ঢাকা ০৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

ট্রাম্পের ফোনে সাড়া দিচ্ছেন না মোদী?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / 109

ট্রাম্প ও মোদী এআই নির্মিত ছবি।

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘নমস্তে ট্রাম্প’ আর ‘হাউডি মোদী’র বন্ধুত্বে এবার ভাটা পড়েছে। একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার দফা ফোনকলেই সাড়া দেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করে জার্মান পত্রিকা ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে জাইটুং (এফএজেড)। পরে তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোও খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।

এফএজেড সূত্র জানায়, মোদীর ফোন ধরতে অস্বীকৃতি তাঁর “ক্ষোভ ও কৌশলগত সতর্কতার” প্রতিফলন। একই বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে জাপানের নিক্কেই এশিয়া। তাদের ভাষ্যমতে, ট্রাম্পের কল এড়িয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদীর অসন্তোষকে আরও স্পষ্ট করেছে, যা প্রেসিডেন্টকে হতাশ করেছে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করেছে। বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তে পূর্বের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। পোশাক, রত্ন ও গহনা, ক্রীড়া সামগ্রী, আসবাবপত্র, রাসায়নিক দ্রব্যসহ নানা খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ওষুধ শিল্প ও কম্পিউটার চিপসের মতো সেক্টর এখনো ছাড় পাচ্ছে।

ট্রাম্পের যুক্তি, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির কারণে ভারতকে চাপ দেওয়া জরুরি। তার লক্ষ্য ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা এবং মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানো। এজন্য নয়াদিল্লিকে শাস্তিমূলক শুল্কে জর্জরিত করা হচ্ছে। ব্রাজিল ছাড়া অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে এত উচ্চ শুল্ক আরোপ করেননি ট্রাম্প।

বুধবার শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশাল অ্যাকাউন্টে একটি ছবিও পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল: “আমেরিকা ফার্স্ট”“আমেরিকা ইজ ব্যাক”

এফএজেড লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য বিরোধ স্পষ্ট করছে যে নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের চাপ মেনে নেবে না। তাদের দাবি—ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছা দেখানোয় বোঝা যায়, মোদী কতটা অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেয়নি দুই দেশের সরকার। তবে ভারত বলেছে, তারা দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান রক্ষা করবে। কৃষকদের স্বার্থে কখনোই আপস করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

পাকিস্তান ইস্যু ও টানাপোড়েন

এফএজেড আরও জানিয়েছে, পাকিস্তান প্রসঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্যে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মে মাস থেকে বারবার ট্রাম্প বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রশমিত হয়েছে তাঁর মধ্যস্থতায়। কিন্তু নয়াদিল্লি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিক্কেই এশিয়া লিখেছে, ট্রাম্পের “চুক্তিনির্ভর প্রদর্শনীমূলক কূটনীতি” সম্পর্ককে আরও টানটান করে তুলেছে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে সম্পর্কের ভাঙন

এফএজেডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষক মার্ক ফ্রেজার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক জোট গড়ার পরিকল্পনা ভেঙে পড়ছে। গত দুই দশকে চীন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগতভাবে কাছাকাছি এসেছিল। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন শুল্কের ফলে সেই সম্পর্কের ভাঙনের ইঙ্গিত মিলছে, যাকে স্বাগত জানিয়েছে বেইজিং ও মস্কো।

ফ্রেজারের মতে, ভারত কখনোই চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াতে চায়নি। বরং নয়াদিল্লি ও বেইজিং উভয়ই বিশ্ব প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের অভিন্ন লক্ষ্য ভাগ করে নিচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে, “ভারতের অবস্থান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিক্রিয়া নয়, এটি কৌশলগত মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।”

আগস্টের শেষ দিকে মোদী চীন সফরে যাচ্ছেন। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। একে দেখা হচ্ছে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা হিসেবে এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অপ্রত্যাশিত গতিপথের প্রতি নিবিড় নজর রাখার কৌশল হিসেবেও।

শুল্ক নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বেড়েছে, বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে বিরোধ সম্পর্ককে নাজুক রেখেছে। ফেব্রুয়ারিতে মোদীর ওয়াশিংটন সফরের পর একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। লক্ষ্য—২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া। তবে শর্তাবলি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নতুন শুল্কে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪৮.২ বিলিয়ন ডলার। এতে চাকরি হারানো ও প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, ভারত বিকল্প বাজার খুঁজছে।

তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সমঝোতা প্রায় শেষ। ফলে আমরা রপ্তানি নতুন বাজারে ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।”

শ্রিংলার মতে, ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক বহুস্তরীয় এবং অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় গভীর। “যৌথ মূল্যবোধ ও নীতিই আমাদের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, সার্জিও গোরকে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ ইতিবাচক অগ্রগতি।

অর্থনীতিতে প্রভাব

এসবিআই রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন শুল্ক ভারতের জিডিপিতে ৪০–৫০ বেসিস পয়েন্ট প্রভাব ফেলতে পারে এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, ভারতের রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে, যার সুযোগ নিতে পারে চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশ। বর্তমানে ভারতের ওপর শুল্ক ৫০%, অথচ চীনের ওপর ৩০%, ভিয়েতনামের ওপর ২০%, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯% ও জাপানের ওপর ১৫%।

বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে টেক্সটাইল, রত্ন-গহনা ও চিংড়ি রপ্তানি খাত

  • যুক্তরাষ্ট্র ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে গত পাঁচ বছরে ভারতের উপস্থিতি বেড়েছে।

  • রত্ন ও গহনার ২৮.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়।

  • চিংড়ি রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকায় পাঠানো হয়, যেখানে নতুন শুল্কে বড় ধরনের অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের খরচ বাড়বে, আর ইকুয়েডরের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সুবিধা পাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের ফোনে সাড়া দিচ্ছেন না মোদী?

