ঢাকা ০৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

ফিরছে ‘না’ ভোট, পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
  • / 85

প্রতীকী ছবি। নির্বাচন কমিশনের লোগো।

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া রোধে ‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ সংশোধন করে খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি। পাশাপাশি, পুরো আসনের ফল বাতিল করার ক্ষমতাও ফেরানো হয়েছে।

সোমবার কমিশন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, “কোনো প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও ভোটের আয়োজন থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর বিপরীতে থাকবে ‘না ভোট’।”

সানাউল্লাহ আরও বলেন, “নতুন ‘না ভোট’ বিধানে বিনা ভোটে কেউ নির্বাচিত হবেন না। কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলেও তাকে ভোটে অংশ নিতে হবে। দ্বিতীয় দফায়ও যদি ভোট না হয়, তখন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।”

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ পান ভোটাররা। সেবার ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯২৪ জন ‘না ভোট’ দিয়েছিলেন, যা মোট ভোটের ০.৫৫ শতাংশ। তখন আরপিওর ৪০(ক) ধারায় বলা ছিল—‘না ভোট’ যদি সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীর ভোটকে ছাড়িয়ে যায়, তাহলে নতুন নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সংশোধনী এনে ওই বিধান বাতিল করা হয়।

২০১৫ সালে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব নিতে মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়েও ‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনের সুপারিশ উঠেছিল।

নির্বাচন স্থগিত ও ফল বাতিলের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন

সানাউল্লাহ বলেন, “আরপিওর মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা পুনর্বহাল করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে কমিশন এক বা একাধিক কিংবা সব আসনের নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল বাতিল করতে পারবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রয়োগ হবে। গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট গণনার সময় পুরোটা সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন, মাঝপথে বের হওয়া যাবে না।”

বিদ্যমান আইনে, বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন বা কারচুপির কারণে কোনো কেন্দ্রের ফল পক্ষপাতদুষ্ট মনে হলে শুধু ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনঃভোট দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ইসির। আগে ৯১(এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দ ব্যবহারে ভোটের আগেও নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু সংশোধনীতে ‘ইলেকশন’ বদলে ‘পোলিং’ বসানোয় সেই ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়।

প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ ও এআই ব্যবহার

সানাউল্লাহ বলেন, “শুধুমাত্র ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার করা যাবে, বিদ্যুৎ ব্যবহার অনুমোদিত। আলোকসজ্জার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মিথ্যাচার বা অপপ্রচার রোধে প্রার্থী, দল ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।”

জোটবদ্ধ দল ও প্রতীকের বিধান

তিনি বলেন, “জোটবদ্ধ ছোট দলগুলো বড় দলের প্রতিনিধি না হয়ে নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। এটি রাজনৈতিক স্বাধীনতার অংশ।”

প্রার্থী সংখ্যা, ব্যয় ও অনুদান

ইসি প্রার্থীর সংখ্যা নির্ধারণে এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বলে জানান সানাউল্লাহ। প্রার্থীদের ব্যয় অডিট আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অনুদানের সীমা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা ব্যাংক লেনদেন ও ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে।

হলফনামায় মিথ্যা তথ্য

হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে মেয়াদকাল পর্যন্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত হয়েছে। প্রয়োজনে প্রার্থীতা বাতিল ও এমপি পদ খারিজও হতে পারে।

দলের কার্যক্রম স্থগিত

নিবন্ধিত দলের কার্যক্রম স্থগিত ও বাতিলের বিষয়টি আরপিওতে স্পষ্টভাবে যোগ করা হয়েছে।

ইভিএম বাতিল ও কর্মকর্তাদের শাস্তি

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত জানায়। তাই সংশ্লিষ্ট সব বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কাজে অবহেলার শাস্তি ও তিন দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশনা রাখা হয়েছে।

আরপিও সংশোধনীর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। সরকারের অনুমোদন পেলে অধ্যাদেশ জারি হবে, পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ যুক্ত হতে পারে।

সোমবার সকাল ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে নবম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় চার কমিশনার, ইসি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সভা মুলতবির পর এদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ফিরছে ‘না’ ভোট, পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি

আপডেট সময় : ১২:১৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া রোধে ‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ সংশোধন করে খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি। পাশাপাশি, পুরো আসনের ফল বাতিল করার ক্ষমতাও ফেরানো হয়েছে।

সোমবার কমিশন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, “কোনো প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও ভোটের আয়োজন থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর বিপরীতে থাকবে ‘না ভোট’।”

সানাউল্লাহ আরও বলেন, “নতুন ‘না ভোট’ বিধানে বিনা ভোটে কেউ নির্বাচিত হবেন না। কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলেও তাকে ভোটে অংশ নিতে হবে। দ্বিতীয় দফায়ও যদি ভোট না হয়, তখন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।”

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ পান ভোটাররা। সেবার ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯২৪ জন ‘না ভোট’ দিয়েছিলেন, যা মোট ভোটের ০.৫৫ শতাংশ। তখন আরপিওর ৪০(ক) ধারায় বলা ছিল—‘না ভোট’ যদি সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীর ভোটকে ছাড়িয়ে যায়, তাহলে নতুন নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সংশোধনী এনে ওই বিধান বাতিল করা হয়।

২০১৫ সালে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব নিতে মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়েও ‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনের সুপারিশ উঠেছিল।

নির্বাচন স্থগিত ও ফল বাতিলের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন

সানাউল্লাহ বলেন, “আরপিওর মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা পুনর্বহাল করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে কমিশন এক বা একাধিক কিংবা সব আসনের নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল বাতিল করতে পারবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রয়োগ হবে। গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট গণনার সময় পুরোটা সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন, মাঝপথে বের হওয়া যাবে না।”

বিদ্যমান আইনে, বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন বা কারচুপির কারণে কোনো কেন্দ্রের ফল পক্ষপাতদুষ্ট মনে হলে শুধু ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনঃভোট দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ইসির। আগে ৯১(এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দ ব্যবহারে ভোটের আগেও নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু সংশোধনীতে ‘ইলেকশন’ বদলে ‘পোলিং’ বসানোয় সেই ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়।

প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ ও এআই ব্যবহার

সানাউল্লাহ বলেন, “শুধুমাত্র ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার করা যাবে, বিদ্যুৎ ব্যবহার অনুমোদিত। আলোকসজ্জার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মিথ্যাচার বা অপপ্রচার রোধে প্রার্থী, দল ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।”

জোটবদ্ধ দল ও প্রতীকের বিধান

তিনি বলেন, “জোটবদ্ধ ছোট দলগুলো বড় দলের প্রতিনিধি না হয়ে নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। এটি রাজনৈতিক স্বাধীনতার অংশ।”

প্রার্থী সংখ্যা, ব্যয় ও অনুদান

ইসি প্রার্থীর সংখ্যা নির্ধারণে এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বলে জানান সানাউল্লাহ। প্রার্থীদের ব্যয় অডিট আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অনুদানের সীমা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা ব্যাংক লেনদেন ও ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে।

হলফনামায় মিথ্যা তথ্য

হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে মেয়াদকাল পর্যন্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত হয়েছে। প্রয়োজনে প্রার্থীতা বাতিল ও এমপি পদ খারিজও হতে পারে।

দলের কার্যক্রম স্থগিত

নিবন্ধিত দলের কার্যক্রম স্থগিত ও বাতিলের বিষয়টি আরপিওতে স্পষ্টভাবে যোগ করা হয়েছে।

ইভিএম বাতিল ও কর্মকর্তাদের শাস্তি

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত জানায়। তাই সংশ্লিষ্ট সব বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কাজে অবহেলার শাস্তি ও তিন দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশনা রাখা হয়েছে।

আরপিও সংশোধনীর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। সরকারের অনুমোদন পেলে অধ্যাদেশ জারি হবে, পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ যুক্ত হতে পারে।

সোমবার সকাল ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে নবম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় চার কমিশনার, ইসি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সভা মুলতবির পর এদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।