ঢাকার শিক্ষক সমাবেশে কাঁদুনে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান
- আপডেট সময় : ০৪:২৬:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
- / 105
বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে দিয়েছে পুলিশ।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার সময় প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামানও ব্যবহার করা হয়। ঘটনার পর সকাল থেকে বন্ধ থাকা সড়কটি পুনরায় সচল হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা বিশেষ প্রতিনিধি সুমন মাহমুদ জানান, দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলা হয়। তবে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ তাতে রাজি হয়নি এবং তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে।
এরপর পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। পরে সেগুনবাগিচা সড়ক, তোপখানা সড়ক ও সার্ক ফোয়ারা এলাকায় পুলিশ অবস্থান নেয়।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, “আন্দোলনকারীদের মূল অংশ শহীদ মিনারে চলে গেলেও একটি অংশ সড়ক বন্ধ করে অবস্থান করছিল। তাদের বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা সড়ক ছাড়েনি। তাই আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করেছি।”
কাউকে আটক করা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কয়েকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছিল, এমন ৩-৪ জনকে আমরা আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।”
এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশের অনুরোধে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শহীদ মিনারে চলে যায়।
আন্দোলনকারীদের নেতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী দুপুর দেড়টার দিকে বলেন, “প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক ছেড়ে দিয়েছি। আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালাব। সব শিক্ষক-কর্মচারীকে শহীদ মিনারে এসে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতিও চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরব না।”
নওগাঁ থেকে আসা শিক্ষক অহিদুল ইসলাম দুপুর দেড়টার সময় বলেন, “আমরা প্রেস ক্লাব থেকে এসে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।”
রবিবার সকালে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি’ শুরু করেন। তাদের দাবি—
-
শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ করা,
-
চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা করা,
-
কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা।
দাবি আদায়ে আগামী মঙ্গলবার থেকে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণাও দেন তারা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে। কিন্তু ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এরপর ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা কমপক্ষে দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তাদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা এবং বাড়িভাড়া ভাতা ১,০০০ টাকা, যা সম্প্রতি ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
আগে তারা বছরে দুইবার ২৫ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পেতেন। গত মে মাসে তা বাড়িয়ে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

















