালত সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর সিআইডি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন।
এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমর উদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।
বাবার মৃত্যুর পর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী মামলাটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ জানান এবং ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, তারা তার ছেলের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
এরপর মামলাটি র্যাব তদন্ত শুরু করে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তিতে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত র্যাবকে তদন্ত না করার নির্দেশ দেন।
তদন্তের দায়িত্ব পরে পায় পিবিআই। চার বছর তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
পিবিআই জানায়, “ঘটনাস্থলে উপস্থিত ও সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি এবং জব্দ করা আলামত বিশ্লেষণ করে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
তারা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করে, “চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, পারিবারিক কলহ এবং স্ত্রী সামিরা হকের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে মা নীলা চৌধুরীর কাছ থেকে আলাদা থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন।”
ওই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হননি নীলা চৌধুরী। তিনি আরও তদন্তের দাবি জানান।
২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতি দেন।
এরপর সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে রিভিশন আবেদন করা হয়, যা ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত গ্রহণ করেন। তবে দীর্ঘদিন শুনানি স্থগিত থাকার পর সম্প্রতি রিভিশন শুনানি সম্পন্ন হয়।
গত ১৩ অক্টোবর শুনানি শেষে ২০ অক্টোবর (সোমবার) আদেশের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক।



















