ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

উন্নয়নশীল দেশগুলো কেন ডলার থেকে সরে যাচ্ছে

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৭:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 208

মার্কিন ডলারের পতন

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন ধীরে ধীরে ডলারভিত্তিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীনের রেনমিনবি (আরএমবি) ও সুইস ফ্রাঁর মতো স্বল্পসুদী মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার পথে ঝুঁকছে।

কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পানামার মতো ঋণগ্রস্ত দেশগুলো ইতোমধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোয় ঋণ পরিশোধের খরচ বেড়ে গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

অ্যালায়েন্সবার্নস্টেইনের গ্লোবাল ইকোনমিক রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট আর্মান্দো আরমেন্টা বলেন,
“উচ্চ সুদের হার ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের ঊর্ধ্বগতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ডলারভিত্তিক অর্থায়নকে আরও জটিল করে তুলেছে। এমনকি উদীয়মান বাজারের ঋণে তুলনামূলক কম সুদের ব্যবধান থাকলেও তা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন,
“ফলে দেশগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী বিকল্প খুঁজছে। তবে এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাময়িক সমাধান মাত্র।”

চীনা রেনমিনবির প্রতি ঝোঁক

চীনের রেনমিনবিতে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে বেইজিংয়ের ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে। এ প্রকল্পে চীন বিশ্বজুড়ে অবকাঠামো উন্নয়নে শত শত বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

  • কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যেই ডলার ঋণকে রেনমিনবিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে।

  • কেনিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা চীনের এক্সইম ব্যাংকের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের রেল প্রকল্পের ঋণ রেনমিনবিতে পরিশোধ নিয়ে আলোচনা করছে।

  • শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সংসদে বলেছেন, একটি মহাসড়ক প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেশটি নতুন রেনমিনবি ঋণ নিতে চায়। ২০২২ সালে ঋণ খেলাপির পর ওই প্রকল্প আটকে আছে।

সুদের হার তুলনা

  • বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ফান্ডস রেট ৪.২৫%–৪.৫%, যা অন্যান্য বড় অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে নতুন ডলার ঋণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ব্যয়বহুল।

  • সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক জুনে সুদের হার শূন্যে নামিয়েছে।

  • চীনের সাত দিনের রিভার্স রেপো রেট মাত্র ১.৪%

কলম্বোভিত্তিক ফ্রন্টিয়ার রিসার্চের অর্থনীতিবিদ থিলিনা পাণ্ডুভাল্লা বলেন,
“রেনমিনবিতে রূপান্তরের মূল কারণ হলো অর্থায়নের কম খরচ।”

২০১০-এর দশকে বেল্ট অ্যান্ড রোডের অধিকাংশ ঋণ ছিল ডলারে, কারণ তখন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার ছিল তুলনামূলক কম। এখন সুদের হার বাড়ায় কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার ঋণের খরচ বহুগুণ বেড়েছে।

সুইস ফ্রাঁর প্রতি আগ্রহ

  • পানামা এ বছর জুলাইয়ে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সুইস ফ্রাঁ ঋণ নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে।

  • দেশটির অর্থমন্ত্রী ফেলিপে চ্যাপম্যান জানান, এই সাশ্রয়ী অর্থায়নে পানামা ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাঁচিয়েছে এবং ঋণগুলো হেজ করা হয়েছে।

  • তিনি আরও বলেন, পানামা এখন কেবল ডলার নয়, ইউরো ও সুইস ফ্রাঁয় ঋণ ব্যবস্থাপনা করছে।

কলম্বিয়াও ডলার ঋণ পুনঃঅর্থায়নের জন্য সুইস ফ্রাঁ ঋণের দিকে এগোচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বৈশ্বিক কিছু ব্যাংক ছাড়মূল্যে কলম্বিয়ার বন্ড কিনতে চেয়েছে, যা নতুন সুইস ফ্রাঁ ঋণের পথ প্রশস্ত করার কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জুনে জানিয়েছিল, তারা বহির্বিশ্বে মুদ্রাভিত্তিক ঋণ বহুমুখীকরণের পরিকল্পনা করছে।

