ঢাকা ০৯:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না জেনেও কেন দল আনলেন ইলন মাস্ক?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:১২:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
  • / 434
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্ক একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। যার নাম আমেরিকা পার্টি। মাস্ক বলেছেন, আমেরিকান নাগরিকদের পুনরায় স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে তিনি এই দল গঠন করেছেন। তাঁর এই ঘোষণাটি এসেছে সাবেক মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে নাটকীয় দ্বন্দ্বের পর।

স্থানীয় সময় শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘আজ আমেরিকা পার্টি গঠিত হলো, যাতে আপনাদের স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে দিতে পারি।’

টেসলা ও স্পেসএক্স-এর প্রধান আরও বলেন, ‘দেশকে অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেউলিয়া করার ক্ষেত্রে আমরা একটি একদলীয় ব্যবস্থায় বাস করছি—গণতন্ত্রে নয়।’

এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সাবেক মিত্র ইলন মাস্ক-এর নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণাকে ‘হাস্যকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার নিউ জার্সির গলফ ক্লাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘টেসলা ও স্পেসএক্স-এর প্রধান মাস্ক এখন একটি ট্রেন দুর্ঘটনার মতো অবস্থায় আছেন এবং পথভ্রষ্ট হয়েছেন। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগে মাস্কের দায়িত্ব ছিল মার্কিন সরকারের খরচে কাটছাঁট করা। ওই দায়িত্ব ছাড়ার আগে নতুন ব্যয় পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ তৈরি হয়।

সম্প্রতি ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত করছাড় ও ব্যয় বৃদ্ধির যে বিলকে ট্রাম্প আইনে পরিণত করেছেন, তারও সমালোচনা করেছেন মাস্ক। তিনি বলেছেন, ‘বিলটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।’

গত মাস থেকে এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মাস্ক।

মাস্ক দল গঠন করার কথা জানালেও তাঁর এই দলটি আইনগতভাবে নিবন্ধিত হবে কিনা তা এখনও জানাননি। মার্কিন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য ফেডারেল ইলেকশন কমিশন (এফইসি)-তে নিবন্ধন করতে হয়।

মাস্ক জানান, নতুন দল গঠনের আগে তিনি একটি জরিপ চালিয়েছেন। ওই জরিপের পর এক্সে মাস্ক লিখেছিলেন, ‘দুই বনাম এক অনুপাতে আপনারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চেয়েছেন। আপনারা এটি পাবেন।’

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বিপুল অর্থ দিয়েছিলেন মাস্ক। নির্বাচিত হওয়ার পর মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। পরে সেই দায়িত্ব থেকে সরে যান তিনি। এর পর থেকে ক্রমেই দুজনের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে।

২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলন মাস্ক প্রার্থী হতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্টিকেল ২ সেকশন ১ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে প্রার্থীকে ‘জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক’ হতে হবে। মাস্ক জন্মগ্রহণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া-তে ১৯৭১ সালে এবং তিনি ২০০২ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবে জন্মসূত্রে আমেরিকান না।

রাজনৈতিক দল নিয়ে এক্সে নিজের একটি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন মাস্ক। তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে যেসব আসনে বড় দুই দলের একচেটিয়া আধিপত্য নেই, সেগুলো আমেরিকা পার্টির মাধ্যমে নিজেদের দখলে নিতে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বড় কোনো আইন পাসের ক্ষেত্রে ‘সিদ্ধান্তমূলক ভোট’ দেওয়ার ক্ষমতা পাবেন তিনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী না হতে পারলেও মাস্কের আমেরিকা পার্টির যুক্তরাষ্ট্রের দুই-দলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মার্কিন নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়—এমন পরিস্থিতিতে মাস্কের দল তৃতীয় শক্তি হিসেবে ‘কিং-মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে এই দল হাউস ও সিনেটের কয়েকটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

এছাড়া মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনার ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বলেও মনে করছনে বিশ্লেষকেরা।

তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না জেনেও কেন দল আনলেন ইলন মাস্ক?

