ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

মিছিলে ‘স্লোগান দেওয়া’র অভিযোগে গ্রেপ্তার বাকপ্রতিবন্ধী সাইদকে নিয়ে যা হলো

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 108

গ্রেপ্তার বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের সামনে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে ‘স্লোগান দেওয়া’র অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ শেখ জামিন পেয়েছেন। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাইদের আইনজীবী মোহাম্মদ লিটন মিয়া জানান, আশা করা যাচ্ছে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) তিনি কারামুক্ত হবেন।

গত ২৪ আগস্ট ওই মিছিল থেকে সাইদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক অপর দুই আসামি হলেন রাজু আহমেদ ও শেখ মো. শাকিল।

গ্রেপ্তারের পরের দিন ২৫ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই মাকসুদুল হাসান। তিনি সাইদকে বাকপ্রতিবন্ধী উল্লেখ করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করে।

পল্টন থানার মামলায় বলা হয়, আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট ও বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন।

২৬ আগস্ট সাইদের পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন, যেখানে তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আদালত তখন শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ আগস্ট।

এর মধ্যে ২৭ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করে জানান, সাইদ আসলে বাকপ্রতিবন্ধী নন, বরং তোতলা বা অস্পষ্টভাষী। কোনো দালিলিক প্রমাণও মেলেনি। আদালত এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ আগস্ট।

নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির করা হয় সাইদকে। শুনানিতে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম নির্দেশ দেন, জেল কোড অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সাইদ প্রতিবন্ধী কিনা তা পরীক্ষা করে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জামিন শুনানিতে যা হল

২৮ আগস্ট শুনানিতে সাইদের আইনজীবী উম্মে হাবিবা আদালতে বলেন, “সাইদ একজন বাকপ্রতিবন্ধী, কথা বলতে পারে না। বাকপ্রতিবন্ধী স্লোগান দিবে কীভাবে? নিজ হাতে ভাতও খেতে পারে না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রশাসনকে বুঝতে হবে সে প্রতিবন্ধী। এতদিন একজন প্রতিবন্ধীকে বন্দি রাখা অমানবিক। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”

রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “এ আসামি প্রতিবন্ধী নয়, বরং তোতলা বা অস্পষ্টভাষী। হাসিনা পালালেও তার দোসররা রয়ে গেছে। তাকে টাকা দিয়ে মিছিলে আনা হয়েছে। মিডিয়ায়ও স্টেটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি যোগ করেন, “আসামি প্রতিবন্ধী কিনা—এ নিয়ে এখনও প্রতিবেদন আসেনি। তাই জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।”

এরপর সাইদের আইনজীবীরা বলেন, “সে প্রতিবন্ধী না হলে পুলিশ কেন তাকে ধরবে?”

উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনায় একবারও আমি জামিন খারিজ করিনি। তদন্ত কর্মকর্তা ভিডিও দেখিয়েছেন, আগের সরকার (আওয়ামী লীগ) পক্ষে কথা বলেছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত মানবিক কারণে জামিন দেওয়া হলো।”

সাইদের আইনজীবী লিটন মিয়া বলেন, “তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। আশা করি বুধবারই তিনি মুক্তি পাবেন।”

মামলার বিবরণ

মামলায় বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গোলাপশাহ মাজারের সামনে রাজু আহমেদ, শেখ মো. শাকিল, সাইদ শেখসহ প্রায় দুই থেকে আড়াই শ’ জন সমবেত হয়। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলে বাকিরা পালিয়ে যায়।

পরিবার বলছে কী

২২ বছর বয়সী সাইদ তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। মুন্সিগঞ্জের খাসহাটে বাবা-মায়ের কাছে না থেকে নানি ও মামার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় থাকতেন। পরিবার জানায়, মাঝে মাঝে তিনি একা একাই অনেক দূরে চলে যেতেন।

মা সুমি বলেন, “ও নিজের হাতে ভাত খেতে পারে না, কাজকর্ম কিছুই করতে পারে না। দৌড়াতে গেলেই পড়ে যায়, কথাও বোঝা যায় না। এমন ছেলেকে জেলে রাখা হয়েছে—আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। মুক্তি চাই।”

তিনি আরও বলেন, “ও মাঝেমধ্যে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। নারায়ণগঞ্জ থেকে কীভাবে ঢাকায় গেল, আমরা জানি না।”

মামা সুমন বলেন, “জন্মের পর থেকে ও আমাদের কাছেই থাকে। প্রতিবন্ধী ছেলে রাজনীতি বোঝে না। যে নিজের কাজই করতে পারে না, সে রাজনীতি করবে কীভাবে? আমরা শুধু তার মুক্তি চাই।”

