ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সোশাল মিডিয়ার নিষেধাজ্ঞা

জেন জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল: কারফিউ জারি, সংঘর্ষে নিহত ১৪

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 154

নেপালে সংসদের প্রবেশপথের কাছে একটি যানবাহনের উপরে দাঁড়িয়ে পতাকা নাড়াচ্ছেন এক বিক্ষোভকারী।

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপ নিষিদ্ধকরণ এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাস্তায় নেমে আসা জেন-জি প্রজন্মের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক।

হাসপাতাল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নেপালি গণমাধ্যম দ্য হিমালয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ক্রুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙে পার্লামেন্টের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা গাছের ডাল ও পানির বোতল ব্যবহার করে পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে পুলিশ জলকামান, কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এ অবস্থায় কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় কারফিউর পরিধি বাড়ায়। শুরুতে কারফিউ কেবল বানেশ্বর এলাকায় ছিল। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন (লাইনচুরে, মহারাজগঞ্জ), সিঙ্গা দুর্বার এলাকা, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় নতুন করে কারফিউ জারি হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, বানেশ্বরে বিক্ষোভ কাভার করতে গিয়ে কান্তিপুর টেলিভিশনের সাংবাদিক শ্যাম শ্রেষ্ঠা রাবার বুলেটে আহত হন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির শহর দামাকেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

কাঠমান্ডুর পর নেপালের বিভিন্ন এলাকায়ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পোখারায় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর সেখানে কারফিউ জারি হয়।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ওলি মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।

তরুণদের আহ্বানে সোমবার কাঠমান্ডুতে এ বিক্ষোভ হয়। তারা কয়েক ডজন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দুর্নীতির অবসান দাবি করে।

নেপালের সরকার গত শুক্রবার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দেয়। এতে ফেইসবুক, এক্স, ইউটিউবসহ একাধিক সাইটে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দক্ষিণ এশীয় দেশটির লাখো ব্যবহারকারী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে, জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক এক বার্তা সংস্থা।

দেশটির লাখো মানুষ নিয়মিত ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিনোদন, খবর এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

সোমবারের কর্মসূচি শুরু হয় জাতীয় সংগীত গেয়ে। পরে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে।

২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি বলেন,
“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের টনক নড়িয়েছে, যদিও এখানে একত্রিত হওয়ার এটিই একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছি, কারণ দুর্নীতি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।”

২০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী ইক্ষমা তুমরক বলেন, “সরকারের কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা পরিবর্তন চাই। অন্যরা হয়তো মেনে নিয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের হাতেই এর শেষ হবে।”

নিষেধাজ্ঞার পর ফেইসবুক, এক্স, ইউটিউব ব্যবহার বন্ধ হলেও টিকটক সচল থাকায় সেখানে ভাইরাল হচ্ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আর রাজনীতিকদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন ও বিদেশে ছুটি কাটানোর তুলনামূলক ভিডিও।

বিক্ষোভকারী ভূমিকা ভারতী বলেন, “বিদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন হয়েছে, এখানেও সেরকম কিছু হবে বলে সরকার ভয় পাচ্ছে।”

উল্লেখ্য, নেপালের সরকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন, স্থানীয় যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি ও নিয়ম মেনে চলা পর্যবেক্ষণে দুই কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছিল।

রোববার এক বিবৃতিতে নেপাল সরকার জানায়, তারা মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এসবের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে নেপাল জনপ্রিয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বাড়ার অভিযোগে গত জুলাইয়ে ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম বন্ধ করা হয়।

আরও আগে, টিকটকের ওপর নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান নেপালের আইন মেনে চলতে সম্মত হলে তুলে নেওয়া হয় (গত বছরের আগস্টে)।

নিউজটি শেয়ার করুন

সোশাল মিডিয়ার নিষেধাজ্ঞা

জেন জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল: কারফিউ জারি, সংঘর্ষে নিহত ১৪

আপডেট সময় : ০৫:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপ নিষিদ্ধকরণ এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাস্তায় নেমে আসা জেন-জি প্রজন্মের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক।

হাসপাতাল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নেপালি গণমাধ্যম দ্য হিমালয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ক্রুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙে পার্লামেন্টের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা গাছের ডাল ও পানির বোতল ব্যবহার করে পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে পুলিশ জলকামান, কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এ অবস্থায় কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় কারফিউর পরিধি বাড়ায়। শুরুতে কারফিউ কেবল বানেশ্বর এলাকায় ছিল। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন (লাইনচুরে, মহারাজগঞ্জ), সিঙ্গা দুর্বার এলাকা, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় নতুন করে কারফিউ জারি হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, বানেশ্বরে বিক্ষোভ কাভার করতে গিয়ে কান্তিপুর টেলিভিশনের সাংবাদিক শ্যাম শ্রেষ্ঠা রাবার বুলেটে আহত হন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির শহর দামাকেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

কাঠমান্ডুর পর নেপালের বিভিন্ন এলাকায়ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পোখারায় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর সেখানে কারফিউ জারি হয়।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ওলি মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।

তরুণদের আহ্বানে সোমবার কাঠমান্ডুতে এ বিক্ষোভ হয়। তারা কয়েক ডজন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দুর্নীতির অবসান দাবি করে।

নেপালের সরকার গত শুক্রবার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দেয়। এতে ফেইসবুক, এক্স, ইউটিউবসহ একাধিক সাইটে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দক্ষিণ এশীয় দেশটির লাখো ব্যবহারকারী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে, জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক এক বার্তা সংস্থা।

দেশটির লাখো মানুষ নিয়মিত ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিনোদন, খবর এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

সোমবারের কর্মসূচি শুরু হয় জাতীয় সংগীত গেয়ে। পরে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে।

২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি বলেন,
“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের টনক নড়িয়েছে, যদিও এখানে একত্রিত হওয়ার এটিই একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছি, কারণ দুর্নীতি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।”

২০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী ইক্ষমা তুমরক বলেন, “সরকারের কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা পরিবর্তন চাই। অন্যরা হয়তো মেনে নিয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের হাতেই এর শেষ হবে।”

নিষেধাজ্ঞার পর ফেইসবুক, এক্স, ইউটিউব ব্যবহার বন্ধ হলেও টিকটক সচল থাকায় সেখানে ভাইরাল হচ্ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আর রাজনীতিকদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন ও বিদেশে ছুটি কাটানোর তুলনামূলক ভিডিও।

বিক্ষোভকারী ভূমিকা ভারতী বলেন, “বিদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন হয়েছে, এখানেও সেরকম কিছু হবে বলে সরকার ভয় পাচ্ছে।”

উল্লেখ্য, নেপালের সরকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন, স্থানীয় যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি ও নিয়ম মেনে চলা পর্যবেক্ষণে দুই কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছিল।

রোববার এক বিবৃতিতে নেপাল সরকার জানায়, তারা মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এসবের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে নেপাল জনপ্রিয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বাড়ার অভিযোগে গত জুলাইয়ে ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম বন্ধ করা হয়।

আরও আগে, টিকটকের ওপর নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান নেপালের আইন মেনে চলতে সম্মত হলে তুলে নেওয়া হয় (গত বছরের আগস্টে)।