ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

৬ দিন পর জ্ঞান ফিরল সায়েমের, মামুনের খুলির অংশ এখনো ফ্রিজে

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:০০:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 87

আইসিইউতে ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছয় দিন পর অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের লাইফ সাপোর্ট সরানো হয়েছে। এখন তিনি হাত-পা নাড়াচ্ছেন এবং পরিবারকে চিনতে পারছেন। অন্যদিকে গুরুতর আহত আরেক শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার অবস্থাও স্থিতিশীল থাকলেও তার মাথার খুলির একটি অংশ এখনো ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে সায়েমের বিষয়ে দ্বিতীয়বার মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে। নিউরোসার্জন কামাল উদ্দিন, মো. ইসমাইল, মো. মনজুরুল ইসলাম ও নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাসানুজ্জামান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সিদ্ধান্তেই পরীক্ষামূলকভাবে সায়েমের লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। এর আগে গত বুধবারও সায়েমের জন্য মেডিকেল বোর্ড বসেছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সায়েম গত রোববার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। ধারালো রামদার কোপে তার মাথার খুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ছয় দিন ধরে হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এত দিন সায়েমের কনশাস লেভেল (চেতনার মান) ছিল মাত্র ৬। স্বাভাবিক মানুষের কনশাস লেভেল থাকে ১৫। এটি ১০-এর ওপরে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। বর্তমানে সায়েমের কনশাস লেভেল ১০-এর কাছাকাছি।

সায়েমের ভাই আসাদুজ্জামান সজীব বলেন, “ভাইয়ের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা আইসিইউর ভেতরে যাইনি। বাইরে থেকে খবর নিচ্ছি। ডাক্তাররা আশা দিলেও আমরা এখনো আশার আলো দেখছি না।”

সায়েমের বাড়ি কুমিল্লায় হলেও তার পরিবার থাকে বগুড়ায়। ছেলে আহত হওয়ার খবর শুনে গত সোমবার সকালে বাবা আমির হোসেন ও মা শাহনাজ আমিন চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। আইসিইউর সামনে বসেই অপেক্ষা করছেন ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার।

সায়েমের বাবা আমির হোসেন বলেন, “ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়েছি আল্লাহর কাছে। আশা করছি তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না।”

পার্কভিউ হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, “সায়েমের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো। তিনি হাত-পা নাড়াচ্ছেন, পরিবারকে চিনতে পারছেন। লাইফ সাপোর্ট খোলার পর তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। রামদার আঘাত এত গভীর ছিল যে তার মাথার খুলির একটি অংশ অপসারণ করতে হয়েছে। বর্তমানে সেটি ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে। মাথা মোড়ানো ব্যান্ডেজে লেখা আছে: “হাড় নেই, চাপ দেবেন না।”

মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, “মামুন এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে। তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে, তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ডাক্তাররা বলেছেন সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে এবং পরেও তাকে অনেক বিধিনিষেধ মানতে হবে।”

পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ ডা. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, “সায়েমের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে তার জ্ঞান ফিরেছে এবং রক্তচাপও কিছুটা উন্নতি করেছে।”

মামুন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খুলির অংশ ফ্রিজে রাখা আছে। সব ঠিক থাকলে দুই থেকে আড়াই মাস পর তা পুনঃস্থাপন করা হবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে।”

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় এক ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় এবং তা গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রায় ৪০০ জন আহত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

৬ দিন পর জ্ঞান ফিরল সায়েমের, মামুনের খুলির অংশ এখনো ফ্রিজে

আপডেট সময় : ১০:০০:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছয় দিন পর অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের লাইফ সাপোর্ট সরানো হয়েছে। এখন তিনি হাত-পা নাড়াচ্ছেন এবং পরিবারকে চিনতে পারছেন। অন্যদিকে গুরুতর আহত আরেক শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার অবস্থাও স্থিতিশীল থাকলেও তার মাথার খুলির একটি অংশ এখনো ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে সায়েমের বিষয়ে দ্বিতীয়বার মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে। নিউরোসার্জন কামাল উদ্দিন, মো. ইসমাইল, মো. মনজুরুল ইসলাম ও নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাসানুজ্জামান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সিদ্ধান্তেই পরীক্ষামূলকভাবে সায়েমের লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। এর আগে গত বুধবারও সায়েমের জন্য মেডিকেল বোর্ড বসেছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সায়েম গত রোববার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। ধারালো রামদার কোপে তার মাথার খুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ছয় দিন ধরে হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এত দিন সায়েমের কনশাস লেভেল (চেতনার মান) ছিল মাত্র ৬। স্বাভাবিক মানুষের কনশাস লেভেল থাকে ১৫। এটি ১০-এর ওপরে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। বর্তমানে সায়েমের কনশাস লেভেল ১০-এর কাছাকাছি।

সায়েমের ভাই আসাদুজ্জামান সজীব বলেন, “ভাইয়ের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা আইসিইউর ভেতরে যাইনি। বাইরে থেকে খবর নিচ্ছি। ডাক্তাররা আশা দিলেও আমরা এখনো আশার আলো দেখছি না।”

সায়েমের বাড়ি কুমিল্লায় হলেও তার পরিবার থাকে বগুড়ায়। ছেলে আহত হওয়ার খবর শুনে গত সোমবার সকালে বাবা আমির হোসেন ও মা শাহনাজ আমিন চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। আইসিইউর সামনে বসেই অপেক্ষা করছেন ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার।

সায়েমের বাবা আমির হোসেন বলেন, “ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়েছি আল্লাহর কাছে। আশা করছি তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না।”

পার্কভিউ হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, “সায়েমের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো। তিনি হাত-পা নাড়াচ্ছেন, পরিবারকে চিনতে পারছেন। লাইফ সাপোর্ট খোলার পর তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। রামদার আঘাত এত গভীর ছিল যে তার মাথার খুলির একটি অংশ অপসারণ করতে হয়েছে। বর্তমানে সেটি ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে। মাথা মোড়ানো ব্যান্ডেজে লেখা আছে: “হাড় নেই, চাপ দেবেন না।”

মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, “মামুন এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে। তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে, তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ডাক্তাররা বলেছেন সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে এবং পরেও তাকে অনেক বিধিনিষেধ মানতে হবে।”

পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ ডা. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, “সায়েমের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে তার জ্ঞান ফিরেছে এবং রক্তচাপও কিছুটা উন্নতি করেছে।”

মামুন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খুলির অংশ ফ্রিজে রাখা আছে। সব ঠিক থাকলে দুই থেকে আড়াই মাস পর তা পুনঃস্থাপন করা হবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে।”

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় এক ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় এবং তা গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রায় ৪০০ জন আহত হন।