আপডেট সময় : ০৫:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

‘নমস্তে ট্রাম্প’ আর ‘হাউডি মোদী’র বন্ধুত্বে এবার ভাটা পড়েছে। একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার দফা ফোনকলেই সাড়া দেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করে জার্মান পত্রিকা ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে জাইটুং (এফএজেড)। পরে তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোও খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।

এফএজেড সূত্র জানায়, মোদীর ফোন ধরতে অস্বীকৃতি তাঁর “ক্ষোভ ও কৌশলগত সতর্কতার” প্রতিফলন। একই বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে জাপানের নিক্কেই এশিয়া। তাদের ভাষ্যমতে, ট্রাম্পের কল এড়িয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদীর অসন্তোষকে আরও স্পষ্ট করেছে, যা প্রেসিডেন্টকে হতাশ করেছে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করেছে। বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তে পূর্বের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। পোশাক, রত্ন ও গহনা, ক্রীড়া সামগ্রী, আসবাবপত্র, রাসায়নিক দ্রব্যসহ নানা খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ওষুধ শিল্প ও কম্পিউটার চিপসের মতো সেক্টর এখনো ছাড় পাচ্ছে।

ট্রাম্পের যুক্তি, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির কারণে ভারতকে চাপ দেওয়া জরুরি। তার লক্ষ্য ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা এবং মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানো। এজন্য নয়াদিল্লিকে শাস্তিমূলক শুল্কে জর্জরিত করা হচ্ছে। ব্রাজিল ছাড়া অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে এত উচ্চ শুল্ক আরোপ করেননি ট্রাম্প।

বুধবার শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশাল অ্যাকাউন্টে একটি ছবিও পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল: “আমেরিকা ফার্স্ট”“আমেরিকা ইজ ব্যাক”

এফএজেড লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য বিরোধ স্পষ্ট করছে যে নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের চাপ মেনে নেবে না। তাদের দাবি—ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছা দেখানোয় বোঝা যায়, মোদী কতটা অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেয়নি দুই দেশের সরকার। তবে ভারত বলেছে, তারা দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান রক্ষা করবে। কৃষকদের স্বার্থে কখনোই আপস করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

পাকিস্তান ইস্যু ও টানাপোড়েন

এফএজেড আরও জানিয়েছে, পাকিস্তান প্রসঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্যে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মে মাস থেকে বারবার ট্রাম্প বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রশমিত হয়েছে তাঁর মধ্যস্থতায়। কিন্তু নয়াদিল্লি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিক্কেই এশিয়া লিখেছে, ট্রাম্পের “চুক্তিনির্ভর প্রদর্শনীমূলক কূটনীতি” সম্পর্ককে আরও টানটান করে তুলেছে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে সম্পর্কের ভাঙন

এফএজেডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষক মার্ক ফ্রেজার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক জোট গড়ার পরিকল্পনা ভেঙে পড়ছে। গত দুই দশকে চীন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগতভাবে কাছাকাছি এসেছিল। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন শুল্কের ফলে সেই সম্পর্কের ভাঙনের ইঙ্গিত মিলছে, যাকে স্বাগত জানিয়েছে বেইজিং ও মস্কো।

ফ্রেজারের মতে, ভারত কখনোই চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াতে চায়নি। বরং নয়াদিল্লি ও বেইজিং উভয়ই বিশ্ব প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের অভিন্ন লক্ষ্য ভাগ করে নিচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে, “ভারতের অবস্থান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিক্রিয়া নয়, এটি কৌশলগত মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।”

আগস্টের শেষ দিকে মোদী চীন সফরে যাচ্ছেন। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। একে দেখা হচ্ছে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা হিসেবে এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অপ্রত্যাশিত গতিপথের প্রতি নিবিড় নজর রাখার কৌশল হিসেবেও।

শুল্ক নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বেড়েছে, বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে বিরোধ সম্পর্ককে নাজুক রেখেছে। ফেব্রুয়ারিতে মোদীর ওয়াশিংটন সফরের পর একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। লক্ষ্য—২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া। তবে শর্তাবলি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নতুন শুল্কে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪৮.২ বিলিয়ন ডলার। এতে চাকরি হারানো ও প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, ভারত বিকল্প বাজার খুঁজছে।

তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সমঝোতা প্রায় শেষ। ফলে আমরা রপ্তানি নতুন বাজারে ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।”

শ্রিংলার মতে, ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক বহুস্তরীয় এবং অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় গভীর। “যৌথ মূল্যবোধ ও নীতিই আমাদের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, সার্জিও গোরকে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ ইতিবাচক অগ্রগতি।

অর্থনীতিতে প্রভাব

এসবিআই রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন শুল্ক ভারতের জিডিপিতে ৪০–৫০ বেসিস পয়েন্ট প্রভাব ফেলতে পারে এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, ভারতের রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে, যার সুযোগ নিতে পারে চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশ। বর্তমানে ভারতের ওপর শুল্ক ৫০%, অথচ চীনের ওপর ৩০%, ভিয়েতনামের ওপর ২০%, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯% ও জাপানের ওপর ১৫%।

বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে টেক্সটাইল, রত্ন-গহনা ও চিংড়ি রপ্তানি খাত

  • যুক্তরাষ্ট্র ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে গত পাঁচ বছরে ভারতের উপস্থিতি বেড়েছে।

  • রত্ন ও গহনার ২৮.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়।

  • চিংড়ি রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকায় পাঠানো হয়, যেখানে নতুন শুল্কে বড় ধরনের অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের খরচ বাড়বে, আর ইকুয়েডরের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সুবিধা পাবে।