বদরুদ্দীন উমর আর নেই
- আপডেট সময় : ০৫:৩০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 92
প্রখ্যাত লেখক-গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর শ্যামলীতে স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
তিনি আরও জানান, গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে বদরুদ্দীন উমর হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১০ দিন চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফেরেন গত সপ্তাহে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বামপন্থী চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি পরিচিত। স্পষ্ট বক্তব্য, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তিনি বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচিত ও শ্রদ্ধেয়।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের একজন সর্বভারতীয় নেতা। তিনি ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ষাটের দশকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তার লেখা বইগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বদরুদ্দীন উমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বদরুদ্দীন উমর তাঁর পেশাজীবন শুরু করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১১ বছরের শিক্ষকতা করে তিনি শাসকদের অধীনে চাকরি পর্যন্ত করবেন না, এ মনোভাব পোষণ করে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সংগ্রাম ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় তিনি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ঊনসত্তরের গণআন্দোলন তার গবেষণার উল্লেখযোগ্য বিষয়। তার চিন্তা বুঝতে সহায়ক বিশেষ করে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭), ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯)—তিনটি বই। এই বই লিখেই তিনি ক্ষান্ত হননি। তার রচিত অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’, ‘বাংলা সাহিত্য ও সমাজ’, ‘ঊনসত্তরের গণআন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, চলতি বছর লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরসহ ৮ বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। তবে বদরুদ্দীন উমর পুরস্কারটি ফিরিয়ে দেন। এর আগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
বদরুদ্দীন উমর ছিলেন উজ্জ্বল বাতিঘর: প্রধান উপদেষ্টা
মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়া বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর।
তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের পরিবর্তনের জন্য গোঁড়া থেকেই গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছেন এবং জুলাই আন্দোলনকে উপমহাদেশের একটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর শুধু একজন তাত্ত্বিক ছিলেন না, ছিলেন একজন সংগ্রামী, যিনি আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তাশীল মানুষদের জন্য তার লেখনী ও জীবনদর্শন এক অনন্য পথনির্দেশ হিসেবে কাজ করবে।”

















