এইচএসসিতেও পাসের হারে ধস, দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন
- আপডেট সময় : ০২:১১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
- / 118
এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার নেমে এসেছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। দ্বাদশ শ্রেণি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৯ হাজার ৯৭ জন জিপিএ–৫ পেয়েছে, যা মোট উত্তীর্ণের ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
এর আগে ২০২৪ সালে এই পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ–৫ পেয়েছিল। অর্থাৎ, এক বছরে পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ পয়েন্ট, আর জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বোর্ড চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ কার্যালয়ে বসে ফল প্রকাশ করেন। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যাচ্ছে।
গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নতুন প্রশাসনের অধীনে খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলে যাওয়ায় মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কোভিড–১৯ পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়। তবে ২০২৪ সালে সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর ছাত্র–জনতার আন্দোলন এবং সরকার পতনের ঘটনাপ্রবাহে বাকিগুলো নেওয়া সম্ভব হয়নি।
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা মহামারী ও বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হয়। তখন পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, জিপিএ–৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
২০২১ সালের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় পাস করেছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, জিপিএ–৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন।
২০২০ সালে মহামারীর কারণে পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসি ফলের ভিত্তিতে সবাইকে পাস দেখানো হয়, তখন জিপিএ–৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, জিপিএ–৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।
২০২০ সালে পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা ২০২৪ সালে আংশিকভাবে কাজে লাগে। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর নম্বর এসএসসির ফলের সঙ্গে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়।
রাজধানীর ইডেন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা বলেন, “গ্রেস মার্ক দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকদিন ধরেই চালু ছিল। পরীক্ষকদের মানসিকতার ওপরই তা নির্ভর করত। অনেকে মায়া করে ৩১ বা ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দিতেন। এখন যদি বোর্ড থেকে গ্রেস মার্ক না দিতে বলা হয়, তাহলে পাসের হার ও জিপিএ–৫ কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।”
আগের সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও এবার তা হয়নি। বরং ঢাকা বোর্ডে সংবাদ সম্মেলন করে সব বোর্ডের সার্বিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
মোট পরীক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
এবার সারা দেশের ৯ হাজার ৩০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়।
শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান কমেছে, বেড়েছে শূণ্য পাস প্রতিষ্ঠান
এবার সারা দেশে ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি। অর্থাৎ এক বছরে শতভাগ পাসকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৪৩টি। অপরদিকে ২০২টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। যা গত বছর ছিল মাত্র ৬৫টি।
🔹 এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ২০২৫
- মোট পরীক্ষার্থী: ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন
- পাস করেছে: ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন
- সার্বিক পাসের হার: ৫৮.৮৩%
বোর্ডভিত্তিক ফলাফল
- সাধারণ শিক্ষা বোর্ড: পাস ৫৭.১২%, জিপিএ–৫ ৬৩,২১৯ জন
- মাদ্রাসা বোর্ড: পাস ৭৫.৬১%, জিপিএ–৫ ৪,২৬৮ জন
- কারিগরি বোর্ড: পাস ৬২.৬৭%, জিপিএ–৫ ১,৬১০ জন
লিঙ্গভিত্তিক ফলাফল
- ছাত্র: পাস ৫৪.৬০%, জিপিএ–৫ ৩২,০৫৩ জন
- ছাত্রী: পাস ৬২.৯৭%, জিপিএ–৫ ৩৭,০৪৪ জন
🔹 ফল জানার উপায়
- ওয়েবসাইটে: www.educationboardresults.gov.bd
- রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট সংগ্রহ।
- বোর্ডভিত্তিক রেজাল্ট: www.dhakaeducationboard.gov.bd
- প্রতিষ্ঠানের EIIN দিয়ে ইনস্টিটিউটভিত্তিক রেজাল্ট।
- এসএমএসে ফল জানতে:HSC <space> বোর্ডের সংক্ষিপ্ত নাম <space> রোল <space> বছর <space> পাঠাতে হবে 16222 নম্বরে।


















