ঐকমত্যের বৈঠক ‘বর্জন’ বাম ধারার চার দলের
সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিলের প্রস্তাব
- আপডেট সময় : ১২:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫
- / 165

সংবিধানের চারটি বিদ্যমান মূলনীতি বাতিলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই ২০২৫) রাত ৯টা ২০ মিনিটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বামপন্থী চারটি রাজনৈতিক দল।
বৈঠক শেষে তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সনদে স্বাক্ষর দেবেন কি না—সেই সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এই আলোচনা শুরু হয়।
বৈঠক ত্যাগকারী নেতারা হলেন–বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ এবং বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিল করে নতুন কিছু অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। সমর্থন না থাকলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ থাকলেও তারা বলছেন—চার মূলনীতি অক্ষুণ্ন রেখে নতুন বিষয় সংযোজনের পক্ষেই তারা।
বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
কমিশনের প্রস্তাবিত পাঁচটি নতুন মূলনীতি: সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি।
বাম দলগুলোর অবস্থান হলো–বিদ্যমান মূলনীতি রেখে নতুনগুলো যোগ করা যেতে পারে, বাদ দেওয়া চলবে না।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বলছে, তারা আগেই ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’-এর পুনঃস্থাপন চেয়েছে, তবে কমিশনের প্রস্তাবে আপত্তি নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, তারা প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।
এর আগের রোববার অনুষ্ঠিত সংলাপে সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স বলেছিলেন, “সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য সম্ভব নয়। এটি জনগণের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক দলগুলো সেই রায় নিতে জনগণের কাছে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধানকে পরিপূর্ণ করা যেতে পারে, কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া সম্ভব না।”
তাদের প্রস্তাব: “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যোগ করা যেতে পারে।”
বৈঠক বর্জনের বিষয়ে বাসদ নেতা বজলুর রশিদ বলেন, “সংবিধানের কাঠামোগত পরিবর্তনের পক্ষে আমরা না, এবং কেউ ঐকমত্য কমিশনকে সে রায় দেয়নি।”
তিনি অভিযোগ করেন, “মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের যুদ্ধ বলা, সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান বলা—এগুলো ঐতিহাসিক বিকৃতি এবং মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
তার মতে, “জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য ও তাৎপর্য আছে, যা ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে গড়ে উঠেছে।”
তিনি যুক্ত করেন, “বর্তমান মূলনীতি রেখে নতুনগুলো যোগ করলে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন আমরা মানি না।”
বাসদ নেতা আরও বলেন, “এ ধরনের সনদে স্বাক্ষর দেওয়া সম্ভব হবে না, বিষয়টি আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করব।”
বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন বলেন, “এ ধরনের প্রস্তাব আমাদের ঐক্য নষ্ট করতে পারে, এটি যেন ডিনামাইট—আমরা সতর্ক থাকতে বলেছিলাম।”
তিনি দাবি করেন, “কমিশন আমাদের দিয়েই বিদ্যমান মূলনীতি বাতিল করতে চাইছে, ভবিষ্যতে জনগণ চাইলে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাবো।”
সিপিবি নেতা প্রিন্স বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলেছি, এই বিষয়টি আলোচনার বাইরে রাখা হোক। সংবিধানের মূলনীতি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই এসেছে—তাতে পরিবর্তন নয়, সংযোজন হতে পারে।”
তিনি দাবি করেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বয়ান এড়িয়ে অন্য বয়ান দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।”
বাসদ (মার্কসবাদী)-এর মাসুদ রানা বলেন, “আমাদের মত চাপিয়ে দিলে সেটি আমরা গ্রহণ করব না।”
‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া প্রসঙ্গে মুশতাক হোসেন বলেন, “আমরা বর্জন করেছি, এ ধরনের মৌলিক বিষয়ে ডিসেন্ট দিয়ে সিদ্ধান্ত হয় না।”
প্রিন্সও বলেন, “নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এমন বিষয়ে অবস্থান গ্রহণ সম্ভব নয়, তাই আমরা বর্জন করেছি।”


