এক্সপি ইনভেস্টমেন্টসের লাতিন আমেরিকা ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজির প্রধান আন্দ্রেস পার্ডো বলেন,
“কলম্বিয়া দেড় শতাংশ সুদে সুইস ফ্রাঁ ঋণ নিয়ে আগের ৭–৮% সুদের ডলার ঋণ এবং স্থানীয় মুদ্রা পেসোর ১২% সুদের বন্ড কিনে নিতে পারবে।”

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

তবে বিশ্লেষকদের মতে, স্বল্পমেয়াদে সুইস ফ্রাঁ বা রেনমিনবিতে ঋণ নেওয়া দেশের সুদের চাপ কমালেও দীর্ঘমেয়াদে ডলারের বিকল্প হতে পারবে না। কারণ আন্তর্জাতিক ঋণবাজারে এখনও ডলারই প্রধান মুদ্রা।

এক উদীয়মান বাজারের ঋণ তহবিল ব্যবস্থাপক বলেন,
“আপনি যদি ঋণের মেয়াদী প্রোফাইল পরিষ্কার করেন তবে এসব পদক্ষেপ মৌলিক ভিত্তি শক্ত করে। তবে একইসঙ্গে দেখতে হবে, নীতিনির্ধারকরা আবারও (ডলার) বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করছেন কি না।”

ইউরোভিত্তিক বন্ডের উত্থান

শুধু সরকার নয়, উদীয়মান বাজারের কোম্পানিগুলোও এ বছর ইউরোভিত্তিক বন্ড বিক্রি বাড়িয়েছে।

  • জেপি মর্গানের তথ্যমতে, জুলাই পর্যন্ত ইউরোভিত্তিক করপোরেট বন্ডের পরিমাণ রেকর্ড ২৩৯ বিলিয়ন ডলার

  • ইমপ্যাক্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার টোক হিওর্টশয় বলেন,
    “এ বছর ইউরোভিত্তিক বন্ড ইস্যু ডলারের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে।”

  • তিনি আরও জানান, বর্তমানে এশীয় ইস্যুকারীরা ইউরোভিত্তিক ঋণের এক-তৃতীয়াংশ দখল করছে, যেখানে ১৫ বছর আগে এ হার ছিল মাত্র ১০–১৫%।

নিউজটি শেয়ার করুন

উন্নয়নশীল দেশগুলো কেন ডলার থেকে সরে যাচ্ছে

আপডেট সময় : ০৩:৩৭:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন ধীরে ধীরে ডলারভিত্তিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীনের রেনমিনবি (আরএমবি) ও সুইস ফ্রাঁর মতো স্বল্পসুদী মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার পথে ঝুঁকছে।

কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পানামার মতো ঋণগ্রস্ত দেশগুলো ইতোমধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোয় ঋণ পরিশোধের খরচ বেড়ে গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

অ্যালায়েন্সবার্নস্টেইনের গ্লোবাল ইকোনমিক রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট আর্মান্দো আরমেন্টা বলেন,
“উচ্চ সুদের হার ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের ঊর্ধ্বগতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ডলারভিত্তিক অর্থায়নকে আরও জটিল করে তুলেছে। এমনকি উদীয়মান বাজারের ঋণে তুলনামূলক কম সুদের ব্যবধান থাকলেও তা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন,
“ফলে দেশগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী বিকল্প খুঁজছে। তবে এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাময়িক সমাধান মাত্র।”

চীনা রেনমিনবির প্রতি ঝোঁক

চীনের রেনমিনবিতে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে বেইজিংয়ের ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে। এ প্রকল্পে চীন বিশ্বজুড়ে অবকাঠামো উন্নয়নে শত শত বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

  • কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যেই ডলার ঋণকে রেনমিনবিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে।

  • কেনিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা চীনের এক্সইম ব্যাংকের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের রেল প্রকল্পের ঋণ রেনমিনবিতে পরিশোধ নিয়ে আলোচনা করছে।

  • শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সংসদে বলেছেন, একটি মহাসড়ক প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেশটি নতুন রেনমিনবি ঋণ নিতে চায়। ২০২২ সালে ঋণ খেলাপির পর ওই প্রকল্প আটকে আছে।

সুদের হার তুলনা

  • বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ফান্ডস রেট ৪.২৫%–৪.৫%, যা অন্যান্য বড় অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে নতুন ডলার ঋণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ব্যয়বহুল।

  • সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক জুনে সুদের হার শূন্যে নামিয়েছে।

  • চীনের সাত দিনের রিভার্স রেপো রেট মাত্র ১.৪%

কলম্বোভিত্তিক ফ্রন্টিয়ার রিসার্চের অর্থনীতিবিদ থিলিনা পাণ্ডুভাল্লা বলেন,
“রেনমিনবিতে রূপান্তরের মূল কারণ হলো অর্থায়নের কম খরচ।”

২০১০-এর দশকে বেল্ট অ্যান্ড রোডের অধিকাংশ ঋণ ছিল ডলারে, কারণ তখন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার ছিল তুলনামূলক কম। এখন সুদের হার বাড়ায় কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার ঋণের খরচ বহুগুণ বেড়েছে।

সুইস ফ্রাঁর প্রতি আগ্রহ

  • পানামা এ বছর জুলাইয়ে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সুইস ফ্রাঁ ঋণ নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে।

  • দেশটির অর্থমন্ত্রী ফেলিপে চ্যাপম্যান জানান, এই সাশ্রয়ী অর্থায়নে পানামা ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাঁচিয়েছে এবং ঋণগুলো হেজ করা হয়েছে।

  • তিনি আরও বলেন, পানামা এখন কেবল ডলার নয়, ইউরো ও সুইস ফ্রাঁয় ঋণ ব্যবস্থাপনা করছে।

কলম্বিয়াও ডলার ঋণ পুনঃঅর্থায়নের জন্য সুইস ফ্রাঁ ঋণের দিকে এগোচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বৈশ্বিক কিছু ব্যাংক ছাড়মূল্যে কলম্বিয়ার বন্ড কিনতে চেয়েছে, যা নতুন সুইস ফ্রাঁ ঋণের পথ প্রশস্ত করার কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জুনে জানিয়েছিল, তারা বহির্বিশ্বে মুদ্রাভিত্তিক ঋণ বহুমুখীকরণের পরিকল্পনা করছে।

এক্সপি ইনভেস্টমেন্টসের লাতিন আমেরিকা ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজির প্রধান আন্দ্রেস পার্ডো বলেন,
“কলম্বিয়া দেড় শতাংশ সুদে সুইস ফ্রাঁ ঋণ নিয়ে আগের ৭–৮% সুদের ডলার ঋণ এবং স্থানীয় মুদ্রা পেসোর ১২% সুদের বন্ড কিনে নিতে পারবে।”

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

তবে বিশ্লেষকদের মতে, স্বল্পমেয়াদে সুইস ফ্রাঁ বা রেনমিনবিতে ঋণ নেওয়া দেশের সুদের চাপ কমালেও দীর্ঘমেয়াদে ডলারের বিকল্প হতে পারবে না। কারণ আন্তর্জাতিক ঋণবাজারে এখনও ডলারই প্রধান মুদ্রা।

এক উদীয়মান বাজারের ঋণ তহবিল ব্যবস্থাপক বলেন,
“আপনি যদি ঋণের মেয়াদী প্রোফাইল পরিষ্কার করেন তবে এসব পদক্ষেপ মৌলিক ভিত্তি শক্ত করে। তবে একইসঙ্গে দেখতে হবে, নীতিনির্ধারকরা আবারও (ডলার) বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করছেন কি না।”

ইউরোভিত্তিক বন্ডের উত্থান

শুধু সরকার নয়, উদীয়মান বাজারের কোম্পানিগুলোও এ বছর ইউরোভিত্তিক বন্ড বিক্রি বাড়িয়েছে।

  • জেপি মর্গানের তথ্যমতে, জুলাই পর্যন্ত ইউরোভিত্তিক করপোরেট বন্ডের পরিমাণ রেকর্ড ২৩৯ বিলিয়ন ডলার

  • ইমপ্যাক্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার টোক হিওর্টশয় বলেন,
    “এ বছর ইউরোভিত্তিক বন্ড ইস্যু ডলারের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে।”

  • তিনি আরও জানান, বর্তমানে এশীয় ইস্যুকারীরা ইউরোভিত্তিক ঋণের এক-তৃতীয়াংশ দখল করছে, যেখানে ১৫ বছর আগে এ হার ছিল মাত্র ১০–১৫%।