নিউজটি শেয়ার করুন

মিছিলে ‘স্লোগান দেওয়া’র অভিযোগে গ্রেপ্তার বাকপ্রতিবন্ধী সাইদকে নিয়ে যা হলো

আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের সামনে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে ‘স্লোগান দেওয়া’র অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাকপ্রতিবন্ধী সাইদ শেখ জামিন পেয়েছেন। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাইদের আইনজীবী মোহাম্মদ লিটন মিয়া জানান, আশা করা যাচ্ছে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) তিনি কারামুক্ত হবেন।

গত ২৪ আগস্ট ওই মিছিল থেকে সাইদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক অপর দুই আসামি হলেন রাজু আহমেদ ও শেখ মো. শাকিল।

গ্রেপ্তারের পরের দিন ২৫ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই মাকসুদুল হাসান। তিনি সাইদকে বাকপ্রতিবন্ধী উল্লেখ করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করে।

পল্টন থানার মামলায় বলা হয়, আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট ও বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন।

২৬ আগস্ট সাইদের পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন, যেখানে তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আদালত তখন শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ আগস্ট।

এর মধ্যে ২৭ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করে জানান, সাইদ আসলে বাকপ্রতিবন্ধী নন, বরং তোতলা বা অস্পষ্টভাষী। কোনো দালিলিক প্রমাণও মেলেনি। আদালত এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ আগস্ট।

নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির করা হয় সাইদকে। শুনানিতে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম নির্দেশ দেন, জেল কোড অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সাইদ প্রতিবন্ধী কিনা তা পরীক্ষা করে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জামিন শুনানিতে যা হল

২৮ আগস্ট শুনানিতে সাইদের আইনজীবী উম্মে হাবিবা আদালতে বলেন, “সাইদ একজন বাকপ্রতিবন্ধী, কথা বলতে পারে না। বাকপ্রতিবন্ধী স্লোগান দিবে কীভাবে? নিজ হাতে ভাতও খেতে পারে না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রশাসনকে বুঝতে হবে সে প্রতিবন্ধী। এতদিন একজন প্রতিবন্ধীকে বন্দি রাখা অমানবিক। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”

রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “এ আসামি প্রতিবন্ধী নয়, বরং তোতলা বা অস্পষ্টভাষী। হাসিনা পালালেও তার দোসররা রয়ে গেছে। তাকে টাকা দিয়ে মিছিলে আনা হয়েছে। মিডিয়ায়ও স্টেটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি যোগ করেন, “আসামি প্রতিবন্ধী কিনা—এ নিয়ে এখনও প্রতিবেদন আসেনি। তাই জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।”

এরপর সাইদের আইনজীবীরা বলেন, “সে প্রতিবন্ধী না হলে পুলিশ কেন তাকে ধরবে?”

উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনায় একবারও আমি জামিন খারিজ করিনি। তদন্ত কর্মকর্তা ভিডিও দেখিয়েছেন, আগের সরকার (আওয়ামী লীগ) পক্ষে কথা বলেছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত মানবিক কারণে জামিন দেওয়া হলো।”

সাইদের আইনজীবী লিটন মিয়া বলেন, “তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। আশা করি বুধবারই তিনি মুক্তি পাবেন।”

মামলার বিবরণ

মামলায় বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গোলাপশাহ মাজারের সামনে রাজু আহমেদ, শেখ মো. শাকিল, সাইদ শেখসহ প্রায় দুই থেকে আড়াই শ’ জন সমবেত হয়। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলে বাকিরা পালিয়ে যায়।

পরিবার বলছে কী

২২ বছর বয়সী সাইদ তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। মুন্সিগঞ্জের খাসহাটে বাবা-মায়ের কাছে না থেকে নানি ও মামার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় থাকতেন। পরিবার জানায়, মাঝে মাঝে তিনি একা একাই অনেক দূরে চলে যেতেন।

মা সুমি বলেন, “ও নিজের হাতে ভাত খেতে পারে না, কাজকর্ম কিছুই করতে পারে না। দৌড়াতে গেলেই পড়ে যায়, কথাও বোঝা যায় না। এমন ছেলেকে জেলে রাখা হয়েছে—আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। মুক্তি চাই।”

তিনি আরও বলেন, “ও মাঝেমধ্যে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। নারায়ণগঞ্জ থেকে কীভাবে ঢাকায় গেল, আমরা জানি না।”

মামা সুমন বলেন, “জন্মের পর থেকে ও আমাদের কাছেই থাকে। প্রতিবন্ধী ছেলে রাজনীতি বোঝে না। যে নিজের কাজই করতে পারে না, সে রাজনীতি করবে কীভাবে? আমরা শুধু তার মুক্তি চাই।”