নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন
জোহরান মামদানিকে হারাতে মাঠে নামছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
- আপডেট সময় : ০৬:১৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 147
মাত্র ৩৩ বছর বয়সী স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানিকে ৭৯ বছর বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখছেন ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ বা ‘ইজ্জতের প্রশ্ন’ হিসেবে। ট্রাম্প চান না, স্বঘোষিত ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান বিশ্ববাণিজ্যের রাজধানী নিউইয়র্কের মেয়র হন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি। তাকে ঠেকাতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই মাঠে নামছেন—এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা—জোহরানের বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী নয়, বরং একজন প্রার্থীকে দাঁড় করানো। তাতে জোহরান-বিরোধী সব ভোট পড়বে এক জায়গায়, আর এভাবেই নিশ্চিত হবে তার পরাজয়।
শুধু ইচ্ছা প্রকাশেই থেমে নেই ট্রাম্প। নিউইয়র্ককে ‘একজন সমাজতান্ত্রিকের হাত থেকে রক্ষা করতে’ তিনি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
৬৫ বছর বয়সী এরিক ডেমোক্র্যাটিক মেয়র হলেও এবার লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে, কেননা দলে তার জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেছে। অন্যদিকে, ৬৭ বছর বয়সী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো দলীয় মনোনয়নে জোহরানের কাছে হেরে গিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকেও (৭১) প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরাতে উদ্যোগ নিচ্ছেন ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমস–এর ৪ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের উপদেষ্টারা স্লিওয়াকে নতুন চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন যাতে তিনি প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ান।
শুধু স্লিওয়া নয়, এরিক অ্যাডামসের জন্যও নতুন পদ নিয়ে আলোচনার খবর ছড়িয়েছে। এমনকি তাকে মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্রদূত করার জল্পনাও ওঠে। তবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনো অনেকটা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
ফ্লোরিডার ভোটার হলেও ট্রাম্প নিউইয়র্কের পুরোনো বাসিন্দা। তিনি চান, নিউইয়র্কের মেয়র পদ রিপাবলিকানদের হাতে যাক। এ ক্ষেত্রে তিনি ভরসা করছেন কুয়োমোর ওপর, যাকে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান মনে করেন এবং যিনি জোহরান-বিরোধী ভোট একত্র করতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করেন।
হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, যতক্ষণ না একজন প্রার্থীকে সামনে আনা হচ্ছে, ততক্ষণ জেতার সম্ভাবনা নেই। আমি চাই দুই প্রার্থী প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াক। তখন নির্বাচন হবে একজনের বিপরীতে আরেকজনের। এটাই হবে আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।”
তার এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয়, জোহরানের বিপরীতে একজনকে দাঁড় করাতেই তিনি উদ্যোগী।
সেই হিসাবে কুয়োমোকেই সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্প। কেননা এরিকের জনপ্রিয়তা কমেছে এবং রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়ার জয় পাওয়া নিউইয়র্কের মতো শহরে প্রায় অসম্ভব। ২০২১ সালের নির্বাচনে এরিকের বিপক্ষে রিপাবলিকান প্রার্থী হয়ে স্লিওয়া পান প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট। তবে এবারও তার জেতার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, স্লিওয়ার সমর্থকদের বড় একটি অংশ কুয়োমোকে পছন্দ করে না। কারণ, যৌন কেলেঙ্কারির কারণে গভর্নর পদ থেকে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। আবার ট্রাম্পের মতো নেতা কুয়োমোকে সমর্থন করায় অনেক ট্রাম্প-সমর্থকও অসন্তুষ্ট।
৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কভিত্তিক এবিসি নিউজ তাদের প্রতিবেদনে শিরোনাম করে: “নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে হোয়াইট হাউসের হস্তক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের প্রতি অবমাননা’ বলেছেন জোহরান মামদানি।”
এ বিষয়ে জোহরানের মন্তব্য, “সবাই জেনে গেছেন, অ্যান্ড্রু কুয়োমো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রার্থী। নিউইয়র্কবাসী অনেক দিন ধরেই এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “শোনা যাচ্ছে, হোয়াইট হাউস থেকে এরিক অ্যাডামস ও কার্টিস স্লিওয়াকে নতুন চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে এর প্রভাব কী হবে তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা যেমন গতকাল আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, আজও তাই আছি। নভেম্বরে জয় আমাদেরই হবে।”
৫ সেপ্টেম্বর জোহরানের প্রচারণা দল ফক্স নিউজ ডিজিটালকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, “ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই মেয়র নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চান, তবে তার নিউইয়র্ক শহরে আসা উচিত।”
এনবিসি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানির নির্বাহীদের সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, “আমি কোনো কমিউনিস্টকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই না।”
তবে তিনি কোন দুই প্রার্থীকে সরে যেতে দেখতে চান তা প্রকাশ করেননি।
সিবিএস জানায়, নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন এখন শুধু শহরের আলোচনার বিষয় নয়, হোয়াইট হাউসেও তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চার প্রার্থীর মধ্যে। এক জরিপে দেখা গেছে, এগিয়ে আছেন জোহরান মামদানি। তবে সরাসরি একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তার লড়াই হলে ফলাফল অনিশ্চিত। ট্রাম্প যেন সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছেন।
এখন প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি কেবল নিউইয়র্কের মেয়র পদ থেকে মামদানিকে সরাতে চাইছেন, নাকি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ডেমোক্র্যাট নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অঙ্কুরেই শেষ করে দিতে চাইছেন?

