আপডেট সময় : ০১:১২:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্ক একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। যার নাম আমেরিকা পার্টি। মাস্ক বলেছেন, আমেরিকান নাগরিকদের পুনরায় স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে তিনি এই দল গঠন করেছেন। তাঁর এই ঘোষণাটি এসেছে সাবেক মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে নাটকীয় দ্বন্দ্বের পর।

স্থানীয় সময় শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘আজ আমেরিকা পার্টি গঠিত হলো, যাতে আপনাদের স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে দিতে পারি।’

টেসলা ও স্পেসএক্স-এর প্রধান আরও বলেন, ‘দেশকে অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেউলিয়া করার ক্ষেত্রে আমরা একটি একদলীয় ব্যবস্থায় বাস করছি—গণতন্ত্রে নয়।’

এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সাবেক মিত্র ইলন মাস্ক-এর নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণাকে ‘হাস্যকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার নিউ জার্সির গলফ ক্লাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘টেসলা ও স্পেসএক্স-এর প্রধান মাস্ক এখন একটি ট্রেন দুর্ঘটনার মতো অবস্থায় আছেন এবং পথভ্রষ্ট হয়েছেন। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগে মাস্কের দায়িত্ব ছিল মার্কিন সরকারের খরচে কাটছাঁট করা। ওই দায়িত্ব ছাড়ার আগে নতুন ব্যয় পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ তৈরি হয়।

সম্প্রতি ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত করছাড় ও ব্যয় বৃদ্ধির যে বিলকে ট্রাম্প আইনে পরিণত করেছেন, তারও সমালোচনা করেছেন মাস্ক। তিনি বলেছেন, ‘বিলটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।’

গত মাস থেকে এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মাস্ক।

মাস্ক দল গঠন করার কথা জানালেও তাঁর এই দলটি আইনগতভাবে নিবন্ধিত হবে কিনা তা এখনও জানাননি। মার্কিন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য ফেডারেল ইলেকশন কমিশন (এফইসি)-তে নিবন্ধন করতে হয়।

মাস্ক জানান, নতুন দল গঠনের আগে তিনি একটি জরিপ চালিয়েছেন। ওই জরিপের পর এক্সে মাস্ক লিখেছিলেন, ‘দুই বনাম এক অনুপাতে আপনারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চেয়েছেন। আপনারা এটি পাবেন।’

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বিপুল অর্থ দিয়েছিলেন মাস্ক। নির্বাচিত হওয়ার পর মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। পরে সেই দায়িত্ব থেকে সরে যান তিনি। এর পর থেকে ক্রমেই দুজনের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে।

২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলন মাস্ক প্রার্থী হতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্টিকেল ২ সেকশন ১ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে প্রার্থীকে ‘জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক’ হতে হবে। মাস্ক জন্মগ্রহণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া-তে ১৯৭১ সালে এবং তিনি ২০০২ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবে জন্মসূত্রে আমেরিকান না।

রাজনৈতিক দল নিয়ে এক্সে নিজের একটি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন মাস্ক। তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে যেসব আসনে বড় দুই দলের একচেটিয়া আধিপত্য নেই, সেগুলো আমেরিকা পার্টির মাধ্যমে নিজেদের দখলে নিতে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বড় কোনো আইন পাসের ক্ষেত্রে ‘সিদ্ধান্তমূলক ভোট’ দেওয়ার ক্ষমতা পাবেন তিনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী না হতে পারলেও মাস্কের আমেরিকা পার্টির যুক্তরাষ্ট্রের দুই-দলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মার্কিন নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়—এমন পরিস্থিতিতে মাস্কের দল তৃতীয় শক্তি হিসেবে ‘কিং-মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে এই দল হাউস ও সিনেটের কয়েকটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

এছাড়া মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনার ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বলেও মনে করছনে বিশ্লেষকেরা।

তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি