নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : তারেক, নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা নেই জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
- আপডেট সময় : ১২:০১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 160
জাতীয় নির্বাচন বানচালে ‘ষড়যন্ত্রের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে’ উল্লেখ করে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। রবিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তু্লে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা রকম ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। ‘‘তবে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে আমরা বিশ্বাস করি কোনও ষড়যন্ত্রই বিএনপির অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।”
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান।
এদিকে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে— প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল করে তোলা হচ্ছে’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, অথবা জটিল করে তোলা হচ্ছে। নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না—এই ধরনের উচ্চারণ ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্যকে দুর্বল করবে, নাকি পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনরুত্থানের প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করবে।”
‘‘আমি বলবো, এখনও সময় আছে। আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। পরাজিত পলাতক অপশক্তি কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ওঁত পেতে রয়েছে।”
‘অশুভ শক্তির তৎপরতা’
তারেক বলেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়। প্রায় এক বছর আগে আমি বলেছিলাম, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। জনগণ লক্ষ করতে শুরু করেছেন—নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রস্তুতে সেই অশুভ শক্তির অপতৎপরতা সাম্প্রতিক সময় ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।”
‘‘পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার যখন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে, তখন কোনও কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে তাদের দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নানা শর্ত আরোপ করছে এবং এই শর্ত আরোপ করে নির্বাচনের পথে হয়তো বা পরিকল্পিত উপায়ে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে বলে বহু মানুষ এরই ভেতরে ভাবতে শুরু করেছেন।”
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কারণ বিএনপি মনে করে, আগে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে যদি ব্যর্থ হয়—তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্র্যাকটিস করা হয়ে থাকে।’’
‘‘পুঁথিগত সংস্কারের চেয়েও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি জরুরি। রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি সম্পূর্ণভাবে একমত। সংস্কারের গুরুত্ব আছে বলেই বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পরেও অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে নেওয়া সংস্কার প্রস্তাবে সক্রিয়ভাবে সমর্থন এবং সহযোগিতা দিয়েছে। আমি রাজপথের সহকর্মী সহযোদ্ধা প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে অবশ্যই। তবে জনগণের অধিকার চর্চা এবং প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে কোনও সংস্কারকেই টেকসই করা যাবে না।”
তারেক বলেন, ‘‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের সরকার। তবে এই সরকারের কাছে অবশ্যই একটি দক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সরকারের মতো পারফরম্যান্স আশা করার কোনও যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’’
‘‘সঙ্গত কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার যত বেশি দিন ক্ষমতায় থাকবে, তাদের দুর্বলতাও তত বেশি দৃশ্যমান হতে থাকবে। বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা যত বেশি প্রতীয়মান হবে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী অপশক্তি ৫ আগস্ট নিয়ে তত বেশি বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ পাবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা গণপরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় তা স্পষ্ট।’’
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: মির্জা ফখরুল
রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদেরকে ডেকেছিলেন নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে যে, নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে। এ ব্যাপারে কোনো রকমের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকা উচিত না।”
রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। আট সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব। প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে দুই দলই আলাদা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, তারা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ চায় এবং এ দাবির কথা তারা প্রধান উপদেষ্টাকেও জানিয়ে এসেছেন।
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কিনা, মির্জা ফখরুলের কাছে সেই প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”
বৈঠক থেকে বেরিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগও করেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা একেবারেই অমূলক। প্রধান উপদেষ্টার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে কথা বলবেন। এটা তার এখতিয়ার, সেটা তিনি করেছেন।
‘‘আমাদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। গোটা দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছে যে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে।”
















