পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশ : ট্রাম্পের শুল্কে এখন বড় ঝুঁকিতে
- আপডেট সময় : ০৯:৪৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / 396

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য বলছে—২০২৪ সালে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
গত বছর বাংলাদেশ ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এর আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। এই রপ্তানিমূল্য বিশ্ব বাজারের ছয় দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২৪ সালে বিশ্ব বাজারে পোশাক বিক্রি হয় ৫৫৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির অংশ ছিল সাত দশমিক ৩৮ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে চীন শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ছিল। বিশ্ব বাজারে এর অংশ ছিল ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২৪ সালে এই দেশ ১৬৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
২০২৩ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে চীনের অংশ ছিল ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
২০২৪ সালে ভিয়েতনাম তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হওয়া সত্ত্বেও চীন ও বাংলাদেশ তুলনায় এর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশটি ৩৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। এটি আগের বছরের তুলনায় নয় দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির হিসাব এক বছর আগের পাঁচ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ছয় দশমিক শূন্য নয় শতাংশ হয়।
বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানিতে তুরস্ক চতুর্থ অবস্থানে আছে। এরপর আছে ভারত, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান। ডব্লিউটিওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইন্দোনেশিয়া অষ্টম ও যুক্তরাষ্ট্র নবম স্থান অর্জন করে।
ট্রাম্পের শুল্ক: বড় ঝুঁকিতে পোশাক খাতের ৮০১ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঘোষণায় বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশের আট শতাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আলোচনা করে বাড়তি শুল্ক কমানো না গেলে দেশটিতে রপ্তানি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
গত সোমবার (৭ জুলাই) পাল্টা ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। ট্রাম্পের এই ঘোষণায় বাংলাদেশের দুই হাজারের বেশি রপ্তানিকারক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানি করে, তাদের অনেকে আবার অন্য দেশেও রপ্তানি করে। কেউ কেউ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তাদের সব পণ্য রপ্তানি করছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানভেদে ১ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছে ২ হাজার ৩৭৭ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৮০১টি প্রতিষ্ঠানের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীলতার কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই ৮০১টি প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট রপ্তানি করেছে ৬৬২ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৫০৫ কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫৮ শতাংশ।
সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭৬ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য প্রায় ৭৫৯ কোটি ডলার।
চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান ফরচুন অ্যাপারেলস গত অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। পুরোটাই রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ান ডাফ গ্রুপের। জানতে চাইলে এশিয়ান ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, প্রতিযোগী দেশের পণ্যের ওপর শুল্কহারের তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার ১০–১৫ শতাংশ বেশি। এর মানে হলো, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হারাতে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন। শুল্ক যদি না কমে তাহলে তারা এখন বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা সরিয়ে নেবে।
ফরচুন অ্যাপারেলসের মতো ১৬৮টি প্রতিষ্ঠান শুধু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও পণ্য রপ্তানি করে না। বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে এসব প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। আবার যাদের রপ্তানির সিংহভাগ যুক্তরাষ্ট্রে, তারাও বড় ঝুঁকির মুখে আছে।
এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট রপ্তানির ৮৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। জানতে চাইলে ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘প্রায় তিন দশক ধরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। ওয়ালমার্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা আমাদের আস্থায় নিয়েছে। এখন যদি আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, তাহলে ক্রেতাদের পোশাক নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প বাজারেও বাংলাদেশের ঝুঁকি থাকবে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর বেশি নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ঝুঁকিতে পড়বে। কোনো কারণে দেশটিতে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে বিকল্প বাজারে সবাই ঝুঁকবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের রপ্তানিকারকেরা বিকল্প বাজার খুঁজবে। তাতে বিকল্প বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। ন্যায্যমূল্যও পাওয়া যাবে না।
























