ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম ঢাকায় ফের চালু

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:১৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • / 222
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাই কমিশনার সুসান রাইলির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে ভিসা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

হাই কমিশনার রাইলি জানান, এখন থেকে ঢাকাতেই অনলাইনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।

তিনি বলেন, “বর্তমানে ৬৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী।”

বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অস্থির সময় অতিক্রম করে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”

এ সময় তিনি তার সরকারের গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

ইউনূস বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো—সংবিধানিক, বিচারিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, যা একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি তৈরি করবে। আমরা শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আগামী মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে আমরা ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করব।”

প্রধান উপদেষ্টা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বহু বছর পর এবার মানুষ, বিশেষ করে প্রথমবারের মতো যারা ভোট দেবেন, তাদের জন্য স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার একটি বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এটি একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক ঘটনা হবে।”

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহায়তা প্রসঙ্গে হাই কমিশনার রাইলি জানান, অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি এবং কার্যকর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা প্রদান করবে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে আমাদের পারস্পরিক বাণিজ্য বার্ষিক গড়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়ে বর্তমানে ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে।”

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের অবদান তুলে ধরে রাইলি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসের আওতায় ইতোমধ্যে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অ্যালামনাই তৈরি হয়েছে, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।”

এর প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বৃত্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।

জবাবে হাই কমিশনার রাইলি জানান, “সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া তার প্রধান অংশীদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।”

তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া।”

সাক্ষাতের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে হাই কমিশনার রাইলি বলেন, “আমি এখানে এসে অত্যন্ত আনন্দিত। বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং গতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দীর্ঘদিন ধরেই আমার গভীর আগ্রহের বিষয়।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম ঢাকায় ফের চালু

আপডেট সময় : ১০:১৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাই কমিশনার সুসান রাইলির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে ভিসা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

হাই কমিশনার রাইলি জানান, এখন থেকে ঢাকাতেই অনলাইনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।

তিনি বলেন, “বর্তমানে ৬৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী।”

বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অস্থির সময় অতিক্রম করে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”

এ সময় তিনি তার সরকারের গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

ইউনূস বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো—সংবিধানিক, বিচারিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, যা একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি তৈরি করবে। আমরা শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আগামী মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে আমরা ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করব।”

প্রধান উপদেষ্টা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বহু বছর পর এবার মানুষ, বিশেষ করে প্রথমবারের মতো যারা ভোট দেবেন, তাদের জন্য স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার একটি বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এটি একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক ঘটনা হবে।”

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহায়তা প্রসঙ্গে হাই কমিশনার রাইলি জানান, অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি এবং কার্যকর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা প্রদান করবে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে আমাদের পারস্পরিক বাণিজ্য বার্ষিক গড়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়ে বর্তমানে ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে।”

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের অবদান তুলে ধরে রাইলি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসের আওতায় ইতোমধ্যে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অ্যালামনাই তৈরি হয়েছে, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।”

এর প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বৃত্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।

জবাবে হাই কমিশনার রাইলি জানান, “সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া তার প্রধান অংশীদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।”

তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া।”

সাক্ষাতের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে হাই কমিশনার রাইলি বলেন, “আমি এখানে এসে অত্যন্ত আনন্দিত। বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং গতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দীর্ঘদিন ধরেই আমার গভীর আগ্রহের বিষয়।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।