বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ অবশেষে কারামুক্ত, মায়ের সান্নিধ্যে কান্না
- আপডেট সময় : ০৯:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 132
গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে ‘স্লোগান দেওয়া’র অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ শেখ নয় দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার মুক্তির খবর জানান মামা সুমন শেখ।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন মানবিক দিক বিবেচনা করে মঙ্গলবার জামিনের আদেশ দেন। সেই আদেশ বুধবার কারাগারে পৌঁছায়।
এদিন সকাল থেকে কারাগারের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন সাইদের মা, মামা ও আত্মীয়স্বজন। মুক্তির পর ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সুমি; সাথেই আবেগে ভেঙে পড়েন সাইদও।
মামা সুমন বলেন, “আমরা জীবনে কখনো কোর্ট-কাচারি বা জেলে যাইনি। সাইদকে এভাবে জেলে থাকতে হবে ভাবিনি। জেল থেকে বের হয়ে সাইদ কেঁদেছে, ওর মা-ও কেঁদেছে। এখন সাইদের মা ছেলেকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জের খাসহাটে গ্রামে চলে গেছে।”
গত ২৪ আগস্ট গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটককৃতদের একজন ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ শেখ।
২৫ আগস্ট সাইদকে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার এসআই মাকসুদুল হাসান। ওইদিন আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
পরের দিন সাইদের পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। তারা তাকে ‘প্রতিবন্ধী’ দাবি করে মুক্তির আবেদন করেন। আদালত শুনানির জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আরেকটি আবেদন জমা দেন, যেখানে সাইদকে ‘প্রতিবন্ধী’ নয় বরং ‘তোতলা বা অস্পষ্টভাষী’ হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ করা হয়।
২৮ আগস্ট সাইদকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জাকির হোসাইন বলেন, সাইদ প্রকৃতপক্ষে ‘প্রতিবন্ধী’ কি না তা জেল কোড অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষার পর প্রতিবেদন দিতে হবে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়।
তবে ২ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার জানান, ঢাকার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সেদিন আবারও জামিন শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “আসামি প্রতিবন্ধী নন, বরং তোতলা বা অস্পষ্টভাষী। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে কোনো প্রতিবেদনও আসেনি।”
দুই পক্ষের যুক্তি শোনার পর বিচারক বলেন, “এ বিষয়ে কিছু বলা জরুরি, নইলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। এ মামলাটি আমার কাছে তিনবার এসেছে, একবারও আমি মানবিক দিক উপেক্ষা করে জামিন খারিজ করিনি। তদন্ত কর্মকর্তা একটি ভিডিও দেখিয়েছেন— সেখানে আগের সরকারের (আওয়ামী লীগ) পক্ষে সাইদকে কথা বলতে দেখা গেছে, যদিও স্পষ্ট নয়। তবুও মানবিক কারণে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করা হলো।”
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশে রাজু আহমেদ, শেখ মো. শাকিল, বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ শেখসহ ২০০-২৫০ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্য ও সহযোগীরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে সমবেত হন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও তার প্রচারণায় অংশ নিয়ে তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। পুলিশ রাজু আহমেদ, শেখ মো. শাকিল ও সাইদ শেখকে আটক করলে বাকিরা পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনা এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য ও সমর্থক হিসেবে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।
পল্টন মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ওইদিনই (২৫ আগস্ট) সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন।

















