ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সরকারের সমালোচনাই কাল হলো, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান গ্রেপ্তার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:২৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 253

আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বোরাক টাওয়ার থেকে তাকে আটক করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগ সোমবার জানায়, শাহবাগ থানার একটি মামলায় রবিবার রাতে নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন শহীদ খান। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া মব সন্ত্রাসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের নানা ব্যর্থনা নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন। সরকারের সমালোচনা করে আসছিলেন। এ সব সমালোচনাই তার জন্য কাল হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান জানান,
“ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১-এর অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনার পর সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, একই মামলায় আবু আলম শহীদ খানকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

১৯৯৬ সালে সচিবালয়ে বিএনপি সরকারের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা ‘জনতার মঞ্চ’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন শহীদ খান। একই বছর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে তাকে ওএসডি হিসেবে থাকতে হয়। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর তিন মাসের মধ্যে পরপর চার ধাপে পদোন্নতি পেয়ে তিনি জ্যেষ্ঠ সচিব হন।

সে সময় তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী সচিব। স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের পদে থেকে তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান।

আবু আলম শহীদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। অবসরের পর তিনি কিছুদিন যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন।

 কারাগারে প্রেরণ

ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান আসামিকে আদালতে হাজির কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানিকালে আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলো না।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেগুনবাগিচাস্থ সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) তে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন।

একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেওয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

সরকারের সমালোচনাই কাল হলো, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান গ্রেপ্তার

আপডেট সময় : ০৪:২৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বোরাক টাওয়ার থেকে তাকে আটক করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগ সোমবার জানায়, শাহবাগ থানার একটি মামলায় রবিবার রাতে নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন শহীদ খান। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া মব সন্ত্রাসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের নানা ব্যর্থনা নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন। সরকারের সমালোচনা করে আসছিলেন। এ সব সমালোচনাই তার জন্য কাল হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান জানান,
“ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১-এর অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনার পর সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, একই মামলায় আবু আলম শহীদ খানকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

১৯৯৬ সালে সচিবালয়ে বিএনপি সরকারের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা ‘জনতার মঞ্চ’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন শহীদ খান। একই বছর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে তাকে ওএসডি হিসেবে থাকতে হয়। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর তিন মাসের মধ্যে পরপর চার ধাপে পদোন্নতি পেয়ে তিনি জ্যেষ্ঠ সচিব হন।

সে সময় তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী সচিব। স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের পদে থেকে তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান।

আবু আলম শহীদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। অবসরের পর তিনি কিছুদিন যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন।

 কারাগারে প্রেরণ

ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান আসামিকে আদালতে হাজির কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানিকালে আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলো না।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেগুনবাগিচাস্থ সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) তে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন।

একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেওয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